ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

কাস্টমারদের সেবা দিতে প্রায়োরিটি ব্যাংকিং

মুহম্মদ এহসানুল হক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৩
কাস্টমারদের সেবা দিতে প্রায়োরিটি ব্যাংকিং

ঢাকা: সময়ের সাথে সাথে আমাদের জীবনযাত্রাও দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। পরিবর্তনের এক নতুন ছোঁয়া জীবনের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ায় আমাদের চাহিদা এবং প্রয়োজনের পরিবর্তনও ঘটছে সমান তালে।

যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক বিস্তৃতি এবং ব্যবসায়ীক কাজে দেশ বিদেশে ভ্রমণও এখন বেড়ে গেছে। বিশ্বায়নের এই সময়ে ব্যবসায়ীরা তাই সবসময় প্রাধান্য দেন সহজ ব্যাংকিং পদ্ধতিকে এবং এরই ধারাবাহিকতায় প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

আমাদের দেশীয় ব্যাংকগুলোও তাদের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের এই সুযোগ নিয়ে এখন সামনে এগিয়ে এসেছে। প্রায়োরিটি ব্যাংকিং-এর সহজ মানে করলে যা দাঁড়ায় তা হলো আপনি ব্যাংকের জন্য একটি বিশেষ পরিমাণ ব্যবসা যখন নিয়ে আসবেন, ব্যাংকও তখন আপনাকে কিছু বিশেষ সুবিধা দিতে বদ্ধপরিকর থাকবে।

আরও খুলে বলতে গেলে এমন কিছু সুবিধা আপনার ব্যাংক আপনাকে দেবে যা সাধারণ গ্রাহক ব্যাংক থেকে পায়না। যেমন আপনাকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবেনা এবং আপনি পাবেন গতানুগতিক ব্যাংকিং সেবার বাইরে বিশেষ কিছু সেবা।

যদিও কিছু ব্যাংক আমাদের দেশে এই সুবিধাগুলো দিচ্ছে কিন্তু এখনও প্রায়োরিটি ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রে তাদের আরও অনেক এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের যেসব ব্যাংক এখন প্রায়োরিটি সুবিধা দিচ্ছে তা খুবই সীমিত।

যেমন প্রায়োরিটি কাস্টমারদের যদিও সাধারণ গ্রাহকদের লাইনে দাঁড়াতে না হলেও এইসব গ্রাহকদের জন্য এখনও আলাদা কোন জায়গা নেই যেখানে শুধুমাত্র তাদেরকেই সেবা দেয় হয় বা এর আওয়তায় গ্রাহকের পরিবারের সদস্যদেরও আনা হয়। আমাদের দেশে এই ধরনের গ্রাহকরা এখনও সেই মাত্রার আন্তর্জাতিক মানের সেবা পাচ্ছেন না যা হওয়া উচিত।  

নামের মতোই এই ধরনের ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকরা সাধারণ ব্যাংকিংয়ের নৈমিত্তিক ঝামেলা এড়িয়ে আশা করেন বিশেষ ধরনের সেবা। অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা এমনও চান যেন জায়গাটি একান্তই তাদের হয় যেখানে তারা ব্যাংকের কার্যক্রম বাদেও অন্যান্য কাজও সেরে নিতে পারবেন।

অনেকে এই বিষয়টিকে এমনভাবেও ব্যাখ্যা করেন যে, যেহেতু তারা ব্যাংকের অর্থনৈতিক বিষয়টিতে একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করেন- সেহেতু ব্যাংকেরও উচিত তাদের ঠিক তেমনটাই সেবা দেয়া যা বিদেশের বহু ব্যাংকই দিয়ে থাকে।

প্রায়োরিটি ব্যাংকিংয়ের সেবাগুলো বিমানবন্দরগুলোতেও থাকা উচিত যেখানে বসেই তারা প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে পারবেন। যেখানে থাকবে, সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সুবিধাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। এমন একটি পরিবেশ সেখানে থাকা উচিত যেখানে বসে এইসব বিশেষ গ্রাহকরা স্বাচ্ছন্দ্য পাবেন এবং সেইসাথে তারা প্রয়োজনীয় কাজগুলোর ব্যাপারেও সহযোগীতা পাবেন।

