ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বৈরী আবহাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২১
বৈরী আবহাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত

ঢাকা: বৈরী আবহাওয়ার কারণে আপাতত নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা। তবে বৈরী আবহাওয়ার কেটে গেলে শিক্ষার্থীরা আবারও তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছে।

পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা সোমবার (০৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রামপুরা ব্রিজের হাতিরঝিল অংশে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে আন্দোলন আপাতত স্থগিতের ঘোষণা করেন খিলগাঁও মডেল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া।

সোহাগী সামিয়া বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমরা আগামীকাল কোন কর্মসূচি রাখছি না। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি আরও কয়েকদিন এরকম বৈরী আবহাওয়া থাকবে। যতদিন পর্যন্ত এই বৈরী আবহাওয়া থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন স্থগিত থাকবে। তবে বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে আমরা আবার কর্মসূচি চালিয়ে যাব।

তিনি বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমাদের কিছু সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি আছে। একটি হচ্ছে মঈনুদ্দীনের স্কুল থেকে নাইমের কলেজ পর্যন্ত সাইকেল র‍্যালি করা। পরে নাইমের কলেজে গিয়ে আমরা মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করব। অপরটি হচ্ছে আমরা ছাত্র-শিক্ষক সবাই মিলে একটি সমাবেশ করবো।

সোহাগী সামিয়া বলেন, এই যে এতগুলো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে কিন্তু প্রশাসন বরাবরই নীরব ভূমিকা পালন করছে। প্রশাসনের এই নীরবতার প্রতিবাদে আমরা আজ মুখে কালো কাপড় বেঁধে নিরব আন্দোলন পালন করছি।

কালো কাপড় বেঁধে আন্দোলন করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমত সড়কে যারা নিহত হয়েছেন দুর্ঘটনায় তাদের প্রতি শোক প্রকাশ করার জন্য আমরা কালো কাপড় বেঁধেছি। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে সরকারের নীরব ভূমিকায় প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছি।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়ার পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। প্রয়োজন হলে আমরা আরও ২১ বছর আন্দোলন চালিয়ে যাব।

এর আগে, শিক্ষার্থী  সোহাগী সামিয়ার নের্তৃত্বে রোববার (০৫ ডিসেম্বর) দুপুরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে রামপুরার হাতিরঝিলের ফুটপাতের দাঁড়িয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন ও প্রতীকী লাশের কফিন নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (০৪ ডিসেম্বর) সড়কের সকল অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে লালকার্ড দেখিয়ে প্রতিবার জানায় শিক্ষার্থীরা।

২৯ নভেম্বর রাতে রামপুরায় বাসচাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. মাঈনুদ্দিন নিহত হন। এরপর থেকে প্রতিদিনই কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য টানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব কর্মসূচিতে ভিন্নতাও দেখা যাচ্ছে৷

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষ ‘দুর্নীতিপরায়ন’ হয়ে উঠেছে। এর ফলে রাস্তায় ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি দেখা যায়। তারা অপেশাদার চালক নিয়োগ দেন।

শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবিগুলো হলো:

১. সড়কে নির্মম কাঠামোগত হত্যার শিকার নাঈম ও মাইনুদ্দিন হত্যার বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।

২. সারাদেশে সব গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। হাফ পাসের জন্য কোনো সময় বা দিন নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সব রুটে বিআরটিসির বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

৩. গণপরিবহনে ছাত্র-ছাত্রী এবং নারীদের অবাধ যাত্রা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. সব রাস্তায় ট্রাফিক লাইট, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করাসহ জনবহুল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. বাসগুলোর মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে এক রুটে এক বাস এবং দৈনিক আয় সব পরিবহন মালিকের মধ্যে তাদের অংশ অনুযায়ী সমানভাবে বণ্টন করার নিয়ম চালু করতে হবে।

৭. শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। চুক্তির ভিত্তিতে বাস দেওয়ার বদলে টিকিট ও কাউন্টারের ভিত্তিতে গোটা পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে

৮. গাড়ি চালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ৬ ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসে ২ জন চালক ও ২ জন সহকারী রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. যাত্রী-পরিবহন শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

১০. ট্রাক, ময়লার গাড়িসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে।

১১. মাদকাসক্তি নিরসনে গোটা সমাজ জুড়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালক-সহকারীদের জন্য নিয়মিত ডোপ টেস্ট ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২১
এসজেএ/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।