শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : ‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই?...’ আমাদের শৈশবের অনেক মধুর স্মৃতিময় দিনগুলো সাক্ষী এসব কবিতা। অতীতের সেই দিনগুলোকে পেছনে ফেলে আজ অনেক দূর এসে – হঠাৎ কোনো অবসরে শৈশবের কথা ভাবলেই এমন কবিতার লাইন-শব্দ বড়ই আশ্চর্যভাবে ঘিরে ধরে আমাদের।
ফেলে আসা শৈশব স্মৃতির বাগান থেকে আমরা তখন ফুলের গন্ধ পাই। স্কুল শেষে হৈ চৈ-চেঁচামেচিতে বাড়ি ফেরা, বিকেলের দৌঁড়ঝাপ, সন্ধ্যায় পড়তে বসে ঘুম... এভাবে কতো সব ঘটনা! এসব কবিতায় অনায়াসে পাই মায়ের মায়াভরা কণ্ঠস্বর। পাই, বাবা যেন জোরে জোরে বলছেন, “বল তো – বাবুই পাখিরে ডাকি। ...” পাই ভাই-বোনসহ পরিবারের প্রিয়জনদের কতটা মধুর অমলিন সব স্মৃতির নানা টুকরো।
এভাবেই কয়েক প্রজন্মের পঠিত একটি ছোট কবিতাও কালজয়ী আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। কেননা, ওইসব কবিতার প্রতিটি লাইনের সঙ্গে আমরা যে অতি নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ। বাংলার পাখি, ফুল, প্রকৃতি ওরাও আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা হয়ে ছড়া-কবিতাটিকে জীবন্ত করে রেখেছে জন্ম-জন্মান্তরের উদ্দেশ্যে।
নিজের যতটুকু রয়েছে তাতেই সন্তুষ্টি লাভের প্রচেষ্টায় সত্যিকারের সুখ, স্বস্তি বরাবরই নিহিত– রজনীকান্ত এমন অসাধারণ ভাবনা থেকেই বাবুই (Black-breasted Weaver) আর চড়াইকে ( House Sparrow) ডেকে এনে বসিয়েছেন তার এই কবিতায়। আট লাইনের অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত উদাহরণনির্ভর এ কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে রয়েছে।
আজ রোববার (২৬ জুলাই) রজনীকান্ত সেনের জন্মদিন। ১৮৬৫ সালের এই দিনে তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার সেন ভাঙাবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা গুরুপ্রসাদ সেন ও মাতা মনোমোহিনী দেবীর তৃতীয় সন্তান ছিলেন রজনীকান্ত। তিনি ১৮৮৩ সালে কুচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করেন। ভালো ফলাফলের জন্য প্রতিমাসে দশ রূপি বৃত্তি পেতেন। ১৮৮৫ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এফএ পাস করেন। সিটি কলেজ থেকে ১৮৮৯ সালে বিএ পাস করেন। ওই কলেজ থেকে ১৮৯১ সালে বিএল ডিগ্রি অর্জন করেন।
জীবনের শেষ দিনগুলোতে চরম দারিদ্র্যে জর্জরিত হয়ে ১৯১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রজনীকান্ত লোকান্তরিত হন।
‘স্বাধীনতার সুখ’ নামের কালজয়ী কবিতাটির রচয়িতা তিনি। ঈশ্বরের আরাধনায় ভক্তিমূলক ও দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধ বা স্বদেশ প্রেমই উপমহাদেশের প্রখ্যাত এ কবি, গীতিকার ও সুরকারের কবিতা-গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উপজীব্য বিষয়।
ছেলেবেলার ছড়া-কবিতারা ভালো নেই আজ। আমাদের নতুন প্রজন্মের কণ্ঠে স্থান পাচ্ছে না ওরা। নতুন প্রজন্মরা এখন থ্রিজি প্রযুক্তিতে নতুন নতুন গেমস, কার্টুনে মত্ত। ছড়া-কবিতা পড়ার সময় কোথায় তাদের? আমাদের নতুন প্রজন্মের প্রাণের চিরসতেজতার জায়গাগুলো এভাবেই বিপন্ন হয়ে পড়ছে। তবু বরাবরই প্রত্যাশা করি- ছেলেবেলার ছড়া-কবিতারা এমনি করেই আসুক। হাসুক আমাদের প্রাণে।
আবার পড়ে যাই রজনীকান্ত সেনের স্বাধীনতার সুখ কবিতাটি-
বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
“কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহা সুখে অট্টালিকা পরে
তুমি কত কষ্ট পাও রোধ, বৃষ্টির, ঝড়ে৷”
বাবুই হাসিয়া কহে, “সন্দেহ কি তায়?
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়৷
পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা,
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা৷”
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৫
বিবিবি/এইচএ