ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

৮০তম জন্মদিনে মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তি মেজর রফিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২
৮০তম জন্মদিনে মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তি মেজর রফিক মেজর রফিক

ঢাকা: ৮০ বছরে পা দিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম জীবন্ত কিংবদন্তি ১নং সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।  

১৯৪৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি পৌরসভায় নাওড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রফিকুল ইসলাম।

তাঁর বাবার নাম আশরাফ উল্লাহ এবং মায়ের নাম রহিমা বেগম। তিন ভাই ছয় বোনের মধ্যে সবার বড় রফিকুল ইসলাম। তিনি সবার কাছে মেজর রফিক নামেই বেশি জনপ্রিয়।

নিজ গ্রাম নাওড়াতে প্রাথমিক স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয় মেজর রফিকের। তাঁর বাবা সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় পরবর্তীতে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থানের পাশাপাশি সেসব এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন তিনি।

১৯৫৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা মডেল হাই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট (আই.এসসি) পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে পড়াশোনা করেন। ১৯৮১ সালে তিনি আমেরিকার হার্ভাড বিজনেস স্কুলে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম কোর্স সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবনে কিছুদিন ‘ইউপিপি’ সংবাদ সংস্থায় অস্থায়ীভাবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে অফিসার পদে নির্বাচিত হয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

১৯৭১ সালে রফিকুল ইসলাম চট্টগ্রামে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এ অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। সে সময় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সেনা সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি, রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি উপলদ্ধি করেন, যে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাতে পারে। সেক্ষেত্রে  আক্রান্ত হবার আগেই পাকিস্তানিদের উপর আক্রমণ করাই যৌক্তিক। এই ভাবনা থেকে তিনি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন।

পাকিস্তানি সৈন্যদের জন্য ‘সোয়াত’ জাহাজে আনা প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ খালাস বন্ধ করতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বন্দরের বাঙালি শ্রমিকরা এবং তাঁর অধীনস্থ বাঙালি সৈন্যরা অস্ত্র, গোলাবারুদ খালাস বন্ধ করে দেয়।

১৯৭১ এর ২৪শে মার্চ রাতেই ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম বিদ্রোহ শুরু করেন। রফিক তাঁর বাহিনী নিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ করতে থাকেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আর্টিলারি, ট্যাংক ও বিমান আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পুরো এপ্রিল মাস যুদ্ধ করতে করতে ১৯৭১ সালের ২রা মে তাঁর হেডকোয়ার্টার রামগড় হতে সীমান্তের ওপারে ভারতের হরিণায় স্থাপন করেন। এখান থেকেই তিনি মেজর হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ১নং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে চট্টগ্রাম এলাকায় যুদ্ধ চালিয়ে যান। যুদ্ধের পুরো প্রায় নয় মাস চট্রগ্রাম অঞ্চলে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
 
অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনী পরাজিত হয়ে ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আত্মসমপর্ণ করলে ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে মেজর রফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জীবিত যোদ্ধাদের জন্য সর্বোচ্চ সাহসিকতার সর্বোচ্চ পুরস্কার বীর উত্তম পদক পান মেজর রফিক। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পাশাপাশি লেখক ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবেও সুখ্যাতি পেয়েছেন মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম।

১৯৯০ সালে দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা হিসাবে (মন্ত্রী পদমর্যদায়) নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন মেজর রফিক। ১৯৯৬ সালে তিনি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুর-৫ থেকে সপ্তম জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপর ২০০৮ সাল, ২০১৪ সাল, ২০১৮ সালে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

লেখক হিসেবে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০১৯) পান মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে রচিত তাঁর মূল গ্রন্থ ‘এ টেল অব মিলিয়নস’ বইটি ১৯৭৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৮১ সালে ‘এ টেল অব মিলিয়নস’ বইটিকে বর্ধিত করা হয় এবং একই সময়ে বইটির বাংলা অনুবাদ ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার করুণ ও বেদনাময় কাহিনী নিয়ে রচিত তাঁর আরেকটি বই ‘মুক্তির সোপানতলে’ প্রকাশিত হয় ২০০১ সালের জুলাই মাসে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সমকালীন বিষয়াদির ওপর তাঁর বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২
এমইউএম/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।