ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

রুদ্র যাবার পঁচিশ বছর!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৬
রুদ্র যাবার পঁচিশ বছর!

আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু ও সহপাঠী কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ গত হয়েছে পঁচিশ বছর। আজও পর্যন্ত রুদ্রের কাব্য পরিচয়ের মৌলিক বিশ্লেষণ করে সিরিয়াস কোন লেখা লিখতে পারিনি।

সহপাঠী, বন্ধু ও সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে রুদ্রকে নিয়ে লিখবার অনেকগুলো দায় এমনিতেই এসে পড়ে, কেউ জানতে না চাইলেও নিজেই গুটিয়ে থাকি। আমাদের সময়ের আর সব বন্ধুদের সাথে যখন আলাপ করি দেখি, প্রায় সবার-ই এক দশা! বিশেষ করে যাদের লিখবার হাত ভালো, অনেক দামী সাহিত্যিকদের নিয়ে বড়ো বড়ো বই পর্যন্ত লিখেছেন, তাঁদের অনেকেই আমাকে বলেছেন, “রুদ্রকে নিয়ে কেন জানি লিখতে পারি না, শুধু স্মৃতিচারণ হয়! কী করি বল তো?”  আমি তাঁদের কেমন করে বলি, আমিও তো পারছি না!

কিন্তু পঁচিশ বছর তো অনেক সময়! দুই যুগের বেশি হয়ে গেল, রুদ্রের স্মৃতি কামাল চৌধুরীর ভাষায় ‘অমলিন’-ই থেকে যাবে? তাহলে আমরা যারা পাশ থেকে রুদ্রের কাব্য প্রতিভার স্বাক্ষী আমরা কি হায় হুতাশ করে আবিদ রহমান আর মিনার মাহমুদের মতো বিদায় নেবো?

‘৭৫ পরের কালে রুদ্র কবিতার পাতায় পাতায় লিখেছে অভিমানের কথা, বিষন্ন রক্তপাতের কথা, মর্মঘাতী আত্ম-পরিচয়ের রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টিকালের খারাপ উদ্দেশ্যের কথা। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এক সাথে কাজ করতে হবে সবাইকে, ধর্ম বর্ণ নিয়ে নয়, শ্রমে ঘামে মিলে মিশে একসাথে থাকতে হবে সবাইকে, যেমন আছে বাঙালি হাজার বছর ধরে, না হয় এই দেশ বাঁচবে না, এমন কথাও লিখেছে সে। রুদ্রই প্রথম লিখেছে মাত্রভূমির পতাকাকে কেমন করে মৌলবাদী শকুনেরা খামচে ধরেছে সেই প্রেক্ষাপটকালের কথা, আমাদের স্বাজত্যবোধ কেমন করে মিথ্যা আর ভুল সংজ্ঞার দিকে ঠেলে দিলো পরাজিত রাজনীতি, সেই কথা। এসব তো ইতিহাস। সে ইতিহাস ভালো করে যারা দেখেছে তাঁদের দায় নেই?আমি অবনত ও কুণ্ঠিত, রুদ্রের প্রতি আমার মোহাবিষ্ট আবেগের প্রাবল্যে আমি কিছু লিখতে পারিনি। আমি চেষ্টা করছি, প্রায় প্রতিদিন-ই ভাবি, শুরু করা যাক, হাতে নেই ‘অভিমানের খেয়া’ যার আবৃত্তি হাজারবার শুনেছি নিজের কানে রুদ্রের সামনে বসে, কিন্তু আমারও যেন কোথাও এক অভিমান এসে ভিড় করে, রুদ্রের তো আমাদের ফেলে চলে যাবার কথা ছিল না, দিন রাত তো এক সাথেই থেকেছি!

রুদ্রের রচনাবলী কিনে মানুষকে উপহার দেই, নানা জেলায় ছেলেমেয়েরা লাইব্রেরি করে, ওদের কাছে এক সেট পাঠাই আর বলি রুদ্রকে যেন পড়ে। তপন বাগচীকে ফোন করি, রুদ্রের জীবনীগ্রন্থ তাঁর মাধ্যমে এনে একে ওকে দেই, বলি পড়েন, পড়ে লিখেন, ওই সময়টা কেমন করে ধরে ফেলেছিল রুদ্র, ভালো করে দেখেন। সেদিন আলী রীয়াজকে বললাম, “চেষ্টা করে দেখো না, আমাদের লিখতে পারলে ভালো হতো”।   রীয়াজ বলল, “ওকে  নিয়ে এতো মিথ্যা লেখা হয়েছে, আমদের তো তাহলে সত্যিটা লিখতে হবে’!

কামাল চৌধুরীকে বললাম, “একটা কাজ করে ফেলি সবাই মিলে, রুদ্রকে নিয়ে আমরা একদিন একটা আলোচনা সভা করে ফেলি”!  কাজ হলো, ‘তা হলে চলো একটা খসড়া প্রোগ্রাম করে বসে একদিনে সব ঠিক করে ফেলি, আমাদের সবাই রুদ্রকে নিয়ে কথা বলুক’!  রীয়াজ, শাহজাদী মুক্তি আর ফয়সাল মোকাম্মেল সাথে সাথে রাজী, আমিও রাজী, কিন্তু মনটা খারাপ হলো, আমরা লিখবো কখন?

যাবার আগে আমাদের তো সত্যটা লিখে যেতে হবে।

রেজা সেলিম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ-র সহপাঠী  (১৯৭৭-৮২)

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৬
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।