ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

অস্তিত্ব সংকটে ১৪ কি.মি. খাল 

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২২
অস্তিত্ব সংকটে ১৪ কি.মি. খাল 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: সড়কের দুই পাশেই খাল। যে খাল দিয়ে এক সময় পানির স্রোত ধারা প্রবাহিত হতো।

খালকে কেন্দ্র করে একসময় ফসলি জমির চাহিদা মেটানো ও গ্রামীণ মানুষের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারও ঘটেছে। তবে প্রভাবশালী মহল নানা কৌশলে প্রাচীন খালটির বিভিন্ন অংশে অবৈধভাবে ভরাট করে দখল করে মার্কেট, বাড়িঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। এতে করে ঐতিহ্যবাহী খালের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতায় সৃষ্ট হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-লালপুর সড়কের দু্ই পাশে প্রায় ১৪ কিলোমিটার খালের বেশিরভাগই এখন অবৈধ দখলে। এতে এলাকার জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাবের শঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভরাট হয়ে যাওয়া খালের ওপর কালভাট ও ব্রিজ এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু কিছু ব্রিজের নিচের অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। এখনও চলছে খালের জায়গা ভরাট করে নির্মাণ কাজ। কোনো কোনো জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে বড় মার্কেট। আবার কোথাও বানানো হয়েছে বসতবাড়ির জন্য সংযোগ সড়ক।

স্থানীয়রা জানায়, এক সময় সড়কের দুই পাশের খালগুলো মেঘনা ও তিতাস নদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছিল। প্রাচীন এই খালকে কেন্দ্র করে নাটাই-লালপুর এলাকায় ব্যবসা- বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল। স্বল্প খরচে নৌপথে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যমও ছিল এই খালগুলো।  

স্থানীয় ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ছোটবেলায় দেখেছি এই খাল দিয়ে নৌকা চলতো। গ্রামের মানুষ গোসল করতো। খালে মিলতো ছোট-বড় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। বর্তমানে খালগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থসামাজিক ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে নাটাই, বটতলী, খোলাপাড়া, লালপুর, বড়হরণ, ভাটপাড়াসহ চারটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।



স্থানীয় বাসিন্দা অন্তর খান বাংলানিউজকে বলেন, দখলবাজদের কারণে এই খালগুলোর বিভিন্ন অংশে একে একে গড়ে ওঠেছে বহুতল মার্কেট, বাড়িঘর দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ফলে খালের বেশিরভাগ অংশই দখলবাজদের পেটে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় খালগুলো উদ্ধারে উদ্যোগ নেওয়া হলেও অদৃশ্য কারণে তা থেমে যায়।

নাটাই ইউনিয়নের বাসিন্দা সালাউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, খালগুলোর প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যাওযায় ভারী বৃষ্টিপাত হলেই আমাদের বসতভিটায় পানি ওঠে যায়। ফলে দুভোর্গ পোহাতে হয়। এছাড়া পানির পচা গন্ধে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। আমরা প্রাচীনতম এই খালটিকে উদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

নদী ও প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক সংগঠনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সভাপতি মো. শামীম আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ১৪ কিলোমিটার খালের এখন শুধু চার-পাঁচ কিলোমিটার অংশ দেখা যায়। প্রাচীন খালটির অস্তিত্ব এখন আর নাই। প্রশাসন যদি এগুলো নজরে না রাখেন তাহলে দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। আমাদের দাবি এ খালগুলো দ্রুত অবমুক্ত করা হোক।



ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, জলাধার ভরাট বন্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তর কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সেখানে অবৈধভাবে জলাধার ভরাট করা হয় সেখানে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২০১৯-২২ সাল পর্যন্ত ৩৭টি মামলা করা হয়েছে। চার্জশিটও (অভিযোগপত্র) ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু নাটাই লালপুর সড়কের পাশে খালটি দখলের বিষয়টি নজরে এসেছে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে খাল উদ্ধারে সব আইনগত প্রক্রিয়া নেওয়া হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. শাহগীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের নির্দেশনানুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন খাল ও জলাধার অবৈধ দখল থেকে উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা আখাউড়া উপজেলার কালন্দী খাল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে টাউন খাল অবৈধ দখলমুক্ত করার কাজ শুরু করেছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে আশুগঞ্জ লালপুর ১৪ কিলোমিটার সড়কের পাশে খালগুলো সিএস রেকর্ড অনুযায়ী পরিমাপ করে অবৈধ দখলমুক্ত করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।