ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সংযোগ সড়কের অভাবে অকেজো সেতু! 

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২০
সংযোগ সড়কের অভাবে অকেজো সেতু!  সাঁকো বানিয়ে সেতুর সংযোগ সড়কের অভাব পূরণের চেষ্টা, ছবি: বাংলানিউজ

সাভার (ঢাকা): দুই বছর আগেও ধামরাইয়ের ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া এলাকায় মানুষের পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। স্থানীয় লোকজনের অনেক দৌড়-ঝাঁপের পর ২০১৮ সালের শেষের দিকে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়।

 

কিন্তু সেতুটি নির্মাণ হলেও, সেটি তেমন কোনো কাজেই আসছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, এতো কষ্ট করে সেতু পেয়েছেন তারা। এতো টাকা ব্যয় করে সেতুটি নির্মাণ হলে সেতুর সুফল ভোগ করতে পারছে না। সেতুর এই প্রকল্পটির হওয়ার পর ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আর্থিক বনিবনা না হওয়ায় এমন অবস্থা হয়ে আছে সেতুটির।  

স্থানীয়রা জানায়, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। তাদের মধ্যে সকালে তেঁতুলিয়া এলাকা থেকে ইপিজেড পোশাক কারখানায় যায় প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ। সেতুটি দিয়ে তেঁতুলিয়া, হাজীপুর, টেক, গুচ্ছ গ্রামসহ কয়েক গ্রামের মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন। তাদের চলাচলের সুবিধার্থে প্রাথমিকভাবে স্থানীয়রা টাকা তুলে সেতুর দুই পাশে দু'টি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছিলেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুটিতে খোদাই করা একটি ফলক তৈরি করা হয়েছে, যেখানে লেখা হয়েছে, 'ধামরাই উপজেলা পরিষদের নিকটবর্তী ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামের হাজী আব্দুল গণি বেপারীর বাড়ির পাশে খালের ওপর মানুষের যাতায়াত ও পানি প্রবাহের জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের প্রকল্পে করা এ সেতুটি উদ্বোধন করেন বর্তমান ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ। '

আরও দেখা গেছে, তেঁতুলিয়া-হাজীপুরের এ সড়কটিরও বেহাল অবস্থা। ৩২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের এ সেতুটিতে সড়কের সঙ্গে সংযোগ না থাকায় সাঁকো দিয়ে পাড় হতে হচ্ছে। এতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধ পথচারীদের। কোনো যানবাহন গ্রামে যেতে না পাড়ায় অন্তঃসত্ত্বা ও রোগীদের কাঁধে করে পাড় করতে হয়।  

উপজেলা সূত্রে জানা গেছে, মেসার্স আতিয়ার এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণ করেছে। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৩ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।  

গুচ্ছগ্রামের আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, সেতু করেছে কিন্তু সেতু পার হওয়ার কোনো রাস্তা নাই। কবে মাটি ফেলে রাস্তা করবে, কে জানে? রাস্তা না হলে এ সেতু গ্রামের মানুষের কোনো উপকারে আসবে না। বর্তমানে সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না। আমরা সবাই মিলে কোনোভাবে হেঁটে মানুষ যাতে পার হতে পারেন, সেজন্য সাঁকো তৈরি করেছি।  

আসিফার প্রতিদিন কর্মস্থলে যাওয়ার একমাত্র পথ তেঁতুলিয়া-হাজীবাড়ি। আগে হেঁটে ও নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হতো। কিন্তু এখন নৌকা নেই, পুরো তিন কিলোমিটার সড়ক হেঁটে পার হতে হয় তাকে।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সকাল হলে কাজের জন্য আমাকে যেতে হয়৷ সাঁকো দিয়ে পার হতে অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। সেতুর সঙ্গে সংযোগ সড়ক হলে গাড়িও চলাচল করবে। দ্রুত সে ব্যবস্থা করা হোক।  

তেঁতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় এক বছর আগে জনদুর্ভোগ নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। তবে সংযোগ সড়ক না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কৃষি নির্ভর আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে যানবাহন চলাচল না করার কারণে তাদের উৎপাদিত ফসলও বাজারে নিতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি একধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।  

সেতুটি ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডে হওয়ায় যোগাযোগ করা হয়েছিল এ ওয়ার্ডের সদস্য মেম্বার আব্দুর রৌফের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সেতুটি আমার এরিয়ার ভেতর পড়েনি। আমি এ বিষয়ে কিছু জানিও না।  

ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, তেঁতুলিয়া-হাজীপুর সড়কের সেতুটির বিষয়ে আমাদের মাসিক সভায় কথা হয়েছে। উপজেলা কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলে বিষয়টি সমাধান করা হবে।  

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা প্রকৌশলী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।