ঢাকা, শুক্রবার, ১১ আশ্বিন ১৪৩২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৭

মুক্তমত

বাজার তদারকিতে অবহেলায় নিয়ন্ত্রণে নেই সবজির দাম

মো. খলিলুর রহমান সজল, সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ |
আপডেট: ১০:০৭, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫
বাজার তদারকিতে অবহেলায় নিয়ন্ত্রণে নেই সবজির দাম মো. খলিলুর রহমান সজল

ঢাকা মহানগরের বাজারে চড়া দামে শাক-সবজি বিক্রি হলেও কৃষকরা কিন্তু সেই ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। এর প্রধান কারণ হলো, কৃষকের হাত থেকে পণ্য যখন মহানগরের বাজার পর্যন্ত আসে, তখন নানা জায়গায় নানা ধরনের চাঁদাবাজি এবং অতিরিক্ত খরচ হয়।

পরিবহনের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত খরচ হয়। মূলত মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও অতিরিক্ত খরচের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়।

একই সঙ্গে বর্তমানে সরকার থেকে বাজার সেভাবে তদারকি করা হচ্ছে না। এতে সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছাত্ররা যখন রাস্তাঘাটের দায়িত্বে ছিলেন, তখন চাঁদাবাজিটা কমে গিয়েছিল এবং এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বর্তমানে চাঁদাবাজির ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে।

এতে পণ্য যখন মহানগরে আসে, তখন তা ভোক্তাদের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যায়।

বাজার তদারকিতে একটু ঢিলেঢালা ভাব তৈরি হয়েছে। আগে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যেভাবে বাজার তদারকি করত, এখন আমি একজন ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ কর্মী হিসেবে মনে হচ্ছে, বাজার মনিটরিংটা অনেকাংশে কমে গেছে। মনিটরিং কমে যাওয়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারের মধ্যে যে দামের পার্থক্য, সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এই মনিটরিং যতক্ষণ পর্যন্ত সব সময়ের জন্য জারি রাখা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এর সুফল পাওয়া যাবে না। মনিটরিং ছাড়া আপাতত বাজারকে ঠিক রাখা সম্ভব হবে না।
ন্যায্যমূল্য ও কৃষকের বাজার স্থাপন : যদি পণ্যের দাম প্রকৃতপক্ষেই একটু বেশি হয়, তাহলে সেই হারে বাড়তি দর কৃষকের পাওয়া উচিত, কিন্তু কৃষকরা তা পাচ্ছেন না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একটি উপায় হলো—একটি কৃষকের বাজার স্থাপন করা। যদি কৃষকদের জন্য পণ্য সরাসরি ওই বাজারে বিক্রি করার সুযোগ থাকত, তাহলে তাঁরা মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিয়ে পণ্য বিক্রি করতে পারতেন।

সে ক্ষেত্রে কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেতেন এবং ভোক্তারাও ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারতেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারও কৃষকের বাজার তৈরি করবে বলেছে, কিন্তু বাস্তবে এই বাজার আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারও কৃষকের বাজার স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।

ভোক্তা অধিদপ্তরের বাজারদরের সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই : জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ‘বাজারদর’ নামে একটি অ্যাপ চালু করেছে। কিন্তু তাদের ওয়েবসাইটে দৈনিক বাজারদরে পণ্যের যে দামটি উল্লেখ করছে, যা বেশ কিছু পণ্যের দাম রাজধানীর খুচরা বাজারদরের সঙ্গে মিল নেই। যেমন—লম্বা বেগুনের দাম বাজারদরে উল্লেখ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজি, যা রাজধানীর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। গোল বেগুনের দাম উল্লেখ করা হয়েছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। কিন্তু রাজধানীর খুচরা বাজারে মানভেদে এই বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

একইভাবে ভোক্তা অধিদপ্তর তাদের ‘বাজারদর’ অ্যাপটিতে অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও দাম কমিয়ে লিখেছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের উচিত সঠিক দামটা তাদের অ্যাপটিতে দেওয়া। এতে ভোক্তারা প্রকৃত দাম জেনে দর-কষাকষি করে জিনিস কিনতে পারবেন। এতে ভোক্তাদের যে অধিকার, সেটা সুরক্ষিত হবে। একই সঙ্গে তাঁদের এই অধিকার বাজারে প্রতিষ্ঠিত হবে।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, ভলান্টারি কনজিউমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়্যারনেস সোসাইটি (ভোক্তা)
অনুলিখন: সজীব আহমেদ

আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।