আজকের ছোট্ট এই লেখা আমার প্রিয় আমেরিকান শোগুলোর অন্যতম একটি শো নিয়ে। এবং এর সাম্প্রতিক হতবাক ঘটনাবলি ঘিরে।
Jimmy Kimmel Live! হলো একটি আমেরিকান লেট-নাইট টক শো, যা নির্মাণ ও উপস্থাপনা করেন জিমি কিমেল। এটি সম্প্রচারিত হয় আমেরিকান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি এবিসি-তে। ঘণ্টাব্যাপী এই রাতের অনুষ্ঠানটি ধারণ করা হয় লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়ার হলিউডে অবস্থিত এল ক্যাপিটান এন্টারটেইনমেন্ট সেন্টার (আগে যা ছিল হলিউড মেসোনিক টেম্পল)।
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লেট-নাইট টেলিভিশন জগৎ কেঁপে ওঠে যখন ডিজনির মালিকানাধীন এবিসি ঘোষণা করে যে, Jimmy Kimmel Live! অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হচ্ছে। এ খবরে ভক্ত ও সমালোচকরা হতবাক হন। প্রশ্ন ওঠে, কী এমন ঘটেছিল যে একটি প্রধান নেটওয়ার্ক তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকাদের একজনকে সাময়িকভাবে সরিয়ে দিতে বাধ্য হলো?
এই নিবন্ধে তুলে ধরা হলো সেই রাজনৈতিক, কর্পোরেট ও নিয়ন্ত্রক (regulatory) প্রেক্ষাপট যা মিলে তৈরি করেছে এই ঝড়। আলোচনাটা তথ্যময় করা যেতে পারে।
যে মন্তব্যে শুরু হলো ঝড়
১৫ সেপ্টেম্বর, জিমি কিমেল তার মোনোলগে (শুরুর বক্তব্যে) কনজারভেটিভ কর্মী চার্লি কার্কের মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি ইঙ্গিত করেন যে হামলাকারীর সঙ্গে “MAGA গ্যাং”-এর যোগসূত্র আছে। অথচ তখন পর্যন্ত তদন্তকারীরা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করেননি।
সমালোচকদের মতে, এটি সীমা অতিক্রম করে, কারণ একজন উচ্চপ্রোফাইল নেটওয়ার্ক উপস্থাপক চলমান এক ট্র্যাজেডিকে যাচাইবিহীন রাজনৈতিক রঙে রাঙিয়ে দিলেন।
এফিলিয়েট স্টেশনগুলোর চাপ
এবিসি’র মতো নেটওয়ার্কগুলো দেশজুড়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য স্থানীয় এফিলিয়েট স্টেশনের ওপর নির্ভর করে। যখন বৃহত্তম মালিকদের একজন, Nexstar Media Group, ঘোষণা করল তারা কিমেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ করবে, বার্তাটা স্পষ্ট হয়ে গেল: এই বিতর্ক তাদের জন্য আর্থিকভাবে অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
অল্প সময়ের মধ্যেই Sinclair Broadcast Group দাবি জানায়, কিমেলকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং চার্লি কার্ক প্রতিষ্ঠিত সংস্থা Turning Point USA-কে অনুদান দিতে হবে। এফিলিয়েট হারানো মানেই দর্শক হারানো, বিজ্ঞাপন আয়ের ক্ষতি, আর নেটওয়ার্কের প্রভাব কমে যাওয়া, যা এবিসি উপেক্ষা করতে পারেনি।
FCC-এর হস্তক্ষেপ
