ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

থানা থেকেই খোয়া যায় পুলিশের সেই ওয়াকিটকি!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২
থানা থেকেই খোয়া যায় পুলিশের সেই ওয়াকিটকি! ফাইল ছবি

রাজশাহী: ছিনতাইকারীদের হাতে পুলিশের ওয়াকিটকি পাওয়ার ঘটনায় রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। তদন্তও এগিয়েছে অনেক দূর।

এখন তথ্য মিলছে পুলিশের সেই ওয়াকিটকি মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা থেকেই খোয়া গিয়েছিল! কেবল তা-ই নয়, এটি প্রায় পাঁচ মাস ছিনতাইকারীদের কাছেই ছিল। অথচ এ ঘটনায় থানা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পর্যন্ত করা হয়নি। আর কেন জিডি করা হয়নি এখন তার কারণও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

রাজশাহীতে গত ২৯ জানুয়ারি মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভুয়া পরিচয় দিয়ে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের সময় দু'জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে পুলিশের এ ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রাজশাহী মহানগর পুলিশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মজিদ আলী এ তদন্ত কমিটির প্রধান। থানা থেকে ওয়াকিটকি হারিয়ে যাওয়ার পরও কেন জিডি করা হয়নি তা জানতে চেয়ে বোয়ালিয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে তদন্ত কমিটি। ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মণকে সম্প্রতি খাগড়াছড়ি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়েছে।

এদিকে, তদন্তে জানা যায়, পাঁচ মাস আগে বোয়ালিয়া থানার যে ওয়াকিটকি খোয়া যায়। আর পরবর্তী সময়ে ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে যেই ওয়াকিটকি উদ্ধার হয়। সেই ওয়াকিটকি বোয়ালিয়া থানারই। ওয়াকিটকি খোয়া যাওয়ার বিষয়টি থানায় জানাজানি হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি। এমনকি এ নিয়ে থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়নি।

গ্রেফতার দুই চিহ্নিত ছিনতাইকারীর নাম- মাভেল ইসলাম (২৪) ও তার ভাই নেহাল ইসলাম ওরফে নিরো (২২)। তাদের বাড়ি রাজশাহী নগরের শাহ মখদুম থানার বড়বনগ্রাম বাগানপাড়া এলাকায়।

পুলিশ বলছে, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক ও ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। ওয়াকিটকি ব্যবহার করে তারা গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয় দিয়ে মহানগরে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদকের কারবার চালিয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি গ্রেফতারের পর তারা এখনো কারাগারে। ৩০ জানুয়ারি তাদের আদালতে পাঠিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল আওয়াল সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। ৯ ফেব্রুয়ারি এ রিমান্ড শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আইনজীবীর মৃত্যুর কারণে হয়নি।

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি সকাল সাড়ে আটটার দিকে রাজশাহীর কর্ণহার এলাকার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম এমভি সাফারী নামের একটি কোচে ঢাকা থেকে রাজশাহীর শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে নামেন। এ সময় তরিকুলকে টানতে টানতে টার্মিনালের ভেতরে নিয়ে যান মাভেল ও তার ভাই নেহাল। ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা তরিকুলের শরীর তল্লাশির নামে পকেটে থাকা ছয় হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। গাঁজা ও ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে ভয় দেখিয়ে তরিকুলের মোবাইল ফোন থেকে পরিবারের সদস্যদের কাছে বিকাশে আরও টাকা চাওয়া হয়।

তরিকুল সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে ওয়াকিটকি বের করে তাকে মাদক মামলা দিয়ে চালান করার ভয় দেখানো হয়। টার্মিনালে এ ঘটনা দেখে উৎসুক লোকজন ভিড় করেন। এর মধ্যে ভিড় দেখে সেখানে বোয়ালিয়া মডেল থানা-পুলিশের একটি টহল দল পৌঁছায়। পুলিশ দেখে ওই দুজন পালানোর চেষ্টা করে। পরে তাদের ধাওয়া করে আটক করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরিকুল ছিনতাইয়ের মামলা করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুই ছিনতাইকারীর কাছ থেকে ওয়াকিটকি উদ্ধারের পর তদন্ত শুরু হয়। এ বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ দলও কাজ শুরু করে। প্রতিটি থানায় ওয়াকিটকির সংখ্যা যাচাই করা হয়। সেগুলোর সংখ্যা ঠিক আছে কিনা, তা দেখা হয়। কোনো থানায় কিংবা পুলিশ ফাঁড়িতে ওয়াকিটকি কম আছে কিনা, তা জানতে চেয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে চিঠি ইস্যু করা হয়। এরপর রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে।

তদন্তে জানা যায়, গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা থেকে একটি ওয়াকিটকি খোয়া যায়। সেদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এটি বোয়ালিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ফেরদৌসের নামে বরাদ্দ ছিল। তিনি ডিউটি শেষে ওয়ারলেস অপারেটর আব্দুল আউয়ালের কাছে বুঝিয়ে দেন। একই সময় ডিউটি বদলের সময় আউয়াল সেটি বুঝিয়ে দেন আরেক অপারেটর মো. আমানের কাছে। তারপর ওয়াকিটকিটি কীভাবে ছিনতাইকারীর কাছে গেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি থানায় জানাজানি হলেও এ নিয়ে থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়নি।

এ সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন নিবারণ চন্দ্র বর্মন। তাকে সম্প্রতি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়। বর্তমানে তার পোস্টিং এপিবিএনের ৬ ব্যাটালিয়ন, খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে। আর বোয়ালিয়া থানার সাবেক এসআই মনিরুল ফেরদৌস এখন আরএমপির মতিহার থানায় কর্মরত।

আরও পড়ুন>>

>>> ছিনতাইকারীর কাছে পুলিশের ওয়াকিটকি!

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২২
এসএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।