ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ইবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে বাসচালককে পেটানোর অভিযোগ

ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৫ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
ইবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে বাসচালককে পেটানোর অভিযোগ

ইবি: কুষ্টিয়া-খুলনা রুটে চলাচলকারী গড়াই পরিবহনের এক বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বনি আমিনসহ চার থেকে পাঁজজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে প্রায় দেড় ঘণ্টা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ বাসের শ্রমিকরা।

এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও পথচারীরা।

বুধবার (৩১ মে) দুপুর পৌনে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী বাসচালক তোফাজ্জল হোসেন সবুজ।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসে আসার উদ্দেশ্যে ইবির শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বনি আমিন কুষ্টিয়া থেকে গড়াই বাসে উঠেন। বটতৈল থেকে তিনজন মেয়ে খুলনা যাওয়ার জন্য সে বাসে উঠলে তাদের বসাতে বনি আমিনকে সিট ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন বাসচালক। এ সময় বনি আমিন চালককে বলেন, ‘ধরে ধরে পথ থেকে লোক নিয়ে আসবেন আর আমরা সিট ছেড়ে দেই? এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে বনি আমিনের সঙ্গে বাসচালক, সুপারভাইজার ও হেলপারের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে বাস ইবি ক্যাম্পাস গেটের সামনে পৌঁছালে বনি আমিন, জামিল ও তার চার পাঁচজন বন্ধু মিলে বাসচালককে মারধর করতে থাকেন। এ সময় বাসচালককে পকেটে থাকা ১৫ হাজার টাকাও নিয়ে নেন তারা। এছাড়া গাড়ির সুপারভাইজার ও হেলপারদেরও মারধর করা হয়।

এ ঘটনার প্রতিবাদে শেখপাড়া বাজারে রাস্তায় আড়াআড়িভাবে বাস রেখে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ বাস মালিক সমিতির শ্রমিকরা। পরে শৈলকূপা ও ইবি থানার পুলিশের সহায়তায় বাস মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সমঝোতায় প্রায় দেড় ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী তোফাজ্জল হোসেন সবুজ বলেন, আমি তাকে সুন্দর করে বলেছিলাম যে মেয়েটাকে সিটে বসতে দেওয়ার জন্য। তখন সে বললো যে আপনারা ধরে ধরে পথ থেকে লোক ওঠাবেন, আর আমরা আপনাকে সিট ছেড়ে দেব। পরে এটা নিয়ে ফোনে আরও চারজনকে ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইটের সামনে সবাই মিলে আমাকে গরু মারার মতো মারলো। ফুটবলের মতো আমার মুখের দুই পাশে লাথি মারছেন তারা। শুরুতে দুই তিন বার রড দিয়ে যেভাবে মেরেছিল, আমি যদি হাত দিয়ে না ঠেকাতাম তাহলে মাথায় লেগে আমি সেখানেই মারা যেতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের দ্বারা এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই মানা যায় না। আমি তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি  বনি আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বাসে আমার সিটে ড্রাইভার অন্য একজনকে বসাতে চায়। এটা নিয়ে তার সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। সে আমার সঙ্গে বেয়াদবি করেছিলেন। পরে ক্যাম্পাসের সামনে পৌঁছালে এক মিনিট কথা বলার জন্য আমি ওনাকে নিচে নামতে বলি। কিন্তু তিনি নিচে নামতে রাজি না হয়ে উল্টো 'কেন নামবো, কি জন্য ' বলে চিৎকার শুরু করলে আশপাশে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। তখন সেখানে যারা ছিল তারা ওনাকে মারধর করে। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আর ওনার সঙ্গে তো আমার কোনো শত্রুতাও নেই। '

এদিকে দোষীদের অতি দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিতে সদস্য হিসেবে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবদুস সালাম।

কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার বিষয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, 'ভুক্তভোগী যারা রয়েছেন আমরা তাদের নিয়ে আলোচনায় বসেছিলাম। তাদের অভিযোগ শুনেছি। তারা মারধরকারী চার থেকে পাঁচজন ছিল বলেছেন ভুক্তভোগী। এর মধ্যে দুইজনের নাম বলেছেন। আমরা প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের অপরাধের মাত্রা নির্ধারণ করতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। '

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।