ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আমাদের ক্ষমা করো সাঈদ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫
আমাদের ক্ষমা করো সাঈদ সাঈদ

তবুও রক্ষা, শেষমেষ আসল অপরাধী ধরা পরেছে। আর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে।

এখন শুধু অপেক্ষা ন্যায়বিচারের। একজন বাবা হয়ে সাঈদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা বা সান্তনা জানানোর ভাষা নেই, সাহসও হলো না। তাই হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশুটির বিদেহী আত্মার কাছেই ক্ষমা চাইছি। আমরা তার জন্য নিরাপদ পৃথিবীর ব্যবস্থা করতে পারিনি । সাঈদ, পারলে আমাদের ক্ষমা করো!

এক সময় যা ভাবাও যেত না, এখন তা যেন নিত্যদিনের বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। নিষ্পাপ একটি স্কুল ছাত্রকে এভাবে অপহরণ ও নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা আমাদের সমাজে ঘটেই চলেছে। আরও পরিতাপের বিষয়, অন্ধকার জগতের পথভ্রষ্ট কোনো অপরাধী নয়, আইনের রক্ষক পুলিশ এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত।

হত্যার শিকার সিলেটের রায়নগর এলাকার বাসিন্দা মতিন মিয়ার ছেলে আবু সাঈদ। বয়স যার মাত্র ৯ বছর।  

বুধবার  (১১ মার্চ) দুপুরে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে সাঈদ অপহৃত হয়। শনিবার (১৪ মার্চ) রাত ১১টার দিকে শহরের কুমারপাড়ার ঝেরঝেরি পাড়াস্থ কনস্টেবল এবাদুরের বাসা থেকেই সাঈদের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় কনস্টেবল এবাদুর, তার সহযোগী কথিত সোর্স গেদা মিয়া ও একজন রাজনৈতিক নেতা এন ইসলাম তালুকদার ওরফে রাকীবকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশের মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে ধরা পড়ে এবাদুর। ধরা পড়ার আগে অপহৃত সাঈদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেয়া, সাঈদের পরিবারকে মুক্তিপণ দিতে রাজি করানো, পরে হত্যা ও লাশ গুমের চেষ্টা- এসব কাজ বেশ দক্ষতার সঙ্গেই করেছিলেন পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান।

পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন মাস আগে সাঈদদের বাসায় সাবলেট থাকতেন কনস্টেবল এবাদুর। পরে তিনি ঝেরঝেরি পাড়ায় বাসা ভাড়া নেন। তবে সাঈদদের বাসায় যাতায়াত ছিল এবাদুরের। সাঈদের মা সালেহা বেগমকে বোন ডাকতেন তিনি। সাঈদও এবাদুরকে মামা ডাকতো। সাঈদ অপহরণের খবর শুনে কনস্টেবল এবাদুর বাসায় আসেন। কান্নাকাটি করে সান্ত্বনা দেন। বুধবার রাতে যখন ৫ লাখ টাকা দাবি করে ফোন আসে, তখন এবাদুরই অপহরণকারীদের টাকা দিয়ে দেয়ার জন্য তাগিদ দেন। এবাদুরের মাধ্যমে প্রথম দফায় দুই লাখ টাকা দেয়া হয়। অথচ এই এবাদুরই যে অপহরণকারী তা কেউ ঘূর্ণাক্ষরেও টের পায়নি।

ভাবতে অবাক লাগে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য এত পাকা অভিনয় করলেন কেমন করে? তিনি তো অভিনেতা হওয়ার প্রশিক্ষণ নেয়নি, বরং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে সে প্রশিক্ষণ তো কোনো কাজে আসলো না। একজন পুলিশ সদস্য অপহরণকারী ও নৃশংস হত্যাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন কেমন করে? তাহলে কি তার প্রশিক্ষণে কোনো ত্রুটি ছিল? নাকি প্রশিক্ষণ শেষে কর্মপরিবেশে এসে তার বিচ্যুতি ঘটেছে? বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে বৈকি?

কারণ এবাদুরই যে প্রথম ধরা পড়েছেন তা নয়, এরও আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সংস্থার অনেক সদস্য নানাবিধ অপকর্মে জড়িয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। ফলে চলমান নানা বিচ্যুতির কারণে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা কমেছে। পুলিশ দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করবে- তেমন ভরসা এখন কম।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সংস্থার সদস্যদের হাতে আগেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে অতীতে হাইকোর্ট পর্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কিন্তু ফলাফল অশ্বডিম্ব। আমরা এর অবসান চাই। অভিযুক্তদের যথাযথ বিচারও চাই।

বাংলাদেশ সময় ১৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।