ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

১৭ এপ্রিল : জনযুদ্ধের প্রেরণা

সেলিনা হোসেন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৪
১৭ এপ্রিল : জনযুদ্ধের প্রেরণা

১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাঙালি-বাংলাদেশের জন্য দিবসটি সবিশেষ, গভীরভাবে তৎপর্যপূর্ণ।

২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১৭ এপ্রিল প্রবাসী সরকার গঠিত হয়। এই সরকার গঠন ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের কাঠামোগত রূপায়ণ। এই সরকার যুদ্ধের জন্য মন্ত্রীপরিষদ গঠন করেছিল, সেক্টর গঠন করেছিল এবং একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধকে পরিচালনার প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করেছিল। যে প্রক্রিয়ার শেষ ঘটনা মিত্রবাহিনীর হাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ।

আমার কাছে মনে হয়, এই দিনটি একটি স্বপ্নের দিন। এই দিন কুষ্টিয়ার বৈদ্যনাথতলাকে মুজিবনগর নামকরণ করে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী করা হয়। যে মন্ত্রীপরিষদ গঠিত হয়েছিল, সে মন্ত্রীপরিষদকে গার্ড-অব-অনার প্রদান করা হয়। সরকারের শপথগ্রহণসহ বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ২৬ মার্চের ঐতিহাসিক স্বাধীনতা ঘোষণার ইস্তেহার পাঠ করা হয়। বাংলাদেশকে ১১টি সামরিক সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। প্রবাসী সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ।

এখন স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর এই দিবসটির দিকে ঘুরে তাকালে মনে হয়, তারা আমাদের জন্য স্বাধীনতার স্বপ্নের সম্ভাবনার দরজাটি খুলে দিয়েছিলেন। মুক্তিপাগল মানুষের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আকাঙক্ষা এই প্রবাসী সরকারের দিকে তাকিয়ে বিপুলভাবে গর্জে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে ৭ মার্চের ভাষণ শুনে নিরস্ত্র বাঙালি সেদিন শ্লোগান দিয়েছিল ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর। ’ এই প্রবাসী সরকার গঠনের পরে বাঙালি তার হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল এবং প্রবল লড়াইয়ের মধ্য সাফল্য অর্জন করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল। এই প্রসঙ্গে বলতেই হবে,  বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের ব্যাপক সাহায্য-সহযোগিতা-সমর্থন বাংলাদেশের যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল। আমরা তাদের এই সহযোগিতার কথা ভুলব না।

একটি ঘটনার কথা বলি, ঘটনাটি আমার কাগজে পড়া। কোন এক মুক্তিযোদ্ধা বলেছিলেন। তিনি যখন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ছিলেন, ঘটনাটি সেখানকার। সে ক্যাম্পে কাজ করতো তিব্বতের এক যুবক। তিনি ওই মুক্তিযোদ্ধাকে বলেছিলেন, ট্রেনিংটা ভালোভাবে শিখে নিন। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করবেন। স্বাধীনতা আপনাদের লাভ করতেই হবে। আমি আমাদের নেতা দালাইলামার সঙ্গে তিব্বতের স্বাধীনতার জন্য দেশ থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। আমরা এখন পর্যন্ত স্বাধীনতা পাইনি। আজ আমি ভারতীয় সেনাদের জুতা রঙ করার কাজ করি। আমার প্রার্থনা আপনারা আমাদের মতো নিজেদের পথ হারাবেন না। তিব্বতের একজন যুবকের এই অর্থবহ কথা কত গভীর অনুপ্রেরণামূলক ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য। আমরা যুদ্ধে জিতেছি। বিজয় ছিনিয়ে এনেছি,স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিক হয়েছি।

আমাদের সামনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছিল। আমাদের সামনে প্রবাসী সরকারের নেতৃত্ব ছিল। আমাদের সামনে সেক্টর কামান্ডারদের নেতৃত্ব ছিল। আমাদের জনসাধারণ লড়াই করার জন্য জীবনপণ করে এগিয়ে এসেছিল। আর এসব সম্ভব হয়েছিল বলেই, আমরা গাইতে পারছি, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। ’

১৭ এপ্রিল আমাদের সামনে একটি দিন মাত্র নয়, এই দিন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক মাইলফলক।



লেখক : কথাসাহিত্যিক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।