বিশেষত শরণার্থীদের দ্বারা অপরাধ সংঘটনের হার বৃদ্ধি, সমাজ-সংস্কৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে না পারা, ভাষাগত ও ধর্মীয় পরিচয়ের ভিন্নতাসহ আরো নানাবিধ সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে স্থানীয় জনগণ পরবর্তীতে শরণার্থীদের ভালোভাবে মেনে নিতে পারেননি। এছাড়া, কেউ কেউ আগন্তুকদের জন্য সরকারের বিপুল অর্থব্যয়কে স্বাভাবিকভাবে নেননি।
প্রকারান্তরে এসব বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের হতাশার প্রকাশ ঘটেছে সাম্প্রতিক জাতীয় নির্বাচনে, যেখানে এক সময়ের ব্যাপক জনপ্রিয় ও শরণার্থীপন্থি বলে পরিচিত এঙ্গেলা মার্কেলের জনসমর্থন অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পেয়েছে। আর বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো উত্থান হয়েছে ডানপন্থি ও তীব্র শরণার্থীবিরোধী দল এএফডি’র (অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ডের)। বিস্ময়করভাবে বুন্ডেস্টাগে (জার্মান পার্লামেন্ট) তাদের আসন সংখ্যা ৯৪ আর শতকরা হিসেবে প্রাপ্ত ভোট ১৩ ভাগের কিছু বেশি যা গত পঞ্চাশ বছরে কখনো দেখা যায়নি।
অন্যদিকে নির্বাচনের পর প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো জার্মানিতে নতুন কোনো সরকার নেই; কারণ হিসেবে সবাই এক বাক্যে ডান-মধ্যপন্থিদের সঙ্গে শরণার্থী ইস্যু নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও শরণার্থীপন্থি রাজনৈতিক দল সিডিইউ’র (ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট পার্টি) চরম মতবিরোধকেই দায়ী করছেন।
সর্বোপরি, প্রায় ১৫ লাখ বাস্তুচ্যুতদের নিয়ে জার্মানি বেকায়দায় রয়েছে। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বুঝতে পেরে সরকার অবশ্য এরই মধ্যে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, যেমন: স্বেচ্ছায় আফগান শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরে যেতে নগদ অর্থ সহায়তা ঘোষণা করেছে। এছাড়া প্রত্যাখ্যাত হওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো অব্যাহত আছে। ধারণা করা হচ্ছে সরকার শরণার্থী বিষয়ক আইন কানুন আরো কঠোর করতে শিগগিরই বিল আনবে এবং প্রদত্ত সরকারি সুযোগ সুবিধা অনেকটাই কমিয়ে দেবে।
শাহাব ইউ আহমেদ: গবেষক, মার্টিন লুথার ইউনিভার্সিটি অব হালে-উইটেনবার্গ
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৭
এমজেএফ/