ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অশ্রু ভেজা চোখে বিশালের বিদায়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২২
অশ্রু ভেজা চোখে বিশালের বিদায়

নরসিংদী: ওমর ফারুক বিশাল একাধারে গীতিকার, কবি ও লেখক। সবসময় প্রাণোচ্ছল থাকতেন এবং সঙ্গে থাকা সবাইকেও হাসিতে ভরিয়ে রাখতেন।

তিনি গ্রামের বাড়িতে আসলে বাল্যবন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ঘোরাঘুরিতে মেতে থাকতেন। এবারও বাড়িতে এসে বন্ধুদের সঙ্গে গ্রামের দোকানে চায়ের আড্ডা দিয়েছেন, আড়িয়াল খাঁ নদে জাল দিয়ে মাছ ধরেছেন, আর রাতে নদীর ধারে বন্ধুদের নিয়ে করেছেন হাঁসভোজন।  

বিশালের এবারের গ্রামের বাড়িতে কাটানো ছবিগুলো ফেসবুকে ঝলমল করলেও তার বন্ধু ও স্বজনদের কাছে তা এখন বেদনাদায়ক স্মৃতি।

এবারের ছুটি কাটিয়ে গ্রাম থেকে বিশালের আর ঢাকা ফেরা হলো না। সোমবার (৭ নভেম্বর) সকালে ঢাকায় কর্মস্থলে ফেরার পথে নরসিংদীর মরজাল বাসস্ট্যান্ডের সড়কেই ঘাতক কার্ভাডভ্যানের ধাক্কায় স্বপ্নবান এই মেধাবী তরুণের প্রাণ ঝরে যায়। আর গুরুতর আহত হয়ে তার বন্ধু ইমাম হোসেন সজল (২৬) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় স্থানীয় ধুকুন্দী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিশালের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ অসংখ্য মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সবাই বিশালের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। পরে সন্ধ্যায় অশ্রু ভেজা চোখে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বিশালের এই অকাল মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না। বিশালকে শেষবার দেখতে তাঁর বাড়িতে ভিড় জমান এলাকাবাসী। পরিবারের সবাই বিশালের মরদেহের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নিহতের বড় ভাই শেখ সেলিম বলেন, বিশাল আমাদের খুব আদরের ছোট ভাই ছিল। সে ছোটবেলা থেকেই খুব প্রতিভাবান ছিল। সে সাংবাদিকতার পাশাপাশি গানও লিখতো। যা মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু আজ ঘাতক চালকের বেপরোয়া গতি আমার ভাইকে বাঁচতে দিলো না। অকালেই সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আমি ঘাতক চালকের বিচার চাই।

বিশালের বাল্যবন্ধু ভাস্কর অলি মাহমুদ বলেন, বিশাল খুব বন্ধুপ্রাণ ছিল। সে গ্রামে এলেই আমাদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে থাকতো। তার মতো মেধাবী তরুণের এই অকাল মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। দেশকে অনেক কিছু দেওয়ার বাকি ছিল তার। বিশালের এই অকাল মৃত্যুতে আমাদের বন্ধু মহল শোকাহত।

ফজল মিয়া নামে বিশালের প্রতিবেশী বলেন, সে খুবই ভালো ছেলে ছিল। এলাকায় এলেই আমাদের খোঁজ খবর নিতো। তার এই মৃত্যু মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।

ভৈরব হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, এ ঘটনায় কার্ভাডভ্যানটি আটক করা হয়েছে। নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে। মামলার গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

উল্লেখ্য, সোমবার সকালে বিশাল তার কর্মস্থল ঢাকায় যাওয়ার জন্য সজলের মোটরসাইকেলে করে মরজাল বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে বের হয়। তারা মরজাল বাসস্ট্যান্ড এলাকার কাছাকাছি পৌঁছালে ভৈরবগামী একটি বেপরোয়া গতির কার্ভাডভ্যান তাদের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়।  এতে ঘটনাস্থলেই বিশাল মারা যায়। আর সজল গুরুতর আহত হয়।

নিহত ওমর ফারুক বিশাল বেলাব উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের ধুকুন্দী গ্রামের মৃত নূরুল হকের ছেলে। তিনি একাধারে গীতিকার, কবি ও লেখক। তার সবশেষ কর্মস্থল ছিল নিউজজিটোয়েন্টিফোর.কম।

** সাংবাদিক-গীতিকার ওমর ফারুক বিশাল আর নেই

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।