ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘প্রকৃত জেলেরা মা ইলিশ শিকার করে না’

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২০
‘প্রকৃত জেলেরা মা ইলিশ শিকার করে না’

চাঁদপুর: শাহজাহান গাজী। বয়স প্রায় ৪৮।

আপন মনে জাল মেরামত করছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন আরো কয়েকজন। প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইলিশ ধরার। কয়েক দশক নদীতে ইলিশসহ অন্য মাছ আহরণ করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রকৃত জেলেরা মা ইলিশ শিকার করে না, বরং নিরাপদে ডিম ছাড়ার জন্য সুযোগ করে দেয়। আমরা গত ২২ দিন অনেক কষ্টে সংসার চালালেও নদীতে যাইনি। তবে এই সময়টাতে এক শ্রেণির অসাধু জেলে মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়, শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ এলাকা থেকে এসে চাঁদপুরের অভয়াশ্রম এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ শিকার করেছে। শুধু অভয়াশ্রম এলাকায় নয়, আল্লাহর দেয়া প্রাকৃতিক এ সম্পদ ইলিশ রক্ষায় নদী পাড়ের সব জেলার লোকদের সচেতন হওয়া দরকার।

বুধবার (৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের সাখুয়া গ্রামের মেঘনা নদীর পাড় এলাকায় খালে ইলিশ শিকার করার জন্য প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে শত শত জেলেকে।

হাফেজ গাজী, সেলিম পাটওয়ারী ও রশিদ মাঝি নামে ৩ জেলে ইলিশ শিকার করবেন সাগরে। নিষেধাজ্ঞা শেষ। বুধবার মধ্য রাত থেকেই আহরণ করতে পারবেন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ। তাই এসব মাছ ধরার ট্রলারের জাল মেরামতসহ অন্যসব প্রস্তুতি চলছে তাদের।

তাদের মধ্যে হাফেজ গাজী নামে জেলে বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনেছি। রাতে অথবা বৃহস্পতিবার সকালে সাগরের উদ্দেশে রওনা হবো। দক্ষিণ হাতিয়া সাগর এলাকায় গিয়ে মাছ শিকার করবো। একবার গেলে কমপক্ষে একমাস থাকা হয়।

জেলে আজাদ খান বাংলানিউজকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের সরকারিভাবে যে সহায়তা দেওয়া হয়। তাতে সংসার চালানোর মতো তেমন কিছু হয় না। কারণ বাজারে সব কিছুরই দাম বেশি। ২০ কেজির চলে পাই ১০-১২ কেজি চাল এ দিয়ে কি হয়। তবে এখন আমরা ইলিশ পাওয়ার আশায় নদীতে নামবো। নদীতে মাছ থাকলে সংসার আবার স্বছল হবে।

একই এলাকার জেলে নজরুল শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ২২ দিন অবসর থাকলেও জাল মেরামত করার মতো টাকা ছিলো না। কারণ ব্যবসায়ীরা বাকিতে কোনো কিছুই বিক্রি করেন না। এখন আমরা ঋণ করে টাকা নিয়ে জাল, সুতা ও নৌকার অন্য সামগ্রী ক্রয় করেছি। সকাল থেকেই জাল মেরামত চলছে। রাতেই ইলিশ আহরণে নামা হবে।

সাখুয়া জেলে পাড়ার এক নারী খোদেজা বেগম। বয়স ৬০ হবে। জেলে পরিবারেরই একজন তিনি। খুবই দীপ্ত কন্ঠে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জেলে ছবি তোলা, পত্রিকায় ছাপানো আরে আগেই দরকার ছিলো। কারণ আমরা কিভাবে থাকি, আমাদের সংসার কিভাবে চলে আগেই সরকারকে জাননো দরকার। আমাদের বেঁচে থাকার কষ্ট বাস্তবে না দেখলে বোঝা যাবে না।

জেলে আনোয়ার গাজী বাংলানিউজকে বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক ছবি তুইল্যা নিচে, আমাগো পরিবর্তন হয় না’ ৪০ কেজির বদলে চাল পাই ১৫ কেজি। বিকল্প কর্মসংস্থানের সেলাই মেশিন পায় মেম্বার-চেয়ারম্যানগ আত্মীয়রা। সরকার চাল দিয়া চেয়ারম্যান ও মেম্বারগ বড়লোক বানানোর দরকার নাই। চাল দেয়া বন্ধ করুক। ’

পদ্মা-মেঘনার উপকূলীয় এলাকাসহ চাঁদপুর জেলায় ৫১ হাজার ১৯০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। বছরজুড়ে তারা নদীতে মাছ আহরণ করেই জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অভয়াশ্রম এলাকায় মা ইলিশ শিকার করায় ২২ দিনে ১৭৩ জনের কারাদণ্ড হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।