ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

মাঠের আন্দোলন মাঠেই মোকাবিলায় প্রস্তুত আ. লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৩
মাঠের আন্দোলন মাঠেই মোকাবিলায় প্রস্তুত আ. লীগ

ঢাকা: সরকারের পদত্যাগ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মাঠের যে কোনো আন্দোলন মাঠেই মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলার কথা ভাবছে দলটি।

তবে রাজনীতি থেকে সরে অরাজনৈতিক পথে কেউ পা বাড়ালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা বলা হচ্ছে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের সহযোগীদের সরকারবিরোধী আন্দোলন আরও জোরালো হতে পারে, এ বিষয় বিবেচনায় নিয়েই অগ্রসর হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আন্দোলনের কর্মসূচির পাশাপাশি সরকারকে চাপে ফেলতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হতে পারে বলে, সেটাও হিসেবে রেখেছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলছে বিএনপি। জুলাই মাস থেকেই দলটি ও তাদের সহযোগীরা এই আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতির কথা বলছেন। তবে বিএনপির এই আন্দোলনের গতি প্রকৃতি কী হতে পারে, সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা সেদিকে দৃষ্টি রাখছেন। আবার দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি আন্দোলনের চেষ্টা করে কোনো সুবিধা করতে পারেনি। এই অল্প সময়ে তারা আন্দোলনে তেমন গতি আনতে পারবে না, এমন মতও রয়েছে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, তারা তো আন্দোলনেই আছে, সরকার পতনের আন্দোলনে। আন্দোলন বলতে আমরা বুঝি মিছিল, সভা, সমাবেশ, মানবন্ধন ইত্যাদি। এখন তারা যদি মনে করে সন্ত্রাস, নাশকতা, অগ্নিসংযোগের পথ বেছে নেবে ২০১৩, ১৪, ১৫ সালের মতো, আমরা সেটা মোকাবিলা করব। দেশে সরকার আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী আছে, তারা শক্ত অবস্থান নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর যথেষ্ঠ সক্ষমতা আছে। আমরা রাজনৈতিকভাবেও শৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করব। তারা যে দাবি করছে, সেটা তো তারা ২০০৯ সাল থেকেই করে আসছে। আমাদের কৌশল আগের মতোই। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো জানায়, রাজনৈতিকভাবে যেসব কর্মসূচি রয়েছে, সেই কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে গেলে আওয়ামী লীগ বা সরকার তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে না। রাজনৈতিক উপায়ে যে কোনো কর্মসূচির ব্যাপারে সরকারের আপত্তি থাকবে না। তবে অতীতের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হয় কিনা, মূলত সেদিকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে সরকার সংশ্লিষ্টরা। বিএনপি যেসব দাবি করছে, সেখানে আওয়ামী লীগ কানো ছাড় দেবে না। এই অবস্থায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও সেটা নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনড় অস্থানেই থাকবে আওয়ামী লীগ। তবে এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে। সেইসঙ্গে নির্বাচন ঠোকাতে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনের আগে ও পরে যে পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, সে বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি আগে নিজেরা ঐক্যবব্ধ হোক, নিজেদের ঘর সামলাক। দেশের মানুষ একটা উৎসবের আমেজে আছে সেখানে বিএনপি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। মানুষ তাদের রাজনৈতিক দল মনে করে না। কারণ রাজনৈতিক দল হিসেবে যে কর্তব্য সেটা বিএনপি পালন করে না। দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ, এই মুহূর্তে কোনো সংকট তৈরির চেষ্টা হলেও তারা সেটা করতে পারবে না। দেশবিরোধী কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে চাইলে সরকার কঠোরভাবেই তা দমন করবে।

এদিকে বিএনপির আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় আগে থেকেই রাজপথে রয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির সরকারবিরোধী কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগও ‘শাস্তি সমাবেশ‘ নামে কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। দলটির নেতারা বলছেন, রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার পাশাপাশি আন্দোলনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত যাতে সন্ত্রাসী পথে যেতে না পারে, সে কারণেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঠে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগের এই অবস্থান আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, এটা আগেই ঘোষণা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ওই নেতারা বলছেন, আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগও মাঠে শক্ত অবস্থান নেবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলনের কথা বলছে, সময় নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে; এর পরে, ওর পরে, এটা নতুন কিছু না। তারা অপকর্মের কারণে যেভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সেই জায়গা থেকে তারা নিস্তার পাচ্ছে না। তাই আন্দোলনের নানা কথা বলে আসছে। তাদের আন্দোলন নিয়ে আমাদের ভাবার কিছু নেই। তবে তারা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য করার চেষ্টা অতীতেও করেছে, করে যাচ্ছে। কেউ সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের পথে হাঁটার চেষ্টা করলে আমরা প্রতিহত করব, এটা আমাদের অঙ্গীকার। আমরা জনগণকে নিয়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় শক্ত অবস্থান নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।