ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সংস্কৃতিসেবীদের হৃদয়ের খোরাক জোগাতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২
সংস্কৃতিসেবীদের হৃদয়ের খোরাক জোগাতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করেছি। এখন হৃদয়ের খোরাকটা জোগাতে হবে।

সেটা সংস্কৃতি চর্চার মধ্য থেকেই আসে। ’

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অমর একুশে বইমেলা-২০২২ এর উদ্বোধন এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হন শেখ হাসিনা। এ সময় সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় বলবো, আমাদের প্রত্যেক জেলায় বা মহকুমায় অতীতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত, সাহিত্য চর্চা হত। এই চর্চাটা অনেকটা কমে গেছে। এটা আবার চালু করা দরকার। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিল্পকলা একাডেমি প্রায় প্রত্যেকটা জেলায়, এখন আমরা উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে আপনারা যদি একটু উদ্যোগ নেন তাহলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অনেক মেধাবী কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবীকে আমরা পাব। এতে তাদের মেধা বিকাশের যেমন সুযোগ আসবে, আবার সেইসঙ্গে মানুষের হৃদয়ের খোরাকটাও দরকার। খাদ্য নিরাপত্তা আমরা করে দিয়েছি। এখন হৃদয়ের খোরাকটা জোগাতে হবে। সেটা সংস্কৃতিসেবীদের মধ্য থেকেই আসে। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিল্প-সাহিত্য জগৎ নিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলো যদি হয় তাহলে যারা যুব সমাজ আছে তারা ভিন্ন পথে যাবে না। তারা বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য, বাংলা সংস্কৃতির প্রতি আন্তরিক থাকবে। ’

দেশি ভাষার পাশাপাশি বিদেশি ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘বিদেশি ভাষা শেখায় কোনো আপত্তি করবো না। বিদেশি  ভাষাও শেখা দরকার। সেখানকার সংস্কৃতি চর্চাও জানা দরকার। কিন্তু নিজের যে অস্বিত্ব সেটাকে আরও বড় করে দেখাতে হবে। সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিয়েই আমাদের সংষ্কৃতি চর্চাটা বাড়াতে হবে। কাজেই জেলায় জেলায় যদি এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে খুব উপযুক্ত। এ বিষয়ে আমাদের প্রশাসনের দায়িত্বে যারা আছে, তাদেরও একটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার। ’

বইমেলা এক মাস করার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী

১ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হওয়ার রীতি থাকলে করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে এবার বইমেলা শুরু হয়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি। দেরিতে শুরু হওয়া এ মেলা আগামী এক মাস চালানোর পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনে করি এই বইমেলায় যে সব প্রকাশনা হবে সেগুলো আমাদের সাহিত্য জগতে বিরাট অবদান রাখবে। যেহেতু এবার আমরা দেরিতে শুরু করেছি, আমার মনে হয় এটা আমরা পুরো মাসই চালাতে পারি। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রকাশকদের পক্ষ থেকে একটা দাবি এসেছে যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ। সেই ১৭ মার্চ পর্যন্ত বইমেলা চালাতে পারি কিনা। এটা আপনারা নিজেরা ভেবে দেখবেন, কারণ আমি একা তো আর কিছু বলতে পারব না। ’

সারাদিন মেলায় ঘুরে বেড়াতেন প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে বইমেলা শুধু একটা মেলা নয়, এটা একটা মিলনমেলা। আমার দুঃখ হলো যে করোনার কারণে আমি ঘরবন্দি। ভাগ্যিস ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছিলাম, তাই অন্তত ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে। ’

শৈশবের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্কুলজীবন থেকেই আমরা সবসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতাম আন্দোলন-সংগ্রাম করতে। তারপরে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর যখন বইমেলা শুরু হলো, আমার তো মনে হয় কোনো বইমেলা বাদ যায়নি। কারণ সারাদিন এই বইমেলায় ঘুরে বেড়ানো, এটা তো আমাদের একটা অভ্যাস ছিল। ’

‘যখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছি তখনই পায়ে শিকল পড়ল। নিরাপত্তার অজুহাতে বইমেলায় আর সেই আগের মত স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগটা থাকেনি। আবার বিরোধী দলে যখন ছিলাম তখন গিয়েছি। তখন আবার সুযোগ ছিল। আর এখন তো সেই ২০০৯ সাল থেকে এই বন্দি দশায় আছি। আর করোনাকালে আরও বেশি বন্দি হয়ে গেছি। ’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আজকে উপস্থিত থাকতে পারলাম না। সামনাসামনি সবার সঙ্গে দেখা হলো না। তবে আমি আশা করি এই অবস্থা থাকবে না। এই অবস্থার পরিববর্তন নিশ্চয়ই হবে। আবার সবাই একসঙ্গে বইমেলায় এক হতে পারবেন। ’

কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলা-২০২২ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব পুরস্কার প্রদান করা হয়।

বাংলা একাডেমি প্রান্তে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পুরস্কার তুলে দেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস) সভাপতি মো. আরিফ হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২
এমইউএম/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।