ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

হাওরে পর্যটকবাহী তরীগুলোতে মিলছে বানভাসীদের আশ্রয়

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
হাওরে পর্যটকবাহী তরীগুলোতে মিলছে বানভাসীদের আশ্রয়

ঢাকা: তরীগুলো এখনও কানায় কানায় পূর্ণ, তবে দৃশ্যপট ভিন্ন। তরীতে যারা আছেন তাদের কেউই হাওরের রূপ দেখতে আসেননি।

প্রকৃতির নির্মমতা থেকে রেহাই পেতে আঁকড়ে ধরেছেন এই আশ্রয়টুকু।  

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বাহারী যে তরীগুলোতে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াত, হাওরের রূপ দেখত- সেই তরীগুলো এখন বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষদের আশ্রয়স্থলের ভূমিকা পালন করছে। বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে তরী (হাউজবোট) মালিকরা।  

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটন ব্যবসায় জড়িত প্রায় সব হাউজবোট এখন এই কাজ করছে। পর্যটকদের খাওয়ার জন্য নৌকায় যে খাদ্যপণ্য কেনা ছিল, সেগুলো রান্না করে খাওয়ানো হচ্ছে বন্যাদুর্গতদের।

ই-ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইটাব) ও বোট অ্যাসোসিয়েশন অব সুনামগঞ্জের সব ট্যুর অপারেটরকে সমন্বয় করে এ কাজ করছে। বোট মালিক ও সংশ্লিষ্টরা রাত-দিন কাজ করছে বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষদের জন্য। ২৫/৩০টি আধুনিক সুবিধা সম্মত তরীসহ ৫০ থেকে ৬০টি পর্যটকবাহী নৌকা বন্যায় আটকে পড়া মানুষদের বিপদ সংকুল অবস্থা থেকে উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়ে আসছে এবং তরীতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করছে।  

সিন্দাবাদ তরীর ইমরানুল আলম বলেন, কখন সরকারি সহায়তা আসবে, কখন এটার বণ্টন হবে সেই অপেক্ষা না করে নিজেরাই নেমে পড়েছি লুঙ্গি কাছা দিয়ে।

স্থানীয়রা বলছেন, হাউজবোটগুলো থাকায় অনেকে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। বন্যায় ডুবে মরা থেকে একটু আশ্রয় পেয়েছেন।  

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বন্যাদুর্গত মানুষদের উদ্ধার কাজে জড়িত জাহাজ ‘দ্যা কিং অব টাঙ্গুয়ার’ পরিচালক বিজয় কুমার দাস বলেন, শুক্রবার (১৮ জুন) প্রায় সব হাউজবোটেই পর্যটকদের আসার কথা। সেজন্য পর্যটকদের খাওয়ার জন্য প্রায় সব বোটেই মাছ-মাংসসহ খাদ্যপণ্য মজুদ করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় পর্যটকদের আসতে না করে দেওয়া হয়েছে। যে খাবারগুলো বোটে ছিল তা নিয়ে বোটগুলো বন্যার্ত মানুষদের উদ্ধারে নেমেছে। বোটের কর্মচারীদের ছুটি না দিয়ে উদ্ধার কাজে নামানো হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি বোটে ৭০ থেকে ৮০ জন লোক আশ্রয় নিয়েছেন। হাউজ বোটগুলো বড় হওয়ায় ছোট ছোট নৌকা দিয়ে দুর্গত মানুষদের উদ্ধার করে বোটে তোলা হচ্ছে এবং রান্না করে খাওয়ানো হচ্ছে। বোটগুলোতে টয়লেট, জেনারটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থাসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকায় বন্যাদুর্গতরা ভালো আছেন।  

জল তরঙ্গ ও জল নিবাসের পরিচালক ইফতেখারুল আলম বলেন, আমাদের পর্যটকদের আসার কথা ছিল, পানি বেড়ে যাওয়ায় ও আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় আমরা তাদের আসতে না করেছি। সংকটকালীন সময়ে দুর্যোগকবলিত বানভাসী মানুষের পাশে দাাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি এবং করে যাচ্ছি।  

আলম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, তার পরিবার এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন বন্যায় আটকে পড়েছিল। ঘরবাড়ি সব ডুবে যাওয়ায় ঘরের চালে অবস্থান নিয়েছিল সবাই। হাউজ বোট তাদের উদ্ধার করে এনেছে।  

সিন্দাবাদ তরীর পরিচালক ইমরানুল আলম জানান, বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষদের উদ্ধারের জন্য কাজ করছেন জল তরঙ্গ ও জল নিবাসের ইফতেখার, অরাফাত, জাহাজী বোটের পরিচালক মিঠু, ফ্লোটিং হাউজ অব টাংগুয়ার মিজান, বজরা হাউজ বোটের নাইমুল ও দিগন্ত, আরশি নগর বোটের রাফি ও দ্যা হাউজ বয়াতের সাগর ও বনেদিসহ অনেকে।  

তরী সংশ্লিষ্ট উদ্ধারকারীরা জানান, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের মানুষ অনেক কষ্টে আছে। বন্যাদুর্গতদের একটু নিরাপদ স্থান, খাবার ও ওষুধ দরকার। কেউ চাইলে ই-ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইটাব) ও বোট অ্যাসোসিয়েশন অব সুনামগঞ্জের মাধ্যমে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
এসএইচডি/এসএ 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।