ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জৌলুস নেই নবান্নে

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২০
জৌলুস নেই নবান্নে জৌলুস নেই নবান্নে। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: মাঠ ভরা সোনা ঝরা ধানের সমারহ। মৃদু বাতাসে কাঁচাপাকা ধানের ঝংকার।

নয়নাভিরাম অপরূপ প্রকৃতি দৃশ্য। যা দেখে ভরে যাচ্ছে কৃষক-কৃষাণীর মন। এরই মাঝে বছর ঘুরে আবার এসেছে নবান্ন উৎসব।

অগ্রহায়নের হালকা হিমেল হাওয়ায় কাস্তে হাতে কৃষাণ দল বেঁধে সকাল-সন্ধ্যা মাঠের পাকা ধান কাটছেন। নতুন ধানে ভরবে গোলা তাই বেজায় খুশি কৃষাণী। নতুন চলে কেউ কেউ তৈরি করবেন নানা রকম পিঠা পুলি।

রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ তার ‘কখন সোনার রোদ’ কবিতায় লিখেছেন, ‘এই মাঠে- এই ঘাসে- ফলসা এ-ক্ষীরুয়ে যে গন্ধ লেগে আছে/আজো তার; যখন তুলিতে যাই ঢেঁকিশাক- দুপুরের রোদে/সর্ষের ক্ষেতের দিকে চেয়ে থাকি- অঘ্রানে যে ধান ঝরিয়াছে,/তাহার দু’এক গুচ্ছ তুলে নিই, চেয়ে দেখি নির্জন আমোদের/পৃথিবীর রাঙা রোদ চড়িতেছে আকাঙ্ক্ষায় চিনিচাঁপা গাছে/জানি সে আমার কাছে আছে আজো- আজো সে আমার কাছে আছে। ’

অগ্রহায়ণ শুরু হতে না হতেই খুলনার গ্রামগুলোতে কৃষকের ঘরে ঘরে আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। বাড়ির উঠানে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধ। এবার বাজারে ধানের দাম ভালো থাকায় বেজায় খুশি কৃষক। তবে সময়ে আবর্তনে বদলে গেছে দিন। নবান্নের জন্য এখন আর আগের মতো অপেক্ষায় থাকেন না কেউ। ‌নবান্ন‌ তাই তার জৌলুস হারিয়েছে। যুগের আবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় চিরায়ত বাংলার নবান্ন উৎসব অনেকটা বিলুপ্তির পথে।

এক সময় অগ্রহায়ণের নবান্ন উৎসবে নতুন চালে পিঠা পুলি হতো। মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করে ডেকে এনে সেই পিঠা পুলি খাওয়ানো হতো। গ্রামের বধূরা বাপের বাড়িতে যাওয়ার জন্য আগ্রহে অপেক্ষা করতেন।

নবান্ন মানে নতুন অন্ন। প্রাচীনকাল থেকে নতুন ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষকরা এই উৎসব পালন করে আসলেও এখন এ প্রথা অনেকটা বিরল। তবে বিলুপ্ত হয়ে যায় নি।

অগ্রহায়ণ শুরু হতে না হতেই সোনালী ধানের ঘ্রাণে কৃষকের মন-প্রাণ পরিপূণ্য। খুলনার দিঘলিয়া, ফুলতলা ও ডুমুরিয়ার বিভিন্ন খালে-বিলে অতিথী পাখি বসছে ঝাঁকে ঝাঁকে।

চুকনগর এলাকার আমন চাষী মেহেদী হাসান বাবলু বাংলানিউজকে বলেন, আজ আমি আমন ধান কাটা শুরু করেছি। গ্রামেও এখন আর নবান্ন উৎসব নেই। কয়েক বছর আগে হিন্দু পরিবারে নবান্ন উৎসব হতো। এখন তারা পালন করছে না।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় নবান্ন উৎসব ছিল বাঙালির ঐতিহ্য। ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকলে একই কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এ উৎসবটি পালন করতো। সকলে নতুন ধান উঠার পর খির, পায়েস পিঠা তৈরি করতো। এসময় চারিদিকে একটি উৎসবের আবহ তৈরি হত, সকলে মেয়ে জামাই দাওয়াত দিত, ঘরে ঘরে পিঠা পুলি তৈরি হত, দোকানে দোকানে দেখা যেত হালখাতা। সবই আজ অতীত। আমরা স্বল্প পরিসরে পিঠা পুলির আয়োজন করে এ দিনটি কিছুটা হলেও ধরে রাখার চেষ্টা করি। নতুন প্রজন্মকে আমাদের অতীত ঐতিহ্যের সাথে কিছুটা পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি।

তিনি জানান, ডুমুরিয়া উপজেলায় এ বছর ১৫ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬৩ হাজার ৬৫২মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে ব্রিধান-৭৫ কাটা শেষ হয়ে গেছে, ব্রিধান ৮৭, ৮০, ৫২ কর্তন চলছে। এ বছর আবহাওয়া ভাল থাকায় ধানের অবস্থা ভালো। কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে ভালো ফলন হবে।

রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান ফরিদ বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকরা তাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে আমন ধান কাটার পর নতুন ধানের পায়েস ও পিঠা-পুলি তৈরির মাধ্যমে নবান্ন উৎসব পালন করে থাকে। নবান্ন মানে নতুন অন্ন। নবান্নের ফসল আমন কাটা ও ঘরে তোলার আনন্দের পাশাপাশি ধান সংরক্ষণের বিষয়টি উঠে আসে। ঠিকমতো আমন সংরক্ষণ করা না গেলে কৃষক পরিবারের নবান্নের আনন্দ ফিকে হয়ে যেতে পারে। আমনের মাঠে শতকরা ৮০ ভাগ পেকে গেলে ফসল কেটে মাঠে বা উঠানে এনে মাড়াই করতে হবে।

তিনি জানান, রূপসা উপজেলায় এ বছর আমন ধান আবাদ হয়েছে তিন হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। ব্রি ধান ৮৭ গড় ফলন ৬.৫ মেট্রিক টন। ব্রি ধান ৭৫ গড় ফলন ৫.৫ মেট্রিক টন। ব্রি ধান ৯০ গড় ফলন পাঁচ মেট্রিক টন। ব্রি ধান ৭২ গড় ফলন ৫.৫ মেট্রিক টন। এগুলো আগাম জাতের ধান। ইতিমধ্যে এগুলো কাটা হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬ , ২০২০
এমআরএম/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