ঢাকা: ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। মাত্র ১৪ জন তরুণ নিয়ে গঠিত প্রথম ছাত্রলীগ।
ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা আন্দোলন থেকে স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলনসহ সকল লড়াই সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে উপমহাদেশের প্রাচীন এ ছাত্র সংগঠন। অর্জনের পাশাপাশি বিতর্কও সঙ্গী হয়েছে অনেক সময়। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সম্প্রতি গঠিত নতুন নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশাও বেড়েছে সংগঠনের নেতাকর্মীদের। ৪ জানুয়ারি সবকিছুই বিবেচনায় নিয়ে ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে রাঙাতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ছাত্রলীগ।
এ দিন ভোর থেকেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দৃশ্যমান, লক্ষ্য এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ" এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কার্যক্রম শুরু হবে। সকাল ছয়টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আটটায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সকাল সাড়ে আটটায় ঐতিহ্যবাহী কার্জন হলে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এরপর বিকেল ৩টায় শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।
শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে। যেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ৫ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর লক্ষ্য জানাতে গিয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, দেশের প্রতিটি প্রজন্মে, প্রতিটি তারুণ্যে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অনুভূতিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শ্রেষ্ঠতম স্থানে অবস্থান করেছে এবং আগামীতেও করবে। তাই, ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশরত্ন শেখ হাসিনার পরিকল্পিত 'স্মার্ট বাংলাদেশের' নেতৃত্ব দিবে ছাত্রলীগ, ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে এটিই আমাদের সংকল্প।
৭৫ বছরে সংগঠনের বিস্তৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ লাখো নেতাকর্মীর সংগঠন। সাংগঠনিকভাবে ওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের ৫০ লাখ নেতাকর্মী রয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কোটি শিক্ষার্থীদের ভরসা।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নিয়মিত সম্মেলনের প্রত্যাশা অনেকের। এ বিষয়ে আপনাদের পদক্ষেপ কি হবে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, আমরা জবাবদিহিতার কথা বলেছি, কার্যকর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কথা বলেছি, তৃণমূলের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা বলেছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতি সাংগঠনিক সংস্কৃতি অনুযায়ী প্রচলিত হবে, কোনো ধরনের উপদলীয় রাজনীতি করার সুযোগ আমরা হতে দেবনা। ঐক্যবদ্ধ ছাত্র জনতার দুর্গ হিসেবে কাজ করবে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য, স্মার্ট ক্যাম্পাস বিনির্মাণ করার জন্য, দক্ষ গ্র্যাজুয়েট হওয়ার জন্য এবং বিশ্বের শিক্ষার মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত করার জন্য আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করে যাবো।
ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে গত কয়েক কমিটি নেতাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল তৃণমূল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কমিটি বাণিজ্য, যোগ্যদের মূল্যায়ন না করা, আর্থিক সুবিধাগ্রহণসহ নানা অভিযোগ ছিল নেতাদের বিরুদ্ধে। তবে এবার ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়াতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আশা করছেন নতুন নেতৃত্বের কাছ থেকে তারা তাদের যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন পাবেন।
অপরদিকে বছরব্যাপী কর্মসূচী ঘোষণা করায় উজ্জীবিত সংগঠনের কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী মানেই প্রত্যেকটা ছাত্রলীগ কর্মীর জন্য ঈদের আনন্দের মত। এবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্লাটানাম জয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে তাই এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অন্যান্য প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর চেয়ে আলাদা। প্রধানমন্ত্রী যাচাই-বাছাই করে গত কিছুদিন আগে যে নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন আশা করি তারা তাদের দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করবে এবং তাদের হাত ধরে আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজয় নিশ্চিত করবে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ। ইতোমধ্যেই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বছর ব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে পুনর্নির্বাচিত করার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সর্বাত্মক ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ছাত্রদের পাশে থেকে কাজ করে আসছে। এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বের হাত ধরে শিক্ষার সর্বোন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন রানা বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস ঐতিহ্য সব সময় গৌরবের, ইতোমধ্যেই জননেত্রী শেখ হাসিনা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের হাত ধরে যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং ভবিষ্যতে আরও সুন্দর ও যুগোপযোগী কর্মসূচি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সব সময় একটি শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাস বিনির্মাণে সব সময় তৎপর রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২৩
এসকেবি/এসএম