ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ক্ষেতে পচে যাচ্ছে খড়, গো-খাদ্য সংকটের আশঙ্কা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২২
ক্ষেতে পচে যাচ্ছে খড়, গো-খাদ্য সংকটের আশঙ্কা

লক্ষ্মীপুর: ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে বোরো ধান ঘরে তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। এতে ধান রক্ষা করতে পারলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং বৃষ্টিতে ধানের খড় সংরক্ষণ করতে পারছেন না তারা।

তাই মাঠের মধ্যেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গবাদি পশুর প্রধান খাদ্য খড়। এ কারণে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন খামারিরা।

কৃষকরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় আগে-ভাগে ধান হেফাজত করতে ব্যস্ত তারা। তাই খড়ের দিকে নজর দেওয়ার সময় পাচ্ছেন না। এছাড়া খড় শুকানোর মতো মাঠ বা প্রখর রোদ না থাকায় খড় সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, কৃষকরা খড় সংরক্ষণ না করার কারণে আগামীতে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিতে পারে।

জানা গেছে, জেলাতে প্রায় সাত শতাধিক ছোট-বড় গরুর খামার রয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রত্যেক কৃষকই বাড়িতে গরু পালন করেন। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে মৌসুমি খামারিসহ ব্যবসায়ীরা গরু পালন করেন।

সরেজমিনে গত কয়েকদিনে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার শাকচর, টুমচর, চররমনী মোহন, ভবানীগঞ্জ, মান্দারীসহ বেশ কয়কটি এলাকা ঘুরে পানিতে খড় নষ্ট হওয়ার চিত্র দেখা গেছে।

ভবানীগঞ্জের চরউভূতি গ্রামের কৃষক ও গরু পালনকারী নুর আলম এবং আলী হোসেন জানান, ধান কাটার মৌসুম শুরুর পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এতে ধান ক্ষেতে পানি জমে গেছে। কৃষকরা ধান ঘরে তুলতেই ব্যস্ত। তাই খড়ের প্রতি তাদের নজর নেই।  

তারা বলেন, কৃষকরা ধান ক্ষেতেই খড় শুকাতো। কিন্তু ক্ষেতে পানি থাকায় সেখানে খড় শুকানোর মতো পরিস্থিতি নেই। এছাড়া খড় শুকাতে প্রখর রোদের প্রয়োজন। ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই খড়গুলো রোদে শুকোতে দিলে এক-দুইদিনের মধ্যে শুকিয়ে যেত। পরে সেগুলো গো-খাদ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা হতো। যাদের গরু আছে তারা সেগুলো নিজেদের গরুকে খাওয়াতেন আর যাদের গরু নেই, তারা সেগুলো বিক্রি করতে পারতেন।

এছাড়া কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটার কারণে খড়গুলো জমির কাদা পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

চররমনী মোহন ইউনিয়নের চর আলী হাসান গ্রামের কৃষক ও গরুর খামারি রৌশন আলী এবং নুর নবী বলেন, নিজেরা ধান চাষ করে যেটুকু খড় পাই, তা দিয়ে কয়েক মাসের গরুর খাদ্যের যোগান হয়। তারপর কৃষকদের কাছ থেকে খড় কিনে সংরক্ষণ করি। কিন্তু এবার কৃষকদের খড় মাঠে পচে যাচ্ছে, ক্ষেতের ধান ঘরে তোলা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এবারে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ক্ষেতেই খড় ফেলে রাখা হয়েছে। খড় সংকটের প্রভাব সামনে কোরবানির ঈদেও পড়বে বলে মন্তব্য করেন তারা।

একই এলাকার মৌসুমি গরু ব্যবসায়ী নুর আলম জানান, কোরবানীর ঈদের জন্য গরু এনে এক থেকে দেড় মাস পালনের পর বাজারে বিক্রি করেন তিনি। গরু পালনের জন্য স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকেই খড় কেনেন। কিন্তু এবার খড় সংরক্ষণ করতে না পেরে ধান ক্ষেতেই খড় পচে নষ্ট হচ্ছে।

কৃষক ও গরু পানলকারী সফিকুল ইসলাম বলেন, খড় ভিজলে বা পানিতে থাকার পরে সেই খড় শুকিয়ে নিলে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ জন্য সেগুলো খেতে দিলে গরু খায় না।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোহাম্মদ যোবায়ের বলেন, লক্ষ্মীপুরে এমনিতেই খড়ের সংকট রয়েছে। আর এখন হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হওয়ায় ধান গাছগুলো আকারে ছোট হচ্ছে। এতে খড়ের পরিমাণও হচ্ছে কম। এ কারণে অন্যান্য জেলা থেকে খামারিদের খড় সংগ্রহ করে গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে খামারিদের খড় সংরক্ষণের জন্য উপদেশ দেওয়া হয়। কিভাবে খড় সংরক্ষণ করতে হবে, সে প্রশিক্ষণও আমরা দিয়ে থাকি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২২
এফআর/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।