ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

‘উন্নয়ন ভোগান্তিতে’ খুলনাবাসী, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২২
‘উন্নয়ন ভোগান্তিতে’ খুলনাবাসী, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

খুলনা: খনন করা ড়্রেনের মাটির স্তূপ সড়কজুড়ে। যার পাশে আবার উঠিয়ে রাখা হয়েছে পয়ঃবর্জ্য।

আবার কোথাও কোথাও ইট, বালু, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী ও সরঞ্জাম সড়কের অর্ধেক জুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে পথচারী ও যান চলাচল, ঘটছে দুর্ঘটনা, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। খুলনা মহানগরীর ব্যস্ততম খানজাহান আলী রোডের রয়েল মোড়, শান্তিধাম মোড়, জামাতখানা এলাকায় এমন দৃশ্য গত কিছুদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে।

এছাড়া মহানগরীর পূর্ব বানিয়া খামার, বি কে মেইন রোড, বড় মসজিদ থেকে ডি আলী প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত এলাকায় ঢালাই ড্রেনের কাজ চলায় চরম ভোগান্তিতে আছেন এলাকাবাসী।

টুটপাড়া মেইন রোড, টুটপাড়া ফরিদ মোল্লার মোড়, জোড়াকল বাজার, জিন্নাহ পাড়া মেইন রোড, পশ্চিম বানিয়া খামার বিকে মেইন রোড, জাহিদুর রহমান সড়ক, দোলখোলা মতলেবের মোড়, সরকারি বি এল কলেজ রোড, মুজগুন্নি আবাসিক এলাকা, রূপসা নতুন বাজার এলাকা, নিরালা ১নং সড়ক, শেরেবাংলা রোডসহ নগরীর বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চলছে সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণ কাজ।

নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণ এলাকা ঘেরাও করে কাজ করার কথা থাকলেও সর্বত্রই  দেখা যায় রাস্তার ওপর নির্মাণ সামগ্রী, মাটি, বালি, পাথর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে দিনের পর দিন। গাড়ির চাকায় সেগুলো পিষ্ট হয়ে ধুলা ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। এ কারণে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ পথচারীদের। ধুলার রাজত্বে অসহায় শহরবাসীর একদিকে বেড়েছে ভোগান্তি, সঙ্গে রোগবালাইও।

এছাড়া খুলনা ওয়াসা কোথাও সুয়েজ লাইন, কখনো ওয়াসার পানির লাইন সংস্কারে চলছে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সড়কে সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী।

নগরীতে কতটি সড়ক ও ড্রেনের কাজ চলছে- জানতে চাইলে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) প্রধান প্রকৌশলী মঞ্জুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নগরীতে ২১১টি ড্রেন, খাল ও স্লুইচগেটের নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া ৫৭১টি সড়কে পর্যায়ক্রমে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। যার মধ্যে বেশ কিছু সড়কের কাজ খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)  ও  সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরে সঙ্গে সমন্বয় করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব উন্নয়ন কাজ ২০২৩ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে উন্নয়ন কাজের নামে সারাবছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলতে থাকায় ক্ষিপ্ত নগরবাসী। সমন্বয়হীন অপরিকল্পিত এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের ইউনি ভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ওই স্থান থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজ ধীর গতিতে চলায় লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই কাজ দুই বছর আগেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয়নি।   ময়লাপোতা মোড় দিয়ে শহরের অর্ধেক মানুষ যাতায়াত করে। ওখানে সন্ধ্যাবাজার থাকায় বিকেল থেকেই যানজট লেগে থাকে। এই মোড়ের বিকল্প সড়ক ইকবাল নগর রোড একসঙ্গে সংস্কার কাজ করায় এই ভোগান্তি লেগেই আছে।   সাতরাস্তা বা ময়লাপোতা মসজিদের পাশ দিয়ে ইকবাল নগর  রোডে যাতায়াতের সুযোগ থাকলে ময়লাপোতা মোড়ে কোনো যানজট লাগতো না। শহরের সব পার্শ্ব রাস্তা, অলিগলি একত্রে সংস্কারের নামে খুঁড়ে রাখা হয়েছে।   কাজের এই ধীরগতির কারণে ব্যবসায়ীরা  চরম বিপাকে আছেন। কারণ তারা দোকান খুলতে পারছেন না। দোকান খুলে রাখলেও ক্রেতারা আসতে পারছেন না।

রূপসা নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, কেসিসি এলাকায় চলছে ড্রেন নির্মাণর অপরিকল্পিত কাজ। বছর পার হয়ে গেলেও এখনো অনেক জায়গায় ড্রেনের কাজ শেষ  হয়নি। শেষ হয়নি স্লাবের কাজও। এ নিয়ে ভোগান্তিতে এলাকার বাসিন্দা এবং ব্যাবসায়ি সমাজ। এ ব্যাপারে কারো কাছেই কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।   মাসের পর মাস এই ড্রেনের নির্মাণ সামগ্রী সমস্ত রাস্তা দখল করে সৃষ্টি করছে সীমাহীন যানজট। তারপরে আবার এখন শুরু হয়েছে নতুন রাস্তা কেটে স্যুয়ারেজ লাইনের কাজ। এ যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’।

শিবুপদ রায় নামে এক প্রাইভেটকার চালক বলেন, নগরীর অধিকাংশ সড়কে কাজ চলছে। এ জন্য নির্মাণ সামগ্রী রাস্তার ওপর ফেলে রাখায় যানজট লেগেই আছে।
নিরাপদ সড়ক চাই( নিসচা) খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, বছরের পর বছর ধরে বিক্ষিপ্তভাবে খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে সেবা সংস্থাগুলো সমন্বয়হীন কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে। একেকটি রাস্তা দীর্ঘদিন কেটে রাখায় যানজট ও ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ নগরবাসী।

তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প, খোঁড়াখুঁড়ি ও জনভোগান্তি দূরীকরণে সড়ক খনন নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ প্রয়োজন। পাশাপাশি অযোগ্য ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্ত করে শাস্তির দাবি জানান নিসচার এ নেতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮গ৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।