ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ট্রেনে ভোগান্তি, সিট চোখে দেখলেও পারছেন না পৌঁছাতে

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৩ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২২
ট্রেনে ভোগান্তি, সিট চোখে দেখলেও পারছেন না পৌঁছাতে

ঢাকা: ভোররাত থেকেই ট্রেনের অপেক্ষায় প্লাটফর্মে বসে আছেন যাত্রীরা। সবার হাতে ব্যাগ, কারো সঙ্গে স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন অথবা একা একাই বসে আছেন স্টেশনে।

কিন্তু ট্রেনের দেখা নেই!

এই যখন অবস্থা, তখন প্লাটফর্মে ট্রেন এলেই অনেকে মানুষের ভিড় ঠেলে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের দিকে ছুটছেন। প্রতিটি ট্রেনের ভেতরে আজ ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। যাত্রীদের ভিড়ে ট্রেনের ভেতরে কোনো ঠাঁই ছিল না। প্রতিটি ট্রেনই ছিল যাত্রীতে ঠাসা। প্রতিটি ট্রেনের দরজা ছিল মানুষের ভিড়ে বন্ধ।

এমন অবস্থায় জানালা দিয়ে ট্রেনের মধ্যে প্রবেশ করা এবং ছাদ ও ইঞ্জিনেও অনেক মানুষকে যেতে দেখা গেছে। ট্রেনের ছাদে উঠতে গিয়ে ঘরমুখো যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। ছাদে উঠতে তাদের গুণতে হচ্ছে ৫০ টাকা করে।  
স্টেশনের ট্রলিম্যান প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ৩০ টাকা নিয়ে মই দিয়ে তাদের ছাদে তুলে দিচ্ছেন। তবে ট্রলি ছাড়াও অনেকে ঝাঁপ দিয়ে ছাদে উঠছেন। আর ট্রলির মাধ্যমে ট্রেনের জানালা দিয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে ট্রলিম্যানদের নিতে দেখা গেছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা।

এদিকে জীবনের ঝুঁকি থাকলেও পরোয়া করছেন না কেউ। অনেকের টিকিট কাটা থাকলেও ট্রেনে উঠতে পারছেন না। ট্রেন স্টেশনে আসার পরই মানুষ তাড়াহুড়ো করে ট্রেনে ওঠা আর অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে টিকিট কাটার পরও অনেকে ট্রেনে উঠতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।

সকালে ৭ নম্বর প্লাটফর্মে রাজশাহীগামী ধূমকেতু ট্রেনের সামনে ঘুরছিলেন যাত্রী আশিকুর রহমান। কথা হলে বলে, গত ঈদে ট্রেনের স্বস্তির যাত্রা দেখে এবার ট্রেনে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু এখন যা অবস্থা! এতো মানুষের চাপ হবে ভাবিনি। আমার টিকিট ঞ বগিতে। রাত জেগে অপেক্ষা করে টিকিট করেছিলাম। কিন্তু এখন এতো ভিড়, ট্রেনে উঠতেই পারিনি এখনো। জানালা দিয়ে দেখলাম আমার সিটে আরেকজন বসে আছেন। কিন্তু আমি যে ট্রেনে উঠে সিট পর্যন্ত যাবো, সেই সুযোগ হচ্ছে না। হাতের এই ছোট ব্যাগটা যে রাখবো, তার জায়গাও নেই। ছাদে অথবা দরজার পাশে দাঁড়িয়েই কোনো রকমে যেতে হবে।

একই ট্রেনের যাত্রী আমিনুর রহমান ট্রেন কানায় কানায় পূর্ণ থাকায় তিনি নিজের আসন পর্যন্ত যেতে পারছিলেন না। তিনি প্রথমে ব্যাগ এবং পরে তার স্ত্রীকে ট্রেনের জানালা দিয়ে তার আসনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্ট করছিলেন। আলাপকালে তিনি বলেন, আজ ট্রেনে যে ভিড়, আমার অগ্রীম টিকিট থাকা সত্ত্বেও নিজের সিট পর্যন্ত যেতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়েই ট্রেনের জানালা দিয়ে সিটে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ট্রেনে প্রবেশ অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়ে এভাবে প্রবেশ করতে হচ্ছে।

খুলনাগামী ট্রেনে যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী সামিয়া ইসলাম। ঘরমুখো মানুষের ভিড়ের মধ্যে তিনি তার আসনটি খুঁজে বসে আছেন ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায়। কথা হলে সামিয়া বলেন, প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতেই শত ভোগান্তির মধ্যেও আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। আজ ট্রেনে এত মানুষের ভিড় যে ঠেলে সিট পর্যন্ত আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে।

চিলাহাটি এক্সপ্রেস প্লাটফর্মে এসে পৌঁছালে অনেককে ছাদে ও ইঞ্জিনে উঠতে দেখা গেছে। এ সময় যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, বাসে টিকিট পাইনি। বাইক বন্ধ। ঈদে বাড়ি তো যেতে হবে। তাই ছাদে উঠেই যাত্রা করতে হচ্ছে।

স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, যাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। যাত্রীরচাপ থাকায় বাড়ি ফেরা মানুষ কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েন। তবে আমরা চেষ্টা করছি ট্রেনের সিডিউল ঠিক রেখে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াত নিশ্চিত করতে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২২
এইচএমএস/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।