ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষার্থীদের দেহ দান করে গেলেন শ্যামল ভট্টাচার্য

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২০
চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষার্থীদের দেহ দান করে গেলেন শ্যামল ভট্টাচার্য

বগুড়া: বগুড়ার প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও নাট্য ব্যক্তিত্ব শ্যামল রঞ্জন ভট্টাচার্যের দেহ চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষার্থীদের জন্য দান করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (০৫ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ২টার দিকে তার মরদেহ ও দেহদানুসংক্রান্ত কাগজপত্র বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছে পরিবারের সদস্যরা।

শ্যামল ভট্টাচার্যের ছোট ছেলে অভ্র ভট্টাচার্য বলেন, শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বাবার মরদেহ চিকিৎসাবিদ্যায় কাজে লাগানোর জন্য দান করা হয়েছে। বর্তমানে তার মরদেহ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।

শ্যামল ভট্টাচার্য বুধবার (০৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এবং বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভূগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক মেয়েসহ অসংখ্যক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

শ্যামল ভট্টাচার্য ১৯৩৯ সালের ১০ আগস্ট বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালের ১৬ জানুয়ারি বগুড়া জিলা স্কুলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্টস বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। এছাড়া সংস্কৃত এবং আরবি ভাষাতেও তিনি সমান দক্ষ ছিলেন। প্রায় ৩৩ বছর শিক্ষকতা শেষে ২০০০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ডিপ্লোমা প্রকৌশলী শ্যামল রঞ্জন ভট্টাচার্য শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হওয়ার আগে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ শেষে তৎকালীন গ্রেটার চিটাগাং ইলেকট্রিসিটি বোর্ডে সাব অ্যাসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।

ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি সচেতন শ্যামল ভট্টাচার্য ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বগুড়ায় ৩০০ ছাত্রকে নিয়ে মিছিল বের করেছিলেন। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি নিজ মহল্লা জলেশ্বরীতলা এলাকার নিরক্ষরদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সহপাঠীদের নিয়ে নৈশ বিদ্যালয় চালু করেছিলেন। দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নের সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের জেলা কমিটির পাঠাগার সম্পাদক মনোনীত হয়েছিলেন।

শিক্ষা দিয়ে মানুষকে আলোকিত করার উদ্যোগটি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছিলেন শ্যামল ভট্টাচার্য। তার উদ্যোগেই বগুড়ায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। শিক্ষার পাশাপাশি নাট্য আন্দোলনের সঙ্গেও সস্পৃক্ত ছিলেন শ্যামল ভট্টাচার্য।

১৯৭২ সালে তিনি বগুড়া নাট্য গোষ্ঠী নামে একটি নাটকের দল গঠন করেন। নাট্যমঞ্চের নিয়মিত শিল্পী শ্যামল ভট্টাচার্য ১৯৮৭ সালে ‘বগুড়া নাট্য দল’ নামে নতুন আরও একটি একটি দল গঠন করেন। নাট্য আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে নতুন মুখ তৈরিতেও কাজ করে গেছেন তিনি।  

এজন্য শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে বগুড়া নাট্য দলের কার্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস নিতেন গুণী এই নাট্য ব্যক্তিত্ব। সর্বশেষ ২০১৩ সালে ‘খারিজ’ নামে একটি নাটকে অভিনয় করেন শ্যামল ভট্টাচার্য।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২০
কেইউএ/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।