ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

পল্লবীতে সড়ক দখল করে বসেছে মেলা!

মিরাজ মাহবুব ইফতি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২২
পল্লবীতে সড়ক দখল করে বসেছে মেলা! সড়কের ওপর মেলা।

ঢাকা: রাজধানীর পল্লবীর ১১ নম্বর লালমাইটা টেম্পোস্ট্যান্ডে সড়ক দখল করে বসেছে মেলা। এই মেলা স্থানীয়দের কাছে শুক্কুরের মেলা হিসেবে পরিচিত।

প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে প্রতি বছর রমজানের শুরুতে একটি প্রতিবন্ধী সংগঠনের কথা বলে মেলার আয়োজন করছে একটি প্রভাবশালী চক্র।  

মেলায় দোকান, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, জুয়ার বোর্ড ও নৌকার চড়কা (দোলনা) বসিয়ে প্রভাবশালী চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।  

প্রায় ১৫ দিন ধরে এই মেলা চলছে। মেলার অনুমতি রয়েছে কিনা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সদুত্তর মেলেনি।  

জানা গেছে, ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ব্লক-এ ইউনিটের সভাপতি (প্রস্তাবিত) শুক্কুর মাতবর প্রতিবছর রমজানের শুরুতে এই মেলার আয়োজন করেন। প্রতিবন্ধীদের কথা বলে মেলা শুরু করলেও এর নেপথ্যে কারিগর আওয়ামী লীগ নেতা শুক্কুর মাতবর। স্থানীয়রা এই মেলাকে শুক্কুরের মেলা বলে ডাকেন।  

গত কয়েকদিন সরেজমিনে দেখা যায়, লালমাইটা টেম্পোস্ট্যান্ড থেকে দক্ষিণ দিকে (বাউনিয়াবাঁধ পোড়া বস্তি) সড়কটির ৯০ ভাগ দখল করে বসানো হয়েছে মেলা। এতে চলাচলের রাস্তা পুরোপুরি সংকুচিত হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত এ স্থানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। মেলায় ৫০টির মতো তিন ফুট বাই তিন ফুটের অস্থায়ী দোকান রয়েছে। চারপাশে বাঁশের খুঁটি ও কাপড় লাগিয়ে মেলার দোকানগুলো ঘিরে রাখা হয়েছে। মেলার একপাশে নৌকার চড়কা (দোলনা) রাখা হয়েছে। চড়কায় দোল খাওয়ার জন্য এই স্থানে বিভিন্ন বয়সী শিশুদের জটলা থাকে। অনেক সময় ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। মেলার বাইরে সড়ক ও ফুটপাতেও অর্ধশত অস্থায়ী দোকান রয়েছে।  
    
জানা যায়, এককালীন ২০ হাজার টাকা আর দৈনিক ২ হাজার টাকা দোকান প্রতি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মেলা চলবে ঈদ পর্যন্ত। মেলার বেশির ভাগ দোকানে চুড়ি, খেলনা, থ্রি-পিস, ব্যাগ জুতা, কসমেটিকস, মনোহারি, নিত্য প্রয়োজনীয় ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্সের পণ্য পাওয়া যায়। এই মেলায় প্রত্যেক দোকানে যে পরিমাণ আলোক সজ্জা করা হয়েছে তার উৎস অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। বিদ্যুতের খুঁটি থেকে এই অবৈধ সংযোগ টানা হয়েছে। অবৈধ সংযোগের জন্য টাকা আদায় করা হয়। মেলার বাইরে সড়ক ও ফুটপাতে কয়েকশ দোকান রয়েছে। ওই সব দোকানেও অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে চক্রটি।  
 
ওই এলাকার বাসিন্দা সোলেমান হাজী বলেন, রমজানে এই মেলা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে অশান্তি বইছে। মেলার কারণে রমজানের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে। মেলায় মাদকসেবীদের নিয়মিত আড্ডা বসে। আবার গভীর রাতে বসে জুয়ার আসর।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, মেলার কারণে এলাকায় চুরি ছিনতাই বেড়ে গেছে। এছাড়া মাদকসেবীদের উৎপাতও বেড়েছে। মেলার রাস্তা দিয়ে চলা যায় না।  

এ বিষয়ে শুক্কুর মাতবর বলেন, একটি প্রতিবন্ধী সংগঠন রয়েছে তারাই প্রতিবছর মেলার আয়োজন করে। আমি শুধু তাদের সহযোগিতা করি।  

মেলার অনুমতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জেনে আপনাকে জানাবো।  
 
পল্লবীর ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান বলেন, একটি প্রতিবন্ধী সংগঠন মেলা বসিয়েছে। অন্য কেউ জড়িত কিনা জানা নেই।  

পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম বলেন, লালমাটিয়া এলাকায় মেলা বসেছে শুনেছি। তবে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এ মেলা বসেছে।  

পল্লবী জোনের এসি (ট্রাফিক) ইলিয়াস হোসেন বলেন, চলাচলের রাস্তা দখল করে মেলা বসানোর কোনো অনুমতি নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।  

ডিএনসিসির অঞ্চল-২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। মেলার বিষয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রোড ইন্সপেক্টরের সঙ্গে কথা হয়েছে। শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযানে যাবো।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২২
এমএমআই/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।