আমাদের দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা যেমন আশার কথা তেমনি হতাশার কথা হলো শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃহত্ থেকে বৃহত্তর হচ্ছে। কর্মক্ষম লোকের কাজ করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যদি তার কর্মসংস্থান না হয় তাকে বেকার বলা যায়।
শিক্ষার নড়বড়ে ভিত্তিটা সুদৃঢ় করতে হবে
একজন শিক্ষার্থী যে শাখায় বা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী হোক না কেন তাকে ভাষাজ্ঞানটুকু অর্জন করতে হবে। ইংরেজির কথা না হয় বাদ দিলাম, দুঃখজনক হলো আমরা মাতৃভাষা শুদ্ধভাবে বলতে বা লিখতে শিখিনি। আর ‘আগে চাই মাতৃভাষার গাঁথুনি, তারপর ইংরেজি শিক্ষার পত্তন। ’ প্রাথমিক স্তর থেকে তৃতীয় স্তরে অর্থাত্ উচ্চশিক্ষায় সংকট না থাকলেও সমস্যা আছে। দেশের উচ্চশিক্ষার ইস্যু প্রায়ই গণমাধ্যমে আসছে উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের স্বল্পতার দরুণ নয়, বরং গ্রহণযোগ্য গুণের অভাবের কারণে।
দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির মত উচ্চশিক্ষার অর্থাত্ তৃতীয় স্তরের শিক্ষার দাবিও জ্যামিতিক অনুপাতে বেড়েছে। সাম্প্রতিককালে ১২০টি পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডিগ্রি কলেজগুলোতে ৩ মিলিয়ন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করে এবং এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারকে বরাবরই শিক্ষাবান্ধব রূপে দেখা গেছে। বছরের প্রথম দিন ৩০ মিলিয়ন স্কুলপাঠ্য বই বিতরণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহুসংখ্যক বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাক্ষরতার হার ছিল ২৫%-এর মতো, এখন তা ৭০% এ উন্নীত হয়েছে। পাবলিক এবং প্রাইভেট উভয় ক্ষেত্রে তৃতীয় স্তরের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের হার বহুগুণ বেড়েছে। যদিও উচ্চ শিক্ষার্থীর সংখ্যা বহুসংখ্যক বেড়েছে, কিন্তু যে সমস্যাটা জাতিকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে তা হলো গুণগত শিক্ষাবিধান নিশ্চিত করা।
ভাল শিক্ষক ছাড়া একটা ভাল শিক্ষায়তন ধারণাতীত। ভাল শিক্ষক মানে এই নয় যে তিনি শুধু পাঠদানে শ্রেষ্ঠতর হবেন, উপরন্তু তাঁর সময়টুকু গবেষণায় ব্যয় করবেন। বাংলাদেশে মেধাবী ছাত্ররা আর শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশে আগ্রহী হচ্ছে না। তারা উপলব্ধি করেছে যে, জাতি গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকার মর্যাদা খুব কমই দেয়া হয়। তারা এই পেশায় যে বেতন এবং অন্য সুবিধাদি পেয়ে থাকেন তা অন্য প্রাইভেট খাতের চেয়ে অনেক কম। এই বোধকে কিছুতেই আমলে না নিয়ে পারা যায় না।
শিক্ষা প্রদানের জন্য ধার্যকৃত ব্যয়কে সর্বদাই মানবসম্পদ উন্নয়নের ব্যয় হিসেবে দেখা হয়। শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ভারত, যেখানে মানব সম্পদের উন্নয়ন দেশের অন্য সকল ক্ষেত্রের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। একটি অর্থনৈতিক পরাশক্তিরূপে ভারতের উন্মেষ সম্ভব হয়েছে জওহরলাল নেহেরুর সময় হতে মানব সম্পদ উন্নয়নের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে। কেবলমাত্র যোগ্য গুণী শিক্ষকদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। সেই নিয়োগ করা শিক্ষকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনার ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে Higher Education Quality Enhancement Project (HEQEP) একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই ফান্ড উত্সর্গ করা হয়েছে পাবলিক এবং প্রাইভেট পর্যায়ে তৃতীয় স্তরের শিক্ষার মানবৃদ্ধির জন্য। আশা করা যায় এই সরকারের সময়ের শেষদিকে ২০১৮ সালে এই প্রকল্প কার্যকর প্রমাণিত হবে। এই প্রকল্প শুধু শিক্ষণ এবং পাঠদানের গুণগত মানবৃদ্ধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, উপরন্তু অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের অবকাঠামোগত সুবিধাদিও এই ফান্ডের আওতাধীন।
বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছতে হলে অবশ্যই শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন করতে হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নকে সর্বব্যাপীভাবে ও সর্বাত্মকভাবে নিতে হবে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায় থেকে শুরু না করলে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন অসম্ভব। প্রবাদ বলে, ‘গোড়ায় না নোয়ালে বাঁশ পাকলে করে ঠাস ঠাস। ’
মাশহুদা আখতার: প্রভাষক, দর্শন, আঠারবাড়ী ডিগ্রী কলেজ, আঠারবাড়ী, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ। ই-মেইল: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জুন ১১,২০১৫