ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

রোডমার্চ শেষ ডাণ্ডাবেড়ি তত্ত্বে!

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিংএডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১১
রোডমার্চ শেষ ডাণ্ডাবেড়ি তত্ত্বে!

খালেদা জিয়ার বেশ সফল সিলেট রোডমার্চ অতঃপর ডাণ্ডাবেড়ির মতো একটি প্রতিহিংসা তত্ত্বের মাধ্যমে শেষ হয়েছে! সিলেটের জনসভায় ডাণ্ডাবেড়ির তত্ত্বটি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট আত্মীয় ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ! ইনি শেখ সেলিমের বোন রেবা রহমানের ছেলে। তার পিতা ছিলেন এরশাদের দুর্নীতির খাজাঞ্চি বলে পরিচিত প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জুর।

পিতার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে এরশাদ থেকে আত্মসাতকৃত (অভিযোগটি এরশাদের) তেজগাঁও শিল্প এলাকার বিশাল জমিতে প্রতিষ্ঠিত এশিয়াটিক প্রিন্টিং প্রেসসহ অনেক সম্পদের পাশাপাশি বিজেপি নামের ব্যক্তি মালিকানাধীন রাজনৈতিক দোকানটিও পেয়েছেন। নাজিউর রহমানের রেখে যাওয়া বিজেপির চেয়ারম্যান আর ভোলার এমপির পদটিও তার কাছ থেকে কেউ নিতে পারেনি।
 
সেই ব্যারিস্টার পার্থ খালেদা জিয়ার কাছে দাবি করে বলেছেন, তার খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেবার পর তার মন্ত্রিসভার কিছু সদস্যকে ডাণ্ডাবেড়ি পরাতে হবে! ব্যারিস্টার পার্থ হয়তো তার খালাকে ভালোবাসেন অথবা শ্রদ্ধা করেন বলে তাকে ডাণ্ডাবেড়ি পরাতে বলেননি! কিন্তু তার তত্ত্বে অনুপ্রাণীত বিএনপির ইলিয়াস আলী কিছু মন্ত্রীর নামের তালিকাও জনসভায় জনতার সামনে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে দিয়েছেন! ইলিয়াস আলী- যাকে বিএনপির শাসনামলে সন্ত্রাসের অভিযোগে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণ-গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তার তালিকাভুক্ত মন্ত্রী-এমপিরা হলেন- সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংসদ ফজলে নূর তাপস ও মির্জা আজম!
 
খালেদা জিয়া এতে সায় দিয়ে বলেছেন, ‘যেহেতু এটা জনগণের দাবি, তাই কিছুটা হলেও তো আমাদের করতে হবে। ’ বলাবাহুল্য, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলামকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিহিত অবস্থায় আদালতে আনার ঘটনার বদলা হিসাবে প্রস্তাবটি করেছেন ডাণ্ডাবেড়ি তত্ত্বের তরুণ প্রতিভা (!) পার্থ! এই তত্ত্বের আরেক প্রতিভা (!) ডাণ্ডাবেড়ি ইলিয়াস আলী তা সুনির্দিষ্ট আর খালেদা জিয়া তা সমর্থন করেছেন! সর্বশেষ ঢাকায় জামায়াত-শিবিরের জঙ্গি ক্যাডারদের গ্যাস গ্রেনেড ফাইটিংয়ের পর দ্রুত বিচার আইনে আজহারুল ইসলামদের বিচার চলছে। আজহারুল ইসলামকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিহিত অবস্থায় আদালতে আনার বিষয়কে অনেকেই সমর্থন করেননি।
 
খালেদা জিয়া বড় মনের অধিকারী হলে ঘটনার নিন্দা করে বলতে পারতেন, তিনি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে এই ডাণ্ডাবেড়ির ব্যবহার নিষিদ্ধ করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। উল্টো দেশের রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নের দু’জন ব্যক্তিত্ব, সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকেও আগামীতে ডাণ্ডাবেড়ি পরাতে ইলিয়াস আলীর প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন! আগামীতে ক্ষমতায় গেলে দেশের যুব সমাজকে ক্ষমতায় বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন খালেদা জিয়া।