বিতর্ক আরও তীব্র হয় যখন ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনের (FCC) কমিশনার ব্রেন্ডন কার (যিনি ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত) প্রকাশ্যে কিমেলের মন্তব্যকে ‘ভ্রান্তিকর’ ও ‘বীভৎস’ বলে অভিহিত করেন। তিনি ইঙ্গিত দেন, এবিসি’র এফিলিয়েট স্টেশনগুলো সম্প্রচার লাইসেন্স নবায়নের সময় ‘জনস্বার্থের মানদণ্ড’ পূরণে সমস্যায় পড়তে পারে।
আইনগতভাবে এ হুমকি কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও ইঙ্গিতটি যথেষ্ট ছিল, নিয়ন্ত্রকেরা এখন খেয়াল রাখছে। ফলে ডিজনি ও এবিসি’র জন্য বিষয়টি আর কেবল জনসংযোগ (PR) সংকট রইল না; তা পরিণত হলো সম্ভাব্য সরকারি লড়াইয়ে।
ডিজনির অভ্যন্তরীণ হিসাব-নিকাশ
খবরে জানা গেছে, ডিজনির সিইও রবার্ট আইগার এবং টিভি নির্বাহী ডানা ওয়ালডেন সরাসরি এই ঘটনায় আলোচনায় যুক্ত ছিলেন।
গত কয়েক মাস ধরে কিমেলকে রাজনৈতিকভাবে উত্তেজক মন্তব্য কমাতে বলা হচ্ছিল। কিন্তু এখন যখন এফিলিয়েটরা বিদ্রোহ করছে, নিয়ন্ত্রকেরা হুঁশিয়ারি দিচ্ছে এবং শিরোনামে বিতর্ক তীব্র হচ্ছে—তখন স্থগিতাদেশই হয়ে ওঠে সবচেয়ে সহজ সমাধান।
কেন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ
কিমেলের স্থগিতাদেশ কেবল কোনো সেলিব্রিটি কেলেঙ্কারি নয়। এটি আমাদের মিডিয়া বিশ্বের কয়েকটি অস্বস্তিকর সত্যকে সামনে আনে। এফিলিয়েট শক্তি বাস্তব; নেটওয়ার্ক অনুষ্ঠান তৈরি করলেও তা সম্প্রচারের ক্ষমতা স্থানীয় স্টেশনগুলোর হাতে। তাদের সমর্থন হারালে অনুষ্ঠান কার্যত মৃত।
নিয়ন্ত্রণ রাজনীতিকরণ হতে পারে: FCC-এর হুঁশিয়ারি দেখিয়ে দেয় রাজনৈতিক শক্তি বিনোদনমূলক সিদ্ধান্তকেও প্রভাবিত করতে পারে।
বাকস্বাধীনতার সীমা আছে কর্পোরেট স্বার্থে: কিমেলের কথা বলার অধিকার আছে, আবার ডিজনিরও অধিকার আছে তাদের ব্র্যান্ড ও ব্যবসা রক্ষার।
এই ঘটনাটি তুলে ধরে—এক বিভক্ত আমেরিকায় কৌতুক, সমালোচনা আর কর্পোরেট সতর্কতার মধ্যে কতটা ভঙ্গুর এক ভারসাম্য বিদ্যমান।
জিমি কিমেলের স্থগিতাদেশ কোনো একক মন্তব্যের ফল নয়। এটি রাজনৈতিক বিতর্ক, কর্পোরেট ঝুঁকি-ব্যবস্থাপনা ও এফিলিয়েট অর্থনীতির সংঘর্ষের ফলাফল। এবার আজকের লেখাটিকে শেষ করার আগে যা বলা জরুরি মনে হচ্ছে।
দর্শকদের জন্য এটি একটি স্মরণিকা: আমরা টিভিতে যা দেখি তা কেবল কৌতুক বা রেটিং নয়, এটি আসলে নেটওয়ার্ক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ব্যবসায়িক স্বার্থের অদৃশ্য আলোচনার ফল।
এই বাস্তবতায়, একটি মোনোলগের মাত্র একটি লাইন পুরো শিল্পকে কাঁপিয়ে দিতে পারে।
“অন্য লেট-নাইট শোগুলো নিয়ে আমার একটাই সমালোচনা আছে—সেগুলো প্রায় পুরোপুরি লেখা স্ক্রিপ্টে বাঁধা। ”— জিমি কিমেল
মাহবুব আহমেদ: লেখক, উদ্যোক্তা ও মানবাধিকার কর্মী
এমজেএফ