ঢাকা: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, এবারের আন্দোলন হবে চোর তাড়ানোর আন্দোলন, এবারের আন্দোলন হবে গণহত্যাকারী নৃশংস শাসকদের তাড়ানোর আন্দোলন, এবারের আন্দোলন হবে জঞ্জালমুক্ত করার আন্দোলন, এবারের আন্দোলন হবে প্রতারক-লুটেরাদের তাড়ানোর আন্দোলন।
শুক্রবার (৯ জুন) সারাদেশে ভয়াবহ বিদ্যুৎ লোডশেডিং ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় শামসুজ্জামান দুদু আরও বলেন, মানুষ এখন অতিষ্ঠ। বাজারে গেলে আগে তারা ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বাজার করে ফেলতে পারতো। এখন সারা বাজার ঘুরে ঘুরে বাজেটের মধ্যে জিনিস মেলাতে পারে না। মধ্যবিত্তদের জন্য দেশে একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আজকের বাজার পরিস্থিতি আর ১৯৭২-৭৫ এর বাজার পরিস্থিতি একই। তখনও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, এখনও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে।
তিনি বলেন, লুটপাট, সীমাহীন দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, কালোবাজারি এসব শব্দ আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন খুব শোনা যায়। দুর্ভিক্ষের কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। কারণ তার পারিবার দুর্ভিক্ষের সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭২-৭৫ সালে আওয়ামী লীগের শাসনকালেও আমরা দুর্ভিক্ষ দেখেছি। এমন কোনো জিনিস নেই, যেটা তিনশ থেকে পাঁচশ গুণ বৃদ্ধি পায়নি। এমনকি বিদেশ থেকে পণ্য আমাদানি করার মাধ্যম ডলারের দামও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশ্বের চোখে আমরা এখন অভাবপীড়িত দরিদ্র একটি জাতি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছি। এজন্য বিশ্ব আমাদের এখন এড়িয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কয়লার অভাবে আমাদের পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ১০-১৫ দিনের মধ্যে এটি সমাধান হবে। কিন্তু তার জ্বালানি উপদেষ্টা বলছেন, কমপক্ষে তিন-চার মাস লাগবে। তাহলে কে সত্য কথা বলছেন? প্রধানমন্ত্রী সব জানেন, শুধু এতটুকু জানেন না ব্যর্থ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
জ্বালানি ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে বিএনপির ধারে কাছেও আওয়ামী লীগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপির সময়ও লোডশেডিং ছিল। কিন্তু সেটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এখন প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। তারপরও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুতের অভাবে সীমাহীন পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামে কোনো কোনো জায়গায় ১২-১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। তাহলে এ সরকারের থাকার দরকার কি? তাদের তো থাকার দরকার নেই। সব ক্ষেত্রে এ সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য বিএনপি মনে করে, এ সরকারের পদত্যাগ করা দরকার।
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, যেখানে গণতন্ত্র, সেখানে আওয়ামী লীগ থাকে না। যেখানে আওয়ামী লীগ, সেখানে গণতন্ত্র থাকে না। মুখে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে ভাঙচুর, আগুন জ্বালানো, লুটপাট, গান পাউডার দিয়ে গাড়িভর্তি মানুষকে মেরে ফেলা আওয়ামী লীগের কাজ।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রচার করে, আমরা বিদ্যুতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছি৷ আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা এখন ২৪ হাজার মেগাওয়াট। আমাদের ১৩-১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ হলেই তো আর দরকার হয় না। তাহলে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) ২৪ হাজার মেগাওয়াট কেন উৎপাদনের ব্যবস্থা করলেন? যেটি প্রয়োজন নেই, সেটি কেন করলেন আপনি? লুটপাটের জন্য৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের শুধু কাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে৷ যা পরিকল্পিত না, তাৎক্ষণিক। যে কারণে এটি এখন বোঝা।
তিনি আরও বলেন, বেগম জিয়া যখন ১৬ টাকা কেজি চাল খাওয়াচ্ছিলেন, তখন আপনি (শেখ হাসিনা) ১০ টাকা চাল খাওয়নোর কথা বলে ক্ষমতায় এলেন। এখন ৮০ টাকা কেজি চাল খাওয়াচ্ছেন। তাহলে আপনি এসেছেন কেন? এ সরকারকে যদি ক্ষমতায় রাখেন তাহলে আপনাকে (জনগণ) মরতে হবে। আপনাকে নিঃশেষ হয়ে যেতে হবে। সে কারণে এ সরকারকে যে কোনোভাবে বিদায় করতে হবে।
২০২৩ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদায় নিতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। এ সরকারে সঙ্গে কোনো সংলাপ নেই। কারণ তাদের জাতি বিশ্বাস করে না।
জাতীয়তাবাদী চালক দলের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন কবিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মো. জুয়েল খন্দকারসহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২৩
এসসি/জেএইচ