বর্তমানে লকডাউন তুলে দেওয়ার পর দোকান-পাট খুললেও, লম্বা একটা সময় তাদের ঘরে বসেই কাটাতে হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর কিছু দোকান খোলা থাকার পরও সংক্রমণ আতঙ্কে অনেকেই বের হননি ঘর থেকে।
পুরো বিশ্বেরই যখন এ অবস্থা, তখন ‘নতুন স্বাভাবিকতা’ বা ‘নিউ নরমাল’ হিসেবে নামকরণ করা হলো এ সময়টিকে। এবং এই নতুন স্বাভাবিকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, বা সবেধন নীলমণি হয়ে উঠলো অনলাইন প্লাটফর্ম।
এই প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে লেখাপড়া থেকে শুরু করে অফিস, সবই চলছে। সচেতনতা থেকে শুরু করে সহযোগিতা- তাতেও মূল উপজীব্য এই অনলাইন, বা আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে সোশ্যাল মিডিয়া। গত কয়েক মাসে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে তরুণরা সাধারণ মানুষের উপকারে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু গড়পরতা অনেক উদ্যোগের ভিড়ে কিছু থাকে, যা বিশেষভাবে মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়। উদ্যোগের উদ্দেশ্য, কর্মকৌশল, কিংবা নিষ্ঠা, এর যেকোনোটিই হয়ে উঠতে পারে জনসাধারণের কাছে সাধারণ থেকে বিশেষ।
তেমনই এক উদ্যোগ ছিলো ‘ডিজিটাল ঈদ বাজার’। লকডাউনের কারণে ঈদের আনন্দ থেকে যেন বঞ্চিত হতে না হয়, তাই তরুণদের সংগঠন টীম চিটগংয়ের সহযোগিতায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান লীড লাইফ উদ্যোগ নেয় এই ঈদ বাজারের। বিক্রয়, কর্মসংস্থান, অনুদান- এই তিনের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এ উদ্যোগ।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা যাতে নিজেদের পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে তাদের পুঁজি সুরক্ষিত করতে পারে এবং ক্রেতারাও ঘরে বসেই নিজের এবং পরিবারের সকলের জন্য ঈদের পোশাক থেকে শুরু করে ঈদের খাবার-দাবার তৈরির যাবতীয় উপকরণ ক্রয় করতে পারে, তা’ই ছিলো এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। সেইসঙ্গে কিছু ডেলিভারি পার্সন বা রাইডার যারা লকডাউনের কারণে কাজ পাচ্ছিলেন না তাদের কর্মসংস্থান ও অর্থ আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা এই ইভেন্টের অন্যতম একটি লক্ষ্য। কিন্তু এ উদ্যোগের বিশেষ দিকটি হলো, এখানে বিক্রি হওয়া প্রতিটি পণ্যের লাভের অংশ ব্যয় করা হয়েছে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সহায়তায়।
ডিজিটাল ঈদ বাজারের মূল সমন্বয়ক ফাতেমা ফাহিমা বলেন, ‘আমাদের এই উদ্যোগের সঙ্গে ছিলেন বেশ কিছু ব্র্যান্ড ও বিক্রেতা যারা করোনা সংকটকালীন ঈদের আগমুহূর্তে বেচাকেনা ও মার্কেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েন। কর্মহীন হয়ে পড়া রাইডাররা যোগ দেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন টিম চট্টগ্রামের তরুণরা ঝাঁপিয়ে পড়েন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যার ফলে প্রচুর সাড়া পাই আমরা। ’
তিনি জানান, ২৫ জন বিক্রেতার প্রায় দু’শ অর্ডারে, চার লক্ষ টাকা মূল্যমানের পণ্য বিক্রয়ে সহায়তা পেয়েছে ৫০’র বেশি অসহায় পরিবার। এমন অভূতপূর্ব সাড়ায় অভিভূত আয়োজকরা। ফেসবুক পেইজ ও ইভেন্টের মাধ্যমে আয়োজিত এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে ছড়িয়ে দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আরেকজন সমন্বয়ক মাজহারুল সাজু।
সাধারণ ক্রেতারা যাতে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে ঘরে বসে কেনাকাটা করেন এবং এই ঈদ বাজার থেকে কেনাকাটার মাধ্যমে এ উদ্যোগে অবদান রাখতে পারেন সে আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে পুরো রমজান জুড়েই সরব ছিলেন টীম চিটাগংয়ের কতিপয় স্বেচ্ছাসেবী তরুণ। বেশ সাড়াও পেয়েছেন তারা। এই উদ্যোগের মাধ্যমে একইসঙ্গে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের উপকারে আসতে পারাটা ছিলো তাদের কাছে মুখ্য বিষয়।
এ তরুণদের একজন মো. জামান মিরাজ। তিনি বলেন, ‘টীম চিটাগংয়ের ‘ফুড ফর অল’ কর্মসূচি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে কাজ করছি। অনেকেই নিয়মিতভাবে এতে অর্থসহায়তা করে। ডিজিটাল ঈদ বাজারের কনসেপ্টটি সম্পর্কে জানার পর আমরা এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ি। যাতে অনেক বেশি মানুষ কেনাকাটা করার মাধ্যমে অসহায় মানুষের কল্যাণে আসতে পারে। আমরা আরও বেশি মানুষকে সহায়তা করতে পারি।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
এসি/টিসি