সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন নিয়ে ধুম্রজাল তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুমোদিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা ঘোরাফেরা করলেও দলের দায়িত্বশীল পদে থাকা নেতারা কোনো কপি হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরতে থাকা নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়েও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কমিটিতে নাম নেই আগের কমিটির অন্তত দেড় ডজন নেতার। জেলার রাজনীতিতে অবস্থান না থাকা ডজনখানেক নতুন মুখ কমিটিতে স্থান পেয়েছে। এসব নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের প্যাডে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘোরাফেরা করছে। বেশ কয়েকটি স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে একাধিক স্ট্যাটাস ও গণমাধ্যমে সংবাদও হয়েছে।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, ফেসবুকে প্রচারিত কমিটিই কেন্দ্র অনুমোদিত। সেখানে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকায় সংশোধনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কমিটি থেকে সাবেক দু’জন সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বাদ পড়েছেন অন্তত দেড় ডজন নেতা। নতুন বেশ কিছু নাম সংযোজন করা হয়েছে যারা জেলায় সম্পূর্ণ অপরিচিত মুখ। জেলার রাজনীতিতে কোনো অবদান নেই ঢাকায় অবস্থান করা এমন নেতার নাম এসেছে বেশ কয়েকটি। বিগত কমিটিতে থাকা দু’জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকেও বাদ দেওয়া হয়েছে। আগের কমিটির সহ-সভাপতি মোজাম্মেল হক তালুকদারকেও কমিটিতে রাখা হয়নি। এছাড়া কমিটিতে স্থান হয়নি জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন খান চিনুর। আবার একই পরিবারের একাধিক নেতা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
সাংবাদিক হত্যা মামলার প্রধান আসামি হালিমুল হক মিরু কমিটিতে জায়গা করে নিলেও স্থান হয়নি সাবেক সংসদ সদস্য সেলিনা বেগম স্বপ্নার। সহ-সভাপতি পদে জৈষ্ঠ্যতা লঙ্ঘণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত কমিটির সহ-সভাপতি মোজাম্মেল হক বকুল সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘পদের জন্য এদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘুরে কমিটিতে আসতে হবে এ কাজটিতো আমি করতে পারি না। আমি দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ উপেজলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছিলাম। আমাকে ওরা সদস্যও রাখবে না। মানে আমাকে আর রাজনীতিতে রাখতে চায় না। কিন্তু তারা চাইলেই ওরা আমাকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না ‘
আগের কমিটির সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি ছিলাম। তখন কেউ আওয়ামী লীগের নাম বলতে পারেননি। কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমাকে একটা মেম্বরও রাখেনি! অথচ যাদের জীবনে কোনো দিন দেখিনি, নামও শুনিনি তারা বড় বড় পোস্ট হোল্ড করছেন। কেন্দ্র থেকে সুন্দর সুন্দর কথা বলে, কিন্তু জেলা ও উপজেলায় কী করছে সেটা আল্লাই দেখছে। আমার এখন বলতেই লজ্জা করে। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আছি, ভোট দিয়ে যাব ব্যস। ’
গত কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান মাখন বলেন, `আমি আগের কমিটিতে ছিলাম। কী কারণে এবার আমাকে বাদ দেওয়া হলো বুঝতে পারছি না। শুধু আমাকে নয়, বেলকুচি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল হামিদ আকন্দকেও কমিটি থেকে অজ্ঞাত কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে।
উল্লাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, ‘আমাকে কী কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে জানা নেই। ’
সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম হোসেন আলী হাসান তার পছন্দের লোকজনকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, ‘জেলা থেকে একটি কমিটি কেন্দ্রে দেওয়া হয়েছিল। ফেসবুকে যে কমিটি দেওয়া হয়েছে, সেটা অনুমোদিত নয়। ওই কমিটিতে বেশ কয়েকজন বাদ পড়েছেন, কোথাও ডাবলও হয়েছে। সেগেুলো সংশোধন করে খুব শিগগিরই জেলা কমিটি অনুমোদন দেবে কেন্দ্র। ’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোটেক কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, ‘আমি কমিটির তালিকা হাতে পাইনি। এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। কমিটির তালিতা আসার পরই বলতে পারব।
আওয়ামীলীগের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল বলেন, ‘কমিটি অনুমোদন হয়েছে। তবে কমিটি নিয়ে জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কিছু অভিযোগ আছে। শুনেছি তাদের দেওয়া বেশ কিছু নাম বাদ পড়েছে। এ বিষয়ে পার্টির সেক্রেটারি সিদ্ধান্ত নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
এসআরএস