মনে করুন আজ রাতে আপনার একটি বিশেষ পার্টি আছে, যেখানে অবশ্যই আপনাকে দামী কিছু অলঙ্কার বহন করতে হবে। কিন্তু রাতের এই পার্টিতে যাবার সময় নিরাপত্তার বিষয়টি আপনাকে ভাবিয়ে তুলছে। এইরকম সময়ে আপনি যদি প্রায়োরিটি ব্যাংকিং সেবার আওতায় পড়েন তাহলে ব্যাংক আপনাকে এই সমস্যা থেকে মুক্ত করতে একটি বিশেষ সেবা নিয়ে আসতে পারে।

যেমন, ব্যাংকে থাকা আপনার লকারটির পাশেই আপনার জন্য থাকবে একটি ড্রেসিং রুম যেখান থেকে সহজেই আপনি আপনার অলঙ্কার বা দামী জিনিসগুলো পড়ে নিতে পারেন। সেইসাথে প্রায়োরিটি ব্যাংকিং আপনাকে সবসময় অন কল সার্ভিস দিতে প্রস্তুত থাকবে অর্থাৎ যেকোন মুহূর্তে হুট করে টাকার প্রয়োজন পড়লে তারা সেটি আপনাকে পৌঁছে দেবে বা এমন কোন সেবা আপনার জন্য বরাদ্দ থাকবে যা আপনাকে ঝামেলামুক্ত রাখবে।

প্রায়োরিটি ব্যাংকিং-এর ক্ষেত্রে ব্যাংক তার বিশেষ গ্রাহকদের ফিন্যান্সিয়াল কনসালটেন্ট হিসেবেও কাজ করতে পারে বা গ্রাহকের ব্যবসা সংক্রান্ত যাবতীয় সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত থাকবে।

আপনার জন্য একজন বিশেষ কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজার থাকতে পারে যে শুধু আপনার জন্যই কাজ করে যাবে। কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজারের কাজই হবে আপনার যেকোন ব্যাংকিং সমস্যা দূর করা বা ব্যাংকিং কার্যক্রমে সহায়তা করা।

সময়ের সাথে সাথে যেহেতু এই ধরনের গ্রাহকদের ব্যবসায়ীক পরিধিও বৃদ্ধি পেয়েছে সেহেতু দেশ বিদেশে তাদের ভ্রমণের মাত্রাও ইদানিং বেড়ে গেছে। এইসব গ্রাহকদের জন্য ব্যাংকের ট্রাভেল প্যাকেজও থাকতে পারে যেখানে গ্রাহক ও তার পরিবারকে বিদেশে একটি উপভোগ্য ভ্রমণের জন্য সকল রকম সহায়তা প্রদান করা হবে।

হতে পারে সেটি হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে ট্রাভেল প্ল্যান পর্যন্ত এবং অবশ্যই যাবতীয় বিল পরিশোধের বিষয়টি ব্যাংক থেকেই গ্রাহকের হয়ে পরিশোধ করা হবে। ফলে গ্রাহকরা একটি ঝামেলাবিহীন ভ্রমণের সাধ পাবেন সবসময়। এইসব গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ডটিও এমন হওয়া উচিত যাতে করে যেকোন দেশে তার কার্ডটি সচল থাকে।

প্রায়োরিটি ব্যাংকিং-এর আওতাভুক্ত সকল গ্রাহককে এমন একটি সার্ভিস প্রদান করা উচিত যার ফলে ব্যাংকের সাথে তাদের একটি দীর্ঘদিনের সম্পর্ক তৈরী হয় এবং সেইসাথে তারা ব্যাংকিং কার্যক্রমে যেন স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করা।

এইরকম আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিয়েই শুধুমাত্র ব্যাংক গ্রাহকদের মাঝে আগ্রহ তৈরী করতে পারে এবং গ্রাহকরাও এই ধরনের সেবা নিয়ে ব্যাংকের ব্যবসায়ীক চাকাকে সচল রাখতে সহায়তা দিতে পারে।
লেখক মুহম্মদ এহসানুল হক: ম্যানেজার, প্ল্যানিং অ্যান্ড মার্কেটিং, মিডিয়াঅ্যাক্সিস

বাংলাদেশ সময় : ১৫১৫ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৩
সম্পাদনা: সুকুমার সরকার, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।