ঢাকা: মাঠ রক্ষার আন্দোলনের কারণে একজন মাকে তাঁর শিশু সন্তানসহ তুলে নিয়ে হাজতে রাখা পুলিশের ধৃষ্টতা নয়, দুর্বৃত্তায়ন বলে মনে করেন অধিকারকর্মীরা। পুলিশের এ ধরনের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে সাড়ে ৩টায় রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার দাবিতে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সমাবেশের আয়োজক ছিল—এএলআরডি, বাপা, বেলা, আসক, ব্লাস্ট, গ্রিন ভয়েস, নিজেরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি ও টিআইবি।
মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, এই মাঠ উন্মুক্ত রাখতে হবে। কোনো থানা তো নয়ই, কোনো ক্লাব বা ব্যক্তি মালিকানায় দেওয়া যাবে না। এই মাঠ এলাকার সবার।
আগামীকালের মধ্যে থানার ভবন নির্মাণের সামগ্রী সরিয়ে ফেলতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা হাত দেব না। তবে কালকের মধ্যে পুলিশ যদি এগুলো না সরায়, তাহলে আমার সবাই মিলে এগুলো সরিয়ে দেব।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের আন্দোলন কোনো বাহিনী বা থানার বিরুদ্ধে লড়াই নয়। এটি পরিবেশ রক্ষা, নাগরিক অধিকার ও বাক স্বাধীনতার লড়াই। আগামীকালের মধ্যে এই মাঠের ব্যবস্থাপনা এলাকাবাসীর হাতে ছেড়ে দেবেন এবং আগামীকালের মধ্যে সব স্থাপনা পুলিশকে খুলে উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
চার দফা দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, এই মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। থানা করতে হবে এটা যৌক্তিক, তবে শিশুদের খেলার মাঠ দখল করে নয়, প্রয়োজনে থানার জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজে দেওয়া হবে। আসন্ন ঈদের জামাত এখানে অনুষ্ঠিত হবে। বেআইনি ভাবে সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলেকে হয়রানি করা যাবে না। তার পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে হবে। এভাবে আর কাউকে হয়রানি করা যাবে না।
মুচলেকা নিয়ে সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, মাঠ রক্ষায় আর আন্দোলন করা যাবে না—এটা কী ধরনের মুচলেকা? মা-ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে হেনস্তার ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা দাবিতে নাগরিক সমাবেশে অংশ নিয়েছিল এলাকার শিশুরা
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, মাঠ রক্ষার জন্য যখন একজন মা প্রতিবাদে দাঁড়িয়ে যান, সেই মায়ের জাতকে যখন পুলিশ গারদে ভরার সাহস দেখায় তখন সেটা ধৃষ্টতা নয়, দুর্বৃত্তায়ন। শেখ হাসিনা বলেছেন কোনো এলাকায় উন্মুক্ত স্থান ও খেলার মাঠ দখল করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের মনে দুর্বৃত্তায়নের মনোভাব তৈরি হয়ে থাকে, তারা যেন জেনে নিন রত্না সেখানে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনার নির্দেশনা পালন করার জন্য।
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন বলেন, এই মাঠ আমরা ছাড়বো না। এই মাঠ এলাকাবাসী ও শিশুদের খেলার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এই মাঠ দখলের জন্য যদি কোনো চক্রান্ত করা হয় তবে আমরা দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করবো।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটেরর সাবেক সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, আমি একজন স্থপতি হিসেবে বলতে চাই, ডাম্পিংসহ যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা একটি থানার থাকা প্রয়োজন, তার কোনোটি এখানে নেই। আর যদি জোর করেও এখানে থানা নির্মাণ করা হয়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এটি থানা নয়, শত্রু ভবন হিসেবে পরিচিত হবে।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জামিল হোসেন বলেন, এই মাঠে আমাদের অনেক স্মৃতি রয়েছে। কলাবাগান এলাকার একমাত্র মাঠ এই তেঁতুলতলা মাঠ। এখানে থানা হলে শিশুরা খেলার জায়গা হারাবে। তাই এখানে থানা ভবন নির্মাণ না করে অন্যত্র করার দাবি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন:
তেঁতুলতলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায়ের ঘোষণা
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২২
এসজেএ/এমজেএফ