ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

চা বাগানগুলোতে ফিরেছে প্রাণ

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২২
চা বাগানগুলোতে ফিরেছে প্রাণ

মৌলভীবাজার: ১৩ দিন পর অবশেষে চা বাগানগুলোতে ফিরেছে প্রাণ। নারী চা শ্রমিকরা চায়ের সবুজের বুকে দাঁড়িয়ে দুটি পাতা একটি কুঁড়িতে হাত দিয়েছেন।

একটি একটি করে দুটি পাতা একটি কুঁড়ি তুলে জড়ো করে কাঁধে রাখা ঝুলন্ত ব্যাগে সেগুলো দ্রুতই ভরছেন। এ দৃশ্য যেন চা বাগানের চিরায়ত সৌন্দর্য।

তবে এ সৌন্দর্যটি কিছুদিনের জন্য ম্লান ও স্থবির হয়ে গিয়েছিল। দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বর্ধিত করার দাবি দেশের ১৬৮টি বাগানে (ফাঁড়ি চা বাগানসহ ২৩২টি) ছড়িয়ে পড়েছিল। চা শ্রমিকরা তাদের দৈনিক কাজ বন্ধ রেখে নেমে এসেছিলেন মহাসড়কে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বাগানে বাগানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ।

সবশেষে রোববার (২১ আগস্ট) রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মীর নাহিদ আহসানের আন্তরিক তৎপরতায় বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন। এ কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সকালের ভেতরই সব বাগানে পৌঁছে যায়।

এ সিদ্ধান্তের ফলেই চা বাগানগুলোর সেকশনে সেকশনে (চা আবাদের একত্রিক সুনির্দিষ্টি পরিমাণ ভূমি) নারী চা শ্রমিকরা জড়ো হয়ে যে যার মতো করে চা পাতা তুলছেন। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানেই সোমবার (২২ আগস্ট) শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেছেন।

সোমবার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কয়েকটি বাগানে গিয়ে পাতা উত্তোলেনের একই দৃশ্য চোখে পড়ে। প্রায় দুই সপ্তাহ বন্ধের ফলে দুটি পাতা একটি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বড় হয়ে গেছে। তাও তারা অনায়সে তুলে নিচ্ছেন। দেখা গেল, যে পাতাগুলো বেশি বড় হয়ে গেছে সেগুলো তারা দু’বারে তুলে নিচ্ছেন।

ভাড়াউড়া চা বাগানের মিরা হাজরা ও বীনা চাষার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তারা তখন পাশাপাশি দূরত্বে দাঁড়িয়ে চা পাতা তুলছেন। তাদের অনুভূতি জানতে চাইলে কথা প্রসঙ্গে তারা জানান, অনেক দিন পর কাজে ফিরতে পেরে বেশ ভালো লাগছে তাদের। তারা আশায় বুক বেঁধে আছেন কিছুদিনের মধ্যেই এ মজুরি সমস্যা সমাধান হবে।    

দুপুর রোদের তীব্রতায় দাঁড়িয়ে অপর নারী শ্রমিক লক্ষ্মী গড় ও মায়া হাজরার ক্রমশই পাতা তুলে চলেছেন। তাদের হাতের এ দ্রুতগতিই যেন সমৃদ্ধির বার্তা ছড়াচ্ছে চা বাগানে।

চা বাগানের সেকশনে নারী চা শ্রমিকদের পাতা উত্তোলনে সার্বিক দিকনির্দেশনা দেবার জন্য থাকে একজন সর্দার। একেকটি গ্রুপে একজন সর্দারের নিয়ন্ত্রণে থাকেন প্রায় ৫৫ জন নারী শ্রমিক।  

চা বাগানের সর্দার জয় নারায়ণ জেনা বাংলানিউজকে বলেন, একসঙ্গে বাগান ১৩ দিন বন্ধ ছিল। আজ সকালে আমাদের নেতাদের নির্দেশ পেয়ে আমরা বাগান চালু করেছি। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে চা পাতা উত্তোলনের কাজ আমরা শুরু করেছি। আমরা বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করবো। চা গাছ তেমন কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, চা পাতা সামান্য একটু লম্বা হয়ে গেছে। এটাতে কোনো সমস্যা হবে না। আরও যদি কিছুদিন বাগান বন্ধ থাকতো তবে চা বাগানের পাতাগুলোর ক্ষতি হয়ে যেত। বড় হয়ে যাওয়া পাতাগুলোকে মাঝখানে ভেঙে দুই অংশ করে নিতে হবে।

বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিটিএ) সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান জিএম শিবলি বলেন, আমাদের চায়ের ভরা মৌসুম চলছে এখন। ঠিক এ সময়ে চা শ্রমিকদের কাজে ফিরে আসার এ উদ্যোগটি ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। সবারই তাতে লাভ।

** প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে চা-শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২২
বিবিবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।