ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মধুমতি নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০০ ঘর

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২২
মধুমতি নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০০ ঘর

ফরিদপুর: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর ভাঙনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ৩০০ ঘর হুমকির মুখে পড়েছে।

গত ৩ বছরে এই উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ৬০০ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে।

বর্তমানে সেখানকার ১ হাজারের মতো পরিবার হুমকির মুখে রয়েছেন। নদীর তীর রক্ষায় পদক্ষেপ না নিলে এসব ঘর দ্রুতই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন দিন কাটাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

এ অবস্থায় নদীর তীর রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সেখানকার বাসিন্দারা মানববন্ধন করেছেন।

জানা গেছে, আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের ছাতিয়াগাতি, দিগনগর, খোলাবাড়িয়া, কাতলাসুর ও পগনবেগ এই পাঁচটি গ্রামে মধুমতি নদীর ভাঙনের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এছাড়া আশেপাশের বাজড়া, বাঁশতলা, দক্ষিণ চর নারানদিয়া, পশ্চিম চর নারানদিয়া ও পাড়া গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী পাচুরিয়া, টগরবন্দ ও বানা ইউনিয়নেও নদীর ভাঙন চলছে। এতে নদীতে বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতভিটা, ফসলি জমি, স্কুল ঘর, মসজিদসহ নানা স্থাপনা।

গোপালপুর ইউনিয়নের কাতলারসুর গ্রামে মুজিববর্ষে গড়ে তোলা হয় স্বপ্ননগর আশ্রয়ণ প্রকল্প। ওই প্রকল্পের ২৮৬ জন বাসিন্দাদের জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয় ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর। মাত্র দুই বছর না যেতেই এসব ঘরের বাসিন্দারা এখন নদী ভাঙনে ঘর হারানো আশঙ্কায় শঙ্কিত।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রুপালি বেগম জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘর পেয়ে তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। এখন এই আশ্রয় হারালে তাদেরকে আবার পথে পথেই থাকতে হবে।

নবিরণ বেগম নামে এক বৃদ্ধা বাংলানিউজকে বলেন, এই ঘর হারাইলি আমরা হাবিডুবি খাবানি। আমাগে গাঙডা ইট্টু বাইন্ধ্যা দ্যান।

ছাতিয়াগাতি গ্রামের প্রবাসী শাহ মো. মুকুল হোসেন মিয়া জানান, পৈত্রিক সূত্রে প্রায় ৩০ একরের মতো জমিজমা ছিল মধুমতির তীরে। এখন শুধু ভিটেটুকু বাদে তার প্রায় সবই শেষ হয়েছে নদীগর্ভে। ভাঙন রোধ করা না গেলে বাপ-দাদার কবর ও মসজিদটাও নদীতে তলিয়ে যাবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মধুমতির ভাঙনে বাজড়া গ্রামের পুরনো মসজিদটি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পরে নতুন স্থানে মসজিদ করা হয়। এখন সেটিও ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, গোপালপুর ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় গ্রাম ছিল খোলাবাড়িয়া। সেখানে ভোটার ছিল প্রায় ২ হাজার ৬০০। এখন ওই পুরো গ্রাম মধুমতি নদীর গর্ভে চলে গেছে। আর এখন আলফাডাঙ্গার নতুন নতুন গ্রামও বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙনের সমস্যা নিয়ে বহুবার জেলার বিভিন্ন সভায় বলা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বুলবুল এবং ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনও করে গেছেন। কিন্তু ভাঙন রোধে সমন্বিত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এভাবে ভাঙতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে আরো প্রায় হাজারখানেক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে তলিয়ে যাবে। বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, দুই থেকে তিন বছর ধরে এ বিষয়টি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। স্থানীয় জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ওই এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ অন্য কোনো ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য আবারও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২২
এফআর/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।