ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মা সেতু

ইলিশসহ তাজা সবজি পাবেন রাজধানীবাসী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২২
ইলিশসহ তাজা সবজি পাবেন রাজধানীবাসী

বরিশাল: পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের নদী-সাগরের ইলিশসহ দেশীয়-সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির তাজা মাছ ও সবজি পাবেন রাজধানীবাসী।

এতে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য ও কৃষি খাতেও আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

স্থানীয় মৎস্যজীবী ও কৃষকসহ এসব সেক্টরে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কর্মব্যস্ততার পাশাপাশি বাড়বে অর্থনৈতিক গতিশীলতা।

আলিপুর ও কুয়াকাটা মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, পদ্মা সেতু শুধু মৎস্য ব্যবসায়ী বা জেলেদের জন্য নয়, এটি গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য সেক্টরে বড় ধরনের বিপ্লব নিয়ে আসবে। পদ্মা সেতুর কারণে বরিশাল অঞ্চলের জেলেরা সব থেকে বেশি খুশি। আগে আমাদের মাছ ফেরি ঘাটেই নষ্ট হত, ফলে ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়লে জেলেরা এর খারাপ প্রভাবের শিকার হত। কিন্তু এখন পদ্মা সেতু হয়ে তাজা ইলিশ চলে যাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় বাজারগুলোতে।

তিনি বলেন, দেশের যত বড় বাজারে বেশি তাজা মাছ আমরা বাজারজাত করতে পারব, তত ভালো দাম পাব। আর ব্যবসায়ীরা যখন ভালো দাম পাবে, তখন জেলেরা মাছের দর ভালো পাবে। সেটা হোক দেশীয় অভ্যন্তরীণ নদীর কিংবা সমুদ্রের।

আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, এর বাইরে ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে কোনো যন্ত্রাংশ আনতে হলে ফেরিঘাটেই বহনকারী পরিবহনের অপেক্ষায় থাকতে হত দিনের পর দিন। বিলম্বের কারণে পরিবহন মালিক, ট্রলার মালিকসহ সর্বোপরি জেলেরা ক্ষতির সম্মুখীন হত। এখন পদ্মা সেতু চালু হলে যন্ত্রাংশ যেমন দ্রুত চলে আসবে, তেমনি ফিশিংবোট মেরামত করে জেলেরা দ্রুত সাগরে গিয়ে মাছও আহরণ করতে পারবে।

আমরা ধারণা করছি, মৌসুমে ফিশিংবোট প্রতি জেলেদের ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা উপকৃত হবে। আর আমাদের এখানে এখন ৬ শতাধিক ফিশিংবোট আসা-যাওয়া করছে। সব মিলিয়ে সাগরপাড়ের জেলেরা হাসছে, তারা আনন্দিত।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সাধারণত উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা মাছের ভালো দর পায় না রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার না থাকার কারণে। কিন্তু এখন পদ্মা সেতু হয়ে গেছে, তাই ফেরিঘাটে ট্রাকে বসে মাছ পঁচে যাওয়া বা পুরান হয়ে যাওয়ার দোহাই কেউ দিতে পারবে না। উপকূল থেকে দিনের মাছ দিনেই রাজধানীতে গিয়ে পৌঁছাবে। ফলে এখন থেকে ইলিশসহ টাটকা মাছ খেতে পারবেন রাজধানীবাসী।

বরিশাল নগরের পোর্টরোডের বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ী মো. নাছির উদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ। বরিশাল থেকে নদী ও সাগরের ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ঢাকা কিংবা দেশের উত্তরাঞ্চলে পাঠানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা ছিল পদ্মা নদী। ফেরির জন্য অপেক্ষায় হয় মাছ পঁচেছে, নয়তো বাড়তি টাকা দিয়ে কোনোভাবে ফেরিতে উঠতে হয়েছে মাছ বহনকারী ট্রাককে। আর এখন পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলের মৎস্য সেক্টরের ব্যাপক উন্নয়ন হবে।

মৎস্য কর্মকর্তা (হিলসা) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, কয়েক বছর ধরেই দেশের মোট ইলিশের ৬৬ শতাংশের বেশি আহরিত হচ্ছে বরিশাল বিভাগ থেকে। আর বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলিশের জোগান দেয় ভোলা, বরগুনা ও পটুয়াখালী। সেই হিসেবে পদ্মা সেতু মানে এ অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে মৎস্য সেক্টরেরও উন্নয়ন হবে।

এদিকে মৎস্য সম্পদের পাশাপাশি এ অঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। পিরোজপুরের আটঘর-কুড়িয়ানার কৃষক উজ্জ্বল ঘরামি বলেন, শুধু পদ্মার ফেরির কারণে পঁচে যাওয়ার অজুহাতে পাইকাররা আমাদের এ অঞ্চলে উৎপাদিত পেয়ারা, কাঁঠাল, পেঁপে, মরিচ, কচু, কুমড়া, সিম, বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির মূল্য কৃষকদের কম দিত। কিন্তু এখন পদ্মা সেতু হয়ে গেছে, তাই সবাই ক্ষেত থেকে তোলা পণ্য এখন ঢাকার বাজারেই বিকেলে তাজা তাজাই পাওয়া যাবে। কোনোভাবে সবজিসহ আমাদের উৎপাদিত ফসল পঁচা বা নষ্ট হওয়ার শঙ্কা নেই। এতে কৃষকরা ভালো দর পাবে। আর দর ভালো পেলে কৃষকরা আরও আগ্রহী হবে ফসল উৎপাদনে। ফলে কৃষিতেও বিপ্লব ঘটবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২২
এমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।