মেহনতি মানুষের আত্মত্যাগে ন্যায্য অধিকার আদায়ের অবিস্মরণীয় এ দিনে ভর করেছে নতুন আতঙ্ক, চাকরি হারানোর শঙ্কা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) আশঙ্কা করছে, করোনার কারণে বিশ্বের অর্ধেক কর্মী কাজ হারাতে পারে।
আইএলও এর হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীতে মোট কর্মী ৩৩০ কোটি। তার মধ্যে ২০০ কোটিই অসংগঠিত ক্ষেত্রে। করোনার জেরে দুনিয়া জুড়ে কল-কারখানা, অফিস দীর্ঘদিন বন্ধ, উৎপাদন নামমাত্র। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা অজানা। খুচরো ব্যবসা, উৎপাদন শিল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবল সমস্যায় ৪৩.৬০ কোটি সংস্থা। খাবি খাচ্ছে ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলো। অথচ সারা দুনিয়াতেই বেশির ভাগ কর্মী কাজ করেন এই ধরনের সংস্থায়। তাই এদের চাকা পুরোদমে না-ঘুরলে, কর্মীদের কাজ হারানো ক্রমশ বাড়বে।
সংস্থাটির আশঙ্কা, করোনার সুনামি কাজ কেড়ে নিতে পারে ১৬০ কোটি জনের। যা মোট কর্মীর প্রায় অর্ধেক। সব থেকে কঠিন পরিস্থিতির মুখে অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীরা। যাদের অনেকে কাজ হারিয়েছেন। আরও অনেকে হারানোর মুখে।
বাংলাদেশেও করোনার কারণে দেশের অনানুষ্ঠানিক খাতের সোয়া ৫ কোটি শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা এখন হুমকির মুখে পড়েছে। সীমিত পরিসরে পোশাক কারখানা খুললেও সেখানকার শ্রমিকরা আছেন স্বাস্থ্যঝুঁকি ও চাকরি হারানোর শঙ্কায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ- ২০১৭ অনুযায়ী, দেশের ৮৫ শতাংশ কর্মজীবী মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। তারা দিন আনে দিন খায়। দেশের মোট ৬ কোটি ৮ লাখ মানুষ মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন। এর মধ্যে ৫ কোটির বেশি দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন, যেখানে কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই।
দেশের অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমজীবী লোকের মধ্যে কৃষি খাতে আছেন ২ কোটি ৩০ লাখ ৪৮ হাজার নারী-পুরুষ। শিল্প খাতে কাজ করেন ১ কোটি ১১ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ। আর সেবা খাতে আছেন প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ।
করোনার প্রকোপ বাড়ার পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন খাত। লাখ লাখ কারখানা শ্রমিকে এখন বেকার। দেশে ছোট, বড়, মাঝারি ও অতি ক্ষুদ্র মিলিয়ে ৪৬ হাজার ২৯১টি কারখানার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছোট কারখানা ২৩ হাজার ৫৫৭টি। সারাদেশে এসব ছোট কারখানায় কাজ করেন ১১ লাখ ২৭ হাজার ৮৪১ জন শ্রমিক। এছাড়া গত দেড়মাস ধরে রিকশা ও গাড়িচালক, দিনমজুর, দোকানদার, ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা কর্মহীন। পরিকল্পনা কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান অবস্থায় দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকা প্রায় অর্ধকোটি মানুষ আবার গরিব হয়ে যেতে পারে।
তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে পাঁচটি প্যাকেজে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি বৈশ্বিক মহামন্দা অবস্থা সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয় ১ শতাংশ কমে গেছে। শেয়ারবাজারে ওপর প্রভাব পড়েছে। বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কমে গেছে। করোনার প্রভাব প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে পড়তে পারে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়তার পদক্ষেপ হিসেবে তাৎক্ষণিক করণীয়, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সরকারি ব্যয়বৃদ্ধি ও কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানান। এর ফল নিম্নবিত্ত মানুষ পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রমিক-কর্মচারী বা অন্যান্য কর্মজীবী মানুষ যাতে কর্মহীন না হয়ে পড়েন, সে জন্য আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ, ঋণসুবিধা দেওয়া ও সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপকতা বাড়ানোর কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২০