তা তার যুবনেতার সিম্বল ইলিয়াস আলীর তালিকায় মির্জা আজম আর পনের আগস্টের ভয়াল হত্যাকা- থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের নামটিও রাখা হয়েছে! এরশাদ জমানায় জামালপুরের মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ এলাকায় জনসংযোগ সফরে গেলে মির্জা আজমদের বাড়িতে লাটবহরসহ খেতে যেতেন খালেদা জিয়া। কারণ শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া যেই হোন না কেন, অতবড় বহরের লোকজনের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনের মতো বিশাল বাড়ি-স্থাপনা ওই এলাকায় তেমন বিশেষ ছিল না। তা তেমন খাওয়া-দাওয়ার সর্বশেষ আয়োজনে কোনো ত্রুটি হয়েছিল কী? যার কারণে আগামীতে সুবিধামতো মির্জা আজমকেও তিনি তার সামনে ডাণ্ডাবেড়ি পরিহিত বান্দা হাজির দেখতে ইচ্ছে পোষণ করেছেন?
 
আর পনের আগস্টের হত্যাকা- থেকে বেঁচে যাওয়া মামাতো ভাই ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিহিত অবস্থায় নিজের চোখের সামনে হাজির দেখতে কেমন সুখ সুখ আনন্দ অনুভব হবে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের? দুই ভাইয়ের মিলনের তেমন একটি গ্রুপ ছবি কি দেশের মানুষের দর্শনের জন্যে তুলে রাখা হবে? পার্থের বাবা নাজিউর রহমান এরশাদের মন্ত্রী ছিলেন। চারদলীয় জোটে থাকা সত্ত্বেও গত বিএনপি-জামায়াত আমলে তাকে মন্ত্রী করা হয়নি। উল্টো বলার চেষ্টা হয়েছে এরশাদের জমানার দুর্নীতির অভিযোগে তাকে যে গ্রেপ্তার করা হয়নি, তিনি যে জেলের বাইরে থাকতে পারছেন, সেটিই তার বড় পাওয়া।

মনে করা হচ্ছে, বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় যেতে পারলে আর শেখ হাসিনার পরিবারের সংশ্লিষ্টতার গন্ধ নতুন করে না ছড়ালে, পার্থের মন্ত্রিত্ব তাই ঠেকায় কে? এর মাঝে তিনি আবার দিয়ে রেখেছেন বিশেষ নতুনত্বের ডাণ্ডাবেড়ি তত্ত্ব! দেশের রাজনীতিতে এই ডাণ্ডাবেড়ির বিষয়টি আগামীতে অনেক দূর গড়াবে মনে হচ্ছে!

গত নির্বাচনে দেশের তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে দিন বদলের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান সামনে এনে সুফল পেয়েছেন শেখ হাসিনা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি আর ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান তরুণ ভোটারদের তার পক্ষে একচেটিয়া নিয়ে আসে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেশের অসহনীয় বিদ্যুৎ সংকট, ফেইসবুক নিষিদ্ধ, ছাত্রলীগ নামধারী একশ্রেণীর গুণ্ডার তাণ্ডব, শেয়ার কেলেংকারির মতো ঘটনায় শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি তারুন্যের আগ্রহ হোঁচট খায়। যার অনেকটা এর মাঝে পানসে-ফ্যাকাশেও হয়ে গেছে!
 
আর সে নির্বাচনের সময় যেহেতু তারেক রহমানের মতো একজন যুবনেতার মডেল (!) খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিল, তাই তিনি তখন আর আলাদা করে যুব সমাজকে আকৃষ্ট করতে পৃথক কর্মসূচি স্লোগানকে দরকারি মনে করেননি। সিলেট লংমার্চের শুরু থেকে বেগম জিয়া বলছেন, আগামীতে দেশের নেতৃত্ব তিনি যুব সমাজের হাতে তুলে দেবেন? সিলেটে বিষয়টি আরও খোলাসা করে বলেছেন, যুবকরা আগামীতে দেশ চালাবে। তার মতো সিনিয়ররা শুধু উপদেশ বিলাবেন!

বলাবাহুল্য, খালেদা জিয়ার এই যুবনেতাটির নাম তার বড় ছেলে তারেক রহমান। আর তার নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার মডেলটিও দেশের মানুষের কাছে নতুন নয়! বিএনপি-জামায়াতের লাস্ট জমানায় হাওয়া ভবনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সম্মতিতে অথবা তার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে প্যারালাল একটি সরকার তারেক চালিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের মতো দু’একজনের সঙ্গে সবসময় পেরে না উঠলেও স্বরাষ্ট্র ও গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু মন্ত্রণালয় দাপটের সঙ্গে চালিয়েছে হাওয়া ভবনের সরকার! দুই ভাইয়ের ভাগাভাগিতে যোগাযোগ আর টেলিকমিনিউকেশন দেখতেন কোকো। এর জন্যে তখন তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা কী পরিমান আয়-রোজগারের মুখ দেখেছেন, তা তার মতো কেউ জানে না!
 
