ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মানুষের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করুন প্রধানমন্ত্রী

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১১
মানুষের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করুন প্রধানমন্ত্রী

পুরোপুরি ব্যর্থ বলে চিহ্নিত যোগাযোগমন্ত্রীর পদচ্যুতির দাবিতে শহীদ মিনারে যারা ঈদ করার ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁরা আপনার ভোটার, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ, প্রিয় প্রধানমন্ত্রী। মানুষের মনের কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।

জেদাজেদি করবেন না। আপনার ভালো হবে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতাসহ এবার ক্ষমতায় যাবার আগে আপনি কিভাবে বিনীতভাবে কথা বলতেন তা একটু মনে করার চেষ্টা করুন। দেশের মানুষ তা খুব পছন্দ করেছে। বিনীত মানুষকে মানুষ পছন্দ-শ্রদ্ধা করে।

এবার ক্ষমতায় যাবার পর মন্ত্রিসভায় আপনি এমন কিছু মুখকে সুযোগ দিয়েছিলেন যা ছিল তাদের ভাবনার অতীত। ভালো একটি লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি তাদের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের ব্যর্থতার কারণে আজ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। মানুষকে জান হাতে এখন ঘরের বাইরে বেল হতে হয়। গোটা পরিবহনখাত জুড়ে চলছে শ্বাসরুদ্ধকর নৈরাজ্য। আগুন জ্বলছে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত বাজারে। দেশের মানুষ কষ্টে আছেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত। তাদের- না কিছু কইতে পারি না কিছু সইতে পারি অবস্থা! তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীরের লাশের পাশে জনতার ঢল নেমেছিল। তাদের ক্ষুদ্র একটি অংশও যদি শহীদ মিনারে চলে আসে, তা সরকারের জন্য বিব্রতকর হবে।

এমন চিহ্নিত গুটি কয়েকের ব্যর্থতার দায় নিতে পারে না গোটা মন্ত্রিসভা। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানের কোন সাফল্যই ভোটার মানুষজনের সামনে নেই। উল্টো আছে মানুষের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য।  বেয়াদবি। এসব ব্যর্থদের ছুঁড়ে ফেলে দিন। শুরু করুন শুদ্ধ আরেকটি নতুন যাত্রা। তেমন একটি নতুন যাত্রার স্বার্থে কখনো কখনো একজন নেতাকে কঠোর হতে হয়। মানুষকে বার্তা দিতে হয়, সরকার তাদের উদ্বেগের বিষয়ে ওয়াকিফহাল-সচেতন। আপনার এখন তেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রধানমন্ত্রী।

বুধবার (২৪-০৮-২০১১) পার্লামেন্টে আপনি একটি আক্ষেপের কথা বলেছেন। ওই আক্ষেপ বলার সময়ও আপনি ছিলেন বিনীত। আপনি বলেছেন, ‘সরকারের সফলতা কেউ বলতে চায় না। একটি ত্রুটি দেখলে সবাই তা নিয়ে কথা বলেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সফলতার কথা কেউ বলতে চায় না। এই মানসিক দৈন্য কেন আমি বুঝি না। গত আড়াই বছরে সব ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা আছে। ’

আপনার কথাগুলো ঠিক আছে প্রধানমন্ত্রী। খুব বিশাল এক জনপ্রিয়তা নিয়ে আপনারা শুরু করেছিলেন। এখন সেটি কোন অবস্থায় আছে তা খতিয়ে দেখার দরকার আছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ভালো কাজ যা করছেন তা আপনাদের ইলেকশন এজেন্ডা। সাংবিধানিক শপথ। ভালো কাজ করলে এর রেজাল্ট পাবেন নেক্সট ইলেকশনে। মন্দ বা ত্রুটির বিষয়ে সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে নেওয়ার দেখার চেষ্টা করুন। উদ্বিগ্ন নাগরিকরা আপনাদের ত্রুটি চিহ্নিত করার লক্ষ্য হচ্ছে আপনাদের সতর্ক করা, সংশোধন করা। কারণ আপনারা বিপদে পড়লে বা বিপথে গেলে তা সবার বিপদ। আপনারা বিপদে পড়লে বা হেরে গেলে যে হেরে যায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বাংলাদেশ। দেশের মানুষ রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসরদের উল্লাসের নৃত্য আর দেখতে চায় না ।

সংসদে আপনি বলেছেন, ‘দু`একটি ব্যর্থতার আওয়াজ তুলে শত্রুর হাতে অস্ত্র তুলে দিলে বাকি অর্জনটুকুও থাকবে না। ’ আপনার এই বক্তব্য বা উদ্বেগের সঙ্গে দেশের মানুষ কি একমত? না এসব ‘দু`একটি ব্যর্থতা’ ঝেড়েমুছে ফেললে শক্তিশালী হবে আপনার সরকার।

পরিস্থিতি একটু গভীরভাবে বোঝার-ভাবার চেষ্টা করুন। দু’তিন-জন ব্যর্থ মন্ত্রীকে সরিয়ে দিলে কি অর্জন ধংস হয়ে যাবে সরকারের? কই আপনার কেবিনেটের মতিয়া চৌধুরী, নূরুল ইসলাম নাহিদদের পদত্যাগের দাবিতো কেউ করছে না! কয়েকজন ব্যর্থমন্ত্রীকে অপসারন করলে তা নিশ্চিত করবে জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা। সরকারের হাত তখন আরো শক্তিশালী হবে। দীর্ঘ অপেক্ষা আর স্বপ্নের যুদ্ধাপরাধী আর গ্রেনেড হামলার নাটের গুরুদের বিচারের জন্য দরকার তেমন একটি শক্তিশালী সরকার।

বাংলাদেশ সময় ১২২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।