আমাকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর পর আমার বন্ধুরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে হয়তো ফেসবুকে কিছু দুঃখী স্ট্যাটাস লিখবে। তাদের প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন হবে, হয়তো শোক আর প্রতিবাদ জানাতে কালো করা হবে কিছুদিন কিংবা আমার কোন ছবি ঝুলবে সেখানে।
পত্রিকার উদ্দেশ্য ব্যবসা, কে খুন হলো সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কী খাবে জনতা সেটাই তাদের লক্ষ্য। সুশীলজনেরা স্ট্যাটাস লিখে বলবেন, কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কিছু কারো লেখা ঠিক নয়। টিভিতে টকশো হবে। খাঁটি পেয়ারা বান্দারা বয়ান করবেন, সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে যারা লিখবে, সৃষ্টিকর্তার দুনিয়ায় তাদের জায়গা নাই। প্রাকৃতিক নিয়মে আস্তে আস্তে শোকতাপ স্তিমিত হয়ে আসবে। সবাই ভুলে গিয়ে নিত্যদিনের কাজে মন দেবে, জীবনের ডাক বড় ডাক। একে উপেক্ষা করার শক্তি কারো নেই। মনে মনে অপেক্ষায় থাকবে সবাই, এবার কার নাম ......... হু ইজ নেক্সট?
আমার শূন্যতা নিয়ে ভগ্ন হৃদয়ে পথ চেয়ে বসে থাকবে আমার মা। ঝিরঝির করে বৃষ্টি ঝরিয়ে আকাশ যখন ধরণী পবিত্র করতে ব্যস্ত থাকবে, অসীম নীলের সাথে শুভ্র জলধারা দিয়ে চেষ্টা করবে এই পৃথিবীর পাপ ধুয়ে দিতে, তখন হয়তো কোন টগবগে তরুণ তার শোবার ঘরের জানালার পর্দা সরিয়ে পাশের বাসার ছাদে খোলা চুলে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা লাজুক তরুণীটির দিকে তাকিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকতে বিভোর। অন্য পাশের ফ্ল্যাট থেকে হাঁক শোনা যাবে বৃষ্টির আওয়াজ ভেদ করে,
‘কী, বৃষ্টি দেখেছো আজ? -অফিস যাবো না ভাবছি। একটু খিচুড়ি করো না আজ, সাথে গরম গরম গাওয়া ঘি, বেগুন ভাজা, ডিম ভাজা আর সর্ষের তেলে ইলিশ ভাজা।
এই শুনে আমার মা ডাক ছেড়ে বিলাপ করে কাঁদবেন, অনন্ত আমার অনন্ত! আমার অনন্ত বড্ড বৃষ্টি আর খিচুড়ি ভালবাসতো। দিনের শেষে শুধু সেই মনে রাখে যার ঘর শূন্য হয়, বুক শূন্য হয়, কোল শূন্য হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৫
জেএম