ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘ভাস্কর্য নিয়ে সন্ত্রাসের চেষ্টা করলে জনগণ প্রতিহত করবে’

সিনিয়র ও স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২০
‘ভাস্কর্য নিয়ে সন্ত্রাসের চেষ্টা করলে জনগণ প্রতিহত করবে’

ঢাকা: ভাস্কর্য নিয়ে বাংলাদেশে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করলে জনগণ তাদের প্রতিহত করবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ভাস্কর্য আর মূর্তির মধ্যে পার্থক্য আছে।

যারা এসব বিষয়ে কথা বলে, তারা ভাস্কর্য আর মূর্তির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেনি।  

রোববার (১৫ নভেম্বর) সচিবালয়ে পিআইডি সম্মেলন কক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন।

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কয়েকটি ইসলামিক সংগঠন দাবি তুলেছে, অনেকেই বলছে, এতে মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে। এর আগেই হাইকোর্টের সামনে একটি ভাস্কর্য নিয়ে একই দাবি তোলা হয়েছে- এ বিষয়টি দলের একজন মুখপাত্র হিসেবে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমতো ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। ইরাক, ইরান, লেবানন, সিরিয়া, তুরস্ক, ফিলিস্তিনসহ পৃথিবীর বহু দেশে বহু ভাস্কর্য আছে। ভাস্কর্য আর মূর্তির মধ্যে পার্থক্য আছে। যারা এসব বিষয়ে কথা বলে তারা ভাস্কর্য আর মূর্তির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেনি।  

তারা ঘোষণা দিয়েছে, এ ধরনের ভাস্কর্য হলে ভেঙে ফেলবে- এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেউ যদি এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার চেষ্টা করে, তাহলে জনগণ তাদের প্রতিহত করবে।  

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে এ ধরনের মন্তব্যের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটা শক্ত বিবৃতি বা রাষ্ট্রীয়ভাবে ও এ ধরনের কোনো বক্তব্য আমরা পাইনি। এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা জাতির পিতার ভাস্কর্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, এটি একটি ক্ষুদ্র অংশ৷ তাই এটিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যারা এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাদের আমি অনুরোধ জানাবো ইরাক, ইরান, তুরস্ক, লেবাননসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে তাকানোর জন্য।  

সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল-এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর ভোটারের উপস্থিতি ও টার্নআউট কম- এতে বোঝা যাচ্ছে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। যারা ভোট দিতে গিয়েছে, তারাই ভোট দিয়েছে, সে কারণে ভোটার উপস্থিতি কম।  

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে জয়লাভের উদ্দেশ্য নয়। তারা প্রথম দিন থেকেই অভিযোগের বাক্স নিয়ে বসেছিল। তারা নির্বাচনের আগের দিন ও নির্বাচনের দিন সকালে অভিযোগের বাক্স খুলেছে। তারা মূলত দু’টি উদ্দেশে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল- প্রথমটি হচ্ছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে দলকে টিকিয়ে রাখা। সুতরাং তাদের অভিযোগ গতানুগতিক। তারা সব নির্বাচনের সময় এ ধরনের অভিযোগ করে থাকে।  

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা দেওয়ায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নিন্দা

কয়েকটি ইসলামিক দল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের যে হুমকি দিয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।  

রোববার সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা দান এবং স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার ভয়ঙ্কর হুমকি দিয়েছে চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। গত ১৩ নভেম্বর করোনাকালীন যাবতীয় বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে তারা যেভাবে গেন্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে সমাবেশ করেছে এবং যে ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি বিষোদগার করেছে, তা রাষ্ট্রদ্রোহিতাতুল্য অপরাধ হলেও এখনো পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে সরকারি কিংবা সরকারদলীয় কোনো প্রতিবাদ আমাদের নজরে পড়েনি। হেফাজত-জামায়াত-বিএনপির মদদপুষ্ট তথাকথিত ‘তৌহিদি জনতা ঐক্যপরিষদে’র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানবিরোধী ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তির তীব্র নিন্দার পাশাপাশি আমরা এহেন রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় অবস্থানের জন্য সরকারেরও নিন্দা করছি।

পাকিস্তান ও সৌদি আরবসহ সব মুসলিম প্রধান দেশেই ভাস্কর্য আছে, যা নগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ইতিহাসের মহানায়কদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের স্মারক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার প্রাণকেন্দ্রে হিন্দু পৌরাণিক চরিত্রের ভাস্কর্য রয়েছে, যেগুলোকে পৌত্তলিকতা বা মূর্তি আখ্যায়িত করে অপসারণের ধৃষ্টতা কখনও সে দেশের কট্টরপন্থিরা প্রদর্শন করেনি। বাংলাদেশে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা এবং কখনও প্রশ্রয়ের কারণে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরেধী এবং সংবিধানবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, তাতে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’র ঘোষণা অচিরেই প্রহসনে পরিণত হবে। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা দিচ্ছে এবং এরই মধ্যে স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ না নিলে আমরা দেশ ও জাতির জন্য সমূহ বিপর্যয় আশঙ্কা করছি, যা আমাদের জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে।

করোনাকালে যে কোনো অজুহাতে আমরা সব রকম প্রকাশ্য জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। যারা স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে না, তাদের শাস্তির উদ্যোগও প্রশাসনকে নিতে হবে। আমরা আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর ’৭২-এর সংবিধান অনুযায়ী ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার জন্যই বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সহযোগীরা সাংবিধানিকভাবে ধর্মের নামে হত্যা, সন্ত্রাস ও হিংসা-বিদ্বেষের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন।

বিবৃতিতে সই করেছেন, বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অব.), ডা. আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, ড. ফরিদা মজিদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার আবদুল মান্নান, অধ্যাপক আয়েশ উদ্দিন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ডা. শেখ বাহারুল আলম, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, ডা. ইকবাল কবীর, মুক্তিযোদ্ধা মকবুল-ই এলাহী, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম, অধ্যাপক আবদুল গফ্ফার, কবি জয়দুল হোসেন, ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, মুক্তিযোদ্ধা কাজী লুৎফর রহমান, সাবেক ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, অ্যাডভোকেট আজাহার উল্লাহ্ ভূঁইয়া, সঙ্গীতশিল্পী জান্নাত-ই ফেরদৌসী লাকী, ডা. মামুন আল মাহতাব, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা, লেখক আলী আকবর টাবী, সমাজকর্মী চন্দন শীল, অ্যাডভোকেট কাজী মানছুরুল হক খসরু, অ্যাডভোকেট দীপক ঘোষ, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, সাংবাদিক মহেন্দ্র নাথ সেন, শহীদসন্তান তৌহিদ রেজা নূর, শহীদসন্তান শমী কায়সার, শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, মানবাধিকার কর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান, মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমদ উল্যাহ, মানবাধিকারকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া, কবি দিব্যেন্দু দ্বীপ, অধ্যাপক সুজিত সরকার, সমাজকর্মী হারুণ অর রশীদ, অ্যাডভোকেট মালেক শেখ, সহকারী অধ্যাপক তপন পালিত, সমাজকর্মী পূর্ণিমা রাণী শীল, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, সমাজকর্মী শেখ আলী শাহনেওয়াজ পরাগ, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিন রুবেলসহ অনেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২০
টিআর/জিসিজি/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