ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

সত্য তবু অন্ধকারে মিলিয়ে যায়!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্পেশালিস্ট এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৫
সত্য তবু অন্ধকারে মিলিয়ে যায়!

একটি একটি করে অজস্র দুর্ঘটনা এসে জমা হয় আমাদের জীবনে। সেগুলো নিছক সড়ক দুর্ঘটনা বা নৌপথের যাত্রীডুবি নয়।

আরো ভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার কিছু রেশও রয়েছে। রয়েছে সেই অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার নানারূপ ফলাফল।

ধরা যাক মানসিক দুর্ঘটনার কথাই। এ প্রকারের দুর্ঘটনার দ্বারা পরিচালিত তার অদৃশ্য শক্তির চলমান অপকর্মগুলোর প্রভাবও রয়েছে আমাদের চারপাশের জীবনে। এই মানসিক দুর্ঘটনার মধ্যে প্রতি মুহূর্তে পড়ছি আমরা। কেউ কেউ নিজের নিভৃত শক্তির সাহায্যে সেই দুর্ঘটনা থেকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসছি। কেউ কেউ আবার দুর্ঘটনায় নিমজ্জিত হয়ে নিজের অপ্রত্যাশিত ধ্বংস ডেকে আনছি।

পরিবারে একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তাকে নিয়ে কত আশা। কত স্বপ্ন। কত সম্ভাবনা দানাবাঁধে মা-বাবাসহ প্রিয়জনের মনে। সেই শিশুটিকে বুকে নিয়ে মা তার জীবনে অপূর্ণতাকে পূর্ণ করার স্বপ্নে বিভোর হতে থাকেন। কিন্তু সেই ছেলেটি বয়ঃসন্ধি কালের শিহরিত দিনগুলোকে অতিবাহিত করতে করতে কখনো কখনো নিজেকে নিয়ে নীরব দুর্ঘটনায় পতিত হয়। যেমন ধরা যাক— ধূমপান দিয়েই যাত্রা শুরু। ইয়াবার গন্তব্যে এসে থামা। আরো প্রচুর অর্থ চাহিদায় সহজ আয়ের পথ হিসেবে মানুষ ধ্বংসের কাজকে বেছে নেয়।

একজন মানুষ হিসেবে অপর একজন মানুষকে ধ্বংস বা খুন করার কলাকৌশল যাদের রপ্ত রয়েছে তারা সেই অনাকাঙ্খিত মানসিক দুর্ঘটনায় পতিত। বিবেকহীন বিকারগ্রস্থ এক ব্যক্তি। তার জন্মক্ষণে তার প্রিয় মায়ের নিভৃত স্বপ্ন এখন শুকনো-মর্মরে এক পাতা। তার শিক্ষাজীবন অথবা তার চারপাশ তাকে আলো দিতে পারেনি। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের কোনো একটি বাক্য তার মনের ঘুমকে ভাঙাতে পারিনি। এই পৃথিবীর কোনো ফুল-পাখি কিংবা অনন্ত আকাশ দেখে সে মুগ্ধতায় এক সেকেন্ডের জন্যও অবাক হতে পারেনি।

তারা এক বা একটি নয়। বহুজনে সংক্রামিত। কূপমুণ্ডুকতা অর্থাৎ কুয়োর ভেতর ব্যাঙ হয়ে তারা আমাদের পৃথিবীর চিরসত্য ও সুন্দর জিনিসগুলোকে মনের অন্ধকার ভাবনার চাপাতি দিয়ে বারবারই কুপিয়ে হত্যা করতে চায়। কখনো কখনো তারা সফল হয়। আর আমরা তখন হেরে যাই! হেরে যায় আমাদের সযত্নে লালিত মূল্যবোধ। মুক্তচিন্তা। অসম্প্রদায়িক চেতনা আর বায়ান্ন-একাত্তরের লক্ষপ্রাণের রক্তে অর্জিত ভাষা ও স্বাধীনতা।

একটি শিশু, একটি কিশোর, একটি তরুণ কিংবা একটি যুবকের হঠাৎ এরূপ মানসিক দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে থাকে। পরিবারের নজর এড়িয়ে সেই দুর্ঘটনা তাকে একদিন অমানুষে পরিণত করে। তাদের এরূপ দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার অর্থই দেশ ও জাতির জন্যে গভীর উদ্বেগের। সঙ্গদোষে তারা তাদের এ অসুন্দর চিন্তাগুলোকে মনে স্থান দিয়ে তাদের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সমাজ, রাষ্ট্র আর পৃথিবীর জন্য তখন তারা গভীর ‘থ্রেডিং’ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের হাতে থাকা গ্রেনেড, ধারালো চাপাতি কিংবা আগ্নেয়াস্ত্রর প্রয়োগ তারা ঘটাবেই প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে। তাদের এভাবে হঠাৎ দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার দায়ভার কার? এই মানসিক দুর্ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করবেই বা কে? কারা?

তারপর তাদের দ্বারা সংগঠিত কোনো ঘটনা বা কোনো অপরাধ কিংবা বড় ধরনের হত্যাকাণ্ড আমাদের সাধারণ মানুষের মন ও মননকে বড় নাড়া দেয়। কিন্তু যাদেরকে নাড়া দেয়ার কথা তাদেরকে নাড়া দেয় না। ওইসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিপরীতে তারা প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেপ্তারের নামে কালক্ষেপনসহ নানা নাট্যদৃশ্যের জন্ম দেয়। আর ওদিকে প্রগতিশীল মানুষগুলো হত্যাকাণ্ডের লাল টকটকে তাজা রক্তে রাজপথের ধুলায় মিশে যেতে থাকে! আসলে, সত্য এভাবেই একসময় অন্ধকারে লুকিয়ে যায়!

 বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।