তারেক রহমানের আর্শীবাদে তখন সিলেটে সাইফুর রহমানের কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বে বিএনপির পাল্টা গ্রুপের সৃষ্টি করা হয়। সারাদেশে গড়ে ওঠে হাওয়াভবনের আদলে বিশেষ কিছু ভবন-বাড়ি। যেগুলো স্থানীয়ভাবে টেন্ডার থেকে শুরু করে সব সরকারি কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করত। আজকের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়ির নাম তখন হাওয়া ভবনের আদলে হয়ে গিয়েছিল বাতাস ভবন! তারেকের বন্ধু মামুনের ভোলার বাড়ির নাম শুধু না, ভোলায় মামুনের দাপুটে বোন-ভগ্নিপতির নাম হাওয়া আপা, হাওয়া দুলাভাই হয়ে গিয়েছিল! আর বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা ছাড়াও খুঁটি স্থাপন ব্যবসার বিশাল সাফল্যে (!) দোস্তের নাম হয়ে যায় খাম্বা মামুন!
 
একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনা, চুরির মামলায় এরশাদের সাবেক পত্মী বিদিশার জেলসহ আরও অনেক কিছু সেই হাওয়া ভবনের সৃষ্টি! প্যারালাল সরকার হাওয়া ভবনের কর্ণধার তারেকের আমেরিকা সফরে ডিজিএফআইয়ের প্রধানসহ অনেককে সঙ্গে যেতে হয়। এমন নানান দুর্গন্ধে গত নির্বাচনে পরাভূত হবার পর বিএনপিকে আরও অনেক কিছুর মতো হাওয়া ভবনও বিলুপ্ত করতে হয়! সরকারের নানা ব্যর্থতায় অবশ্য দেশের মানুষ সেসব অনেক কীর্তিও এর মাঝে ভুলে গেছে!

তা সাবেক হাওয়া ভবন কেন্দ্রীক তরুণ নেতৃত্বের অভিজ্ঞতাতো দেশের মানুষের সামনে আছে। খালেদা জিয়ার ভবিষ্যত তরুণ নেতৃত্বের ফর্মূলাটি কী? তা তিনি দেশের মানুষের সামনে পরিষ্কার না করলেও আতংকের ধারনাটি পাওয়া যায়।
 
সিলেটের জনসভায় আরেকটি যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন খালেদা জিয়া! তার স্বামী রেডিওতে ঘোষণা দিয়েছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের। আর স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবিরকে সঙ্গে নিয়ে খালেদা এ যুদ্ধ  দেশের কাদের বিরুদ্ধে? শহীদ পরিবারের সদস্যরা যারা স্বজনদের ঘাতকদের বিচারে সরকারকে বাধ্য করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে? খালেদা জিয়া প্রায় একটা কথা বলেন, তাহলো জামায়াত আওয়ামী লীগের পক্ষে গেলে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হয়ে যায়। বিপক্ষে গেলে হয় স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি! তা জামায়াত আওয়ামী লীগের পক্ষে বা বিপক্ষে যেখানে থাকুক তাদের কোন পক্ষের মনে করেন খালেদা জিয়া? যে পক্ষেই থাকুক তাতে কী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের সশস্ত্র বিরোধিতার ইতিহাসটি বদলে যায়? না সম্ভব?
 
আওয়ামী লীগের সব খারাপ কাজেরইতো নিন্দা করেন খালেদা জিয়া, তাই না? জামায়াতকে যে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে, তারও আগে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি আর শেখ হাসিনা যে সঙ্গে নিয়েছিলেন, সেসব যে ভালো কোনো দৃষ্টান্ত বা নজির ছিল না তাতো আজ প্রমাণিত। তা শেখ হাসিনার এই জামায়াত বিষয়ক খারাপ কাজটিকে তিনি কেন এখনও আঁকড়ে আছেন? দেশের মানুষকে আঁকড়ে থাকতে বলছেন? বাংলাদেশের বিরোধিতাকারী চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে তিনি জাতীয় পতাকা দিয়েছেন। আগামীতে আবার ক্ষমতায় যেতে পারলে সে নিয়তও পোষণ করেন। আবার দেশের মানুষকে বোকা সাজানোর নিয়তে বলেন, আমরা বিচার চাই। তবে বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের! তিনিওতো বাংলাদেশের লোকাল নেত্রী। তার শাসনামল কী আন্তর্জাতিক মানের হয়েছিল? তা সবকিছু লোকাল, শুধু এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা আন্তর্জাতিক মানের নিশ্চিত করতে চাইছেন কেন খালেদা জিয়া?
 
