ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

‘অপরিকল্পিত উন্নয়নে’ ডুবছে সিলেট নগর, অভিযোগের তর্জনী নগরকর্তার দিকে!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২
‘অপরিকল্পিত উন্নয়নে’ ডুবছে সিলেট নগর, অভিযোগের তর্জনী নগরকর্তার দিকে!

সিলেট: গেলো বন্যায় বিপর্যস্ত হয় পুরো সিলেট। বাদ যায়নি সিলেট নগরও।

প্লাবিত হয় নগরের ৮০ ভাগ এলাকা। সেটিকে স্বাভাবিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি হিসেবে মেনে নিয়েছেন নগরবাসী। কিন্তু শনিবার (১৬ জুলাই) রাতের বৃষ্টিতে নগরীজুড়ে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় তারা ক্ষুব্ধ, অভিযোগের তর্জনী নগরকর্তার দিকে!  
 
বন্যা না থাকলেও এবার ভারি বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে সিলেট নগরের রাস্তাঘাট। বাসা-বাড়িতে উঠেছে পানি। দোকানপাটে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে জিনিসপত্র।  
 
অথচ সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি এখন বিপৎসীমার ১৮১ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা-কুশিয়ারার সব ক’টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নীচে। সে হিসেবে ভারি বর্ষণ হলেও নগরের ছড়াখালের পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার কথা।
 
কিন্তু শনিবার রাতে মাত্র দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে সিলেট নগর। জলমগ্ন নগরে অবর্ননীয় দুর্ভোগের শিকার হয়ে নগর কর্তৃপক্ষকে এক হাত নিয়েছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেয়রকে তুলোধুনো করছেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রোববার (১৭ জুলাই) বিকেলে কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
 
সিসিক সূত্র জানায়, সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত এক যুগে প্রায় হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ এসেছে। ছড়া-খাল উদ্ধার, খনন ও প্রশস্তকরণ, ড্রেন নির্মাণসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে এসব টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু ভারি বর্ষণ হলেই ঘণ্টা দেড়েকে নগর জলমগ্ন হয়ে পড়ায় বরাদ্দকৃত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মানুষজন।
 
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন তুলে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী লিখেছেন, ‘নদীতে বন্যা নাই, কিন্তু সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর মেইন রোডগুলোতে এমন পানি পুরাই হাস্যকর। মাগার শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন গেলো কই রে..। ’
 
সাংস্কৃতিক সংগঠক রজত কান্তি গুপ্ত ফেসবুকে লিখেন, ‘সরকারের টাকা আর নগরবাসীর টেক্সের টাকায় যে উন্নয়ন মাত্র দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে চোখের ঘুম কেড়ে নেয়, সেই উন্নয়নের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করতে দ্বিধা কেনো? বন্যার কারণে খিঁচুড়ি নয়, ত্রাণ নয়, চাই পরিকল্পিত উন্নয়ন। ’
 
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগে কারও হাত নেই। বর্তমানে আবহাওয়ার এতো পরিবর্তন হয়েছে। গতরাতে দেড় ঘণ্টায় রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে ৭০ মিলিমিটার, যা বিগত ৬০/৭০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এতো বৃষ্টির পরও কয়েক ঘণ্টা জলাবদ্ধতার পর পানি থেমে থাকছে না, নেমে যাচ্ছে। আগে তো সেটা ছিল না। সেই সঙ্গে পাহাড়-টিলা ধসে বৃষ্টির পানিতে আসা পালি মাটিতে ড্রেন ভরে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। টেকনিক্যাল লোকজনও বলছেন, এখন কাজ শুরু করলে তা টেকসই হবে না। তাই টেকনিক্যাল পার্সনদের সঙ্গে নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে সিসিক।   
 
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘বন্যার কারণে ড্রেনগুলোতে পলিমাটির আস্তরণ পড়েছে। সঙ্গে ময়লা-আবর্জনায় বৃষ্টির পানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই ড্রেনগুলো সংস্কারে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের অভ্যন্তর দিয়ে ১১টি ছড়াখালসহ ১৬টি শাখা ছড়া সুরমা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। ২০০৯ সালে জলাবদ্ধতা নিরসনে ছড়া-খাল খনন ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে ১১ কোটি, ২০১২ সালে ২৭ ওয়ার্ডে ড্রেন নির্মাণে ৪৮ কোটি ৫০লাখ, ২০১৩ সালে জলাবদ্ধতা নিরসনে ২ কোটি ৭০ লাখ, ২০১৪ সালে ৭৯ কোটি ৮০ লাখ, ২০১৫ সালে ১১ কোটি টাকা এবং ২০১৬ থেকে ২০১৯ অবধি ২৩৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। এরপর ২০১৯ সালে ‘সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে’ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে।
 
জানা গেছে, প্রকল্পগুলোর আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৬৯ কোটি ৫০ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৯৩ কোটি ৫৯ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৯৮ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এছাড়া চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় করার হওয়ার কথা। প্রকল্পের সঙ্গে ৩২৭ কিলোমিটার ড্রেন ও ৮ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। আরসিসি রাস্তা, আরসিসি ড্রেন ও আরসিসি ড্রেনসহ ফুটপাত নির্মাণ খাতে প্রকল্পটির সিংহভাগ বরাদ্দ ব্যয় হওয়ার কথা। সিলেট সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ এই প্রকল্পটির কাজ এখনও চলমান রয়েছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলীরা জানান, ‘ওই প্রকল্পের আওতায় ৫০০ কোটি টাকা ড্রেনেজ সংস্কার ও ব্যবস্থাপনায় ব্যয় হবে। এখন পর্যন্ত ৩০০ কোটি টাকার মতো পেয়েছি। ওই টাকায় কিছু কাজ হয়েছে, কিছু কাজ চলমান রয়েছে। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২
এনইউ/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।