ঢাকা, বুধবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ মে ২০২৪, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

শরীয়তপুরের মাঝিরঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা, মে ১, ২০২২
শরীয়তপুরের মাঝিরঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল

শরীয়তপুর: পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শরীয়তপুর জাজিরার মাঝিরঘাট ফেরিঘাটে দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। তবে অতিরিক্তি যাত্রীর চাপে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন পথযাত্রীরা।

রোববার (০১ মে) সরেজমিনে গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঝিরঘাট থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের তেমন চাপ না থাকলেও ঢাকা থেকে শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও বরিশালসহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের তীব্র চাপ ছিল মাঝিরঘাটে। ঘরমুখী মানুষের চাপ সামলানোর জন্য পাঁচটি ফেরি, ২০টি লঞ্চ এবং ২৩টি স্পিডবোট যাত্রী ও গাড়ি পারাপার করছে এ নৌরুটে।

দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে রো রো ফেরিটি মাঝিরঘাটে ভিড়লে দেখা যায়, সেখানে তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই। ফেরিতে প্রায় ৩ শতাধিক মোটরসাইকেলসহ কয়েক হাজার লোক মাওয়া থেকে মাঝিদরঘাটে ফেরিতে করে পার হয়ে এসে নামে।  

এদের মধ্যে খুলনার উদ্দেশ্যে আসা ঢাকা ফেরত পথযাত্রী আ. রহিম ও সাথী জানান, আমরা অনেক কষ্ট করে ফেরিতে উঠে এপারে আসি, কিন্তু ফেরি থেকে নামা মাত্রই তীব্র যানজটের মুখোমুখি হয়ে প্রায় আধা ঘণ্টার বেশি একই জায়গায় বসে আছি।

এ ব্যাপারে মাঝিরঘাটে কর্মরত  বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, দুর্ভোগ এড়াতে আমরা গত ২৬ এপ্রিল লঞ্চঘাট পূর্বদিকে ৩০ মিটার সরিয়ে নিয়ে ফেরির জন্য আরেকটি পন্টুন নির্মাণ করেছি। বর্তমানে দু’টি পন্টুনে ফরিদপুর ও কুমিল্লা নামে দু’টি রো রো ফেরি, রায়পুরা ও রাণীগঞ্জ নামে দু’টি টেকাই এবং কর্ণফুলী নামে একটি ফেরিসহ মোট পাঁচটি ফেরিতে করে নিয়মিত যাত্রী ও গাড়ি পারাপার করছি। তবে রাতে মাঝিরঘাটে দু’টি ফেরি রেখে বাকি সব ফেরি শিমুলিয়া নৌরুট দিয়ে যাত্রী ও গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে।

মাঝিরঘাটে কর্মরত ট্রাফিক সার্জন মুজাদিুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আমাদের যেই পরিমাণ লোকের প্রয়োজন ছিল, সেই পরিমাণ লোকবল আমাদের না থাকায় চাপ সামলাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। এছাড়া ফেরিঘাট থেকে যাওয়া-আসার একটিমাত্র সরু রাস্তা থাকায় সমস্যাটি আরও জটিল আকার ধারণ করছে। তবে যানজট যেন না লাগে সেজন্য সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি।

অন্যদিকে, লঞ্চে করে আসা যাত্রীদের মধ্যেও ভোগান্তির ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। যার মধ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা বরিশালগামী নূরে আলম ও জানে আলম জানান, লঞ্চে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি যাত্রী পরিবহন করে নিয়ে আসায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই নদী পার হলাম। তবুও খুশি পরিবারের সঙ্গে নিজের গ্রামে ঈদটা করার জন্য আসতে পেরে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করার জন্য গেলে লঞ্চঘাটে বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বরত কাউকেই সেখানে পাওয়া যায়নি। তবে লঞ্চচালক সোলায়মান বলেন, এপার থেকে আমরা অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছি না। তবে মাওয়া থেকে মাঝিরঘাটে আসা লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের কিছুটা চাপ থাকায় কিছু বেশি যাত্রী নিতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের তেমন কিছু করণীয়ও নেই, এছাড়া ঈদের সময় এ বিষয়টা সামলিয়ে নিয়ে করা খুবই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তবুও আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করচ্ছি।

জাজিরা মাঝিরঘাট নৌপুলিশ ফাড়ির কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল ইসলাম বলেন, নদীপথে মলম পাটি, ছিনতাই কিংবা চাঁদাবাজি রোধে আমরা সর্বদা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। যাতে করে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা তাৎক্ষণিক আমরা প্রতিহত করতে পারি।

মাঝিরঘাটে অস্থায়ী ক্যাম্প বসিয়ে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এছাড়া র‌্যাবের একটি টহল গাড়িও ২৪ ঘণ্টা টহল দিয়ে যাচ্ছে ঘাটটিতে। যাতে করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারেন।

র‌্যাব-৮ মাদারীপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম বলেন, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা ওই ঘাটে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প বসিয়েছি। যেখানে ২৪ ঘণ্টা র‌্যাব সদস্যরা যে কোনো অপ্রীতীকর ঘটনা রোধে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার কোনো তথ্য আমরা পাইনি।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরার লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থাপনা করেছি। এছাড়া বিভিন্ন বাহিনীর নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।