ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

সাংবাদিক গৌতম দাস হত্যা মামলার রায়, একটি প্রতিক্রিয়া

দীপ আজাদ, সাংবাদিক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১২ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৩
সাংবাদিক গৌতম দাস হত্যা মামলার রায়, একটি প্রতিক্রিয়া

২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বর। পেশাগত দায়িত্ব পালনে জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় ছিলাম।

অফিস থেকে ফোন, সেখান থেকেই ফরিদপুর রওনা দিতে হবে। সহকর্মী গৌতম দাসকে (সমকাল এর নিজস্ব প্রতিবেদক ও ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান) মেরে ফেলা হয়েছে। অফিসের নির্দেশ জাতীয় প্রেসক্লাব থেকেই রওয়ানা হলাম ফরিদপুরের পথে।

মফস্বলে থেকে নিজ কর্মগুনেই গৌতম ঢাকার সাংবাদিকদের কাছে ছিলেন পরিচিত মুখ। সৎ ও সাহসী সহকর্মী হিসেবে ঢাকা অফিসে আলাদা পরিচিতি ছিল তার। সেই গৌতম দাস নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। হাত পা বেধে , গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয় সাংবাদিক গৌতমকে তার অফিস কার্যালয়ে।

দুপুরে ফরিদপুর পৌছে চোখের পানি আড়াল করে নেমে পড়লাম খবর সংগ্রহে। দ্রুতই জানলাম, ফরিদপুর শহরের প্রধান সড়ক মুজিব সড়কের সংস্কার কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে লিখতে গিয়েই খুন হন সহকর্মী গৌতম। সমকালের পাতায় প্রতিদিন গৌতমের খুনিদের মুখোশ উম্মোচিত হতে থাকে। সমকাল প্রকাশক এ কে আজাদ ও সম্পাদক গোলাম সারওয়ার এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। টানা ১৩ দিন ছিলাম ফরিদপুরে। ফরিদপুর সব শ্রেণি পেশার মানুষ জানতেন কেন কিভাবে কারা খুন করেছিল গৌতমকে। খুনিরা ছিল সম্পদশালী ও তৎকালীন সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠজন। খুনিদের সহযোগীরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় মোটরসাইকেল নিয়ে ফলো করতো আমাদের গতিবিধি। থানা থেকে খুনিদের ছাড়াতে গিয়েছিল প্রভাবশালীরা। সেই ছবিও ছাপা হয়েছিল সমকালে। সমকাল সব চাপকে উর্দ্ধে রেখে গৌতম হত্যার ভেতরের বাইরের খবর সে সময় প্রকাশ করেছিল।

গৌতম সর্ম্পকে শুনেছিলাম ফরিদপুরের মানুষের কাছে। ফরিদপুরের মানুষের প্রিয়ভাজন ছিলেন তিনি। গৌতমের হত্যার ঘটনায় কষ্ট পাননি এমন মানুষ খুজে পাইনি শহরে। ফরিদপুরের সাংবাদিকরা কয়েক ভাগে বিভক্ত ছিলেন। গৌতম হত্যার পর তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিচারের দাবিতে পথে নামেন। সবাই এক বাক্যে বলেছেন, গৌতম ছিলেন নির্ভীক গণমাধ্যম কর্মী।

এতবড় গৌড়চন্দ্রিকা সাহসী সহকর্মী সাংবাদিক গৌতম দাস হত্যা মামলার রায় নিয়ে দুটি কথা বলবো বলে। যে রায় শোনার অপেক্ষায় ছিলাম গত ৮ বছর ধরে।
যে নির্ভীক সাংবাদিককে তার লেখনির কারণে হাত পা দুমড়ে মচকে ভেঙ্গে দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হলো তার রায় হলো ৯ জনের যাবজ্জীবন! আমি বিস্মিত হয়েছি। কষ্ট পেয়েছি। হয়েছি আশাহত।

গৌতমের স্ত্রী দিপালি দাসের মত আমিও সন্তুষ্ট নই এ রায়ে। তবে অনেকে বলছেন, সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় এই প্রথম রায় হলো। কিছুটা আত্মতুষ্টি কাজ করছে তাদের মাঝে। এই আত্মতুষ্টি নিয়ে আমি থাকতে চাই না। কারণ ৮ বছর আগে যখন গৌতম হত্যাকা-ের শিকার হন, তখন যেমন ফরিদপুরের মানুষ জানতেন কারা কিভাবে, কি জন্য খুন করেছে, তেমনি এ ঘটনায় পুলিশের তদন্তও ছিল সঠিক। প্রকৃত খুনিরাই সেদিন গ্রেফতার হয়েছিল। চার্জশিট দেয়া হয়েছিল খুনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে।

এমন নির্মমভাবে হত্যার পর এ রায় যেমন গৌতমের স্ত্রী দিপালি দাস মানতে পারেননি। তেমনি সহকর্মী হিসেবে সৎ ও সাহসী সাংবাদিক গৌতমের মামলার রায় আমরাও মানতে পারছি না। অনিয়ম ,দুর্নীতি তুলে ধরে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এমন নিষ্ঠুর হত্যার শিকার হওয়ার পরও গৌতমের পরিবার ও সহকর্মীরা কি সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ- দাবি করলে সেটা কি বাড়াবাড়ি হবে ?

দীপ আজাদ, চিফ রিপোর্টার, বৈশাখী টেলিভিশন

বাংলাদেশ সময় ০০১০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৩
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।