আগে বলতেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হলে আগে আওয়ামী লীগের ঘরেরগুলোর করতে হবে। সিলেটে বলেছেন, আগে করতে হবে রক্ষীবাহিনীর হাতে নিহত চল্লিশ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মী হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার। এরপর কী বলবেন মোনায়েম খানসহ মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের হত্যার দায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার করতে হবে আগে? এভাবে তারও আগে তারও আগে করতে করতে কারবালার ময়দানে এজিদ বাহিনীর হাতে ইমাম হোসেন (রাঃ)’র বিচার করতে হবে আগে?

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের চল্লিশ বছরের অমীমাংসিত বিষয়টি আটকে দিতে, পণ্ড করতে এমন বাহানা আর কত?

রক্ষীবাহিনীর হাতে নিহতদের বিচারের বিষয়টি এলে তো কান টানতে মাথা আসবে। তা তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী উনি এসব বিচারের বিষয়ে কী করেছিলেন? রক্ষী বাহিনী আর সিরাজ সিকদার নিয়ে তো রাজনীতি কম করা হয়নি বা এখনও কম হচ্ছে না! কিন্তু সেই তিনবারের প্রধানমন্ত্রীত্বের কোনো একবার সে বিষয়ক বিচারটির কোনো উদ্যোগ চেষ্টাও কী নেওয়া হয়েছে? রক্ষীবাহিনীর হাতে নিহতের বেশিরভাগ ছিলেন জাসদ অথবা সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টির সদস্য। জাসদের নেতা কর্নেল তাহেরকে প্রহসনের মামলায় কে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে?
 
না ক্ষমতায় গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ সিকদারকে জাতীয় বীর হিসাবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়েছে? সিরাজ সিকদারের অনুসারীদের কী বিএনপি আমলে চরমপন্থী সন্ত্রাসী সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে র‌্যাব দিয়ে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়নি? সিরাজ সিকদারের পর্যায়ের আরেক নেতা মোফাখখার চৌধুরীকে ঢাকা থেকে র‌্যাবকে দিয়ে ধরিয়ে কুষ্টিয়ায় নিয়ে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে কোন সরকারের আমলে? দেশের মানুষের সঙ্গে এসব মিথ্যা ভাষণ আর কত?
 
সিলেটের ভাষণে খালেদা জিয়া তিনি আরও স্পষ্ট করেছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তিনি করতে দেবেনই না। যে কোন মূল্যে এ বিচার ঠেকাবেনই! এখন সরকার এ বিষয়ে কী আরও সক্রিয় কী করবে না করবে সে পদক্ষেপ তাদেরই স্পষ্ট করতে হবে। আড়াই বছর ধরে এ বিচার নিয়ে ঢিলেমি চলছে। ধরতে গিয়ে যদি মরেটরে যায়, সে ডরে আড়াই বছরেও যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদা গোলাম আজমকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। অথচ এই গোলাম আজমকে রক্ষা করতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামসহ ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তার সে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায়ই শহীদ জননীকে মরতে হয়েছে!
 
আড়াই বছরে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র পিরোজপুরের দেলু রাজাকার তথা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর একাত্তরের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের আমলনামা জমা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে! দেশের শহীদ পরিবারের সদস্যরা পুরো বিষয়টি নিয়ে আর কোনো ঢিলেমি দেখতে চায় না। দ্রুত শেষ করতে হবে বিচার। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের লোকাল নেত্রী খালেদা জিয়া আর ক্ষমতায় যেতে পারলে আন্তর্জাতিক মানের নামে এই বিচার প- করার নিয়ত করে ফেলেছেন। শুধু তাই না এই বিচারের উদ্যোগ নেবার অপরাধে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তিনি! অতএব যা করার করতে হবে দ্রুত। ডু অর ডাই।
 
ফজলুল বারী:  সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।