ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) বিএনপি দমন কমিশন বলে অবহিত করেছেন বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
তিনি বলেন, দুর্নীত দমন কমিশন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে সরাসরি নিয়ন্ত্রিত।
বুধবার (২ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এ বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে ঢাকা বার ইউনিটের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
এ সময় ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আরও বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে যখন সারা দেশে লাখো-কোটি জনতা এক এবং ঐক্যবদ্ধ, আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে যখন আমরা উপনীত, ঠিক তখনই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এ মামলাটি হাজির করা হয়েছে। না হলে এ মামলা আসার কথা নয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত আইনের শাসন কায়েম হবে না। আমরা আইনজীবী সমাজ রাস্তায় নেমে এসেছি। ফ্যাসিজমের পতন ঘটিয়ে আমরা ঘরে ফিরে যাবো।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বুধবার (২ আগস্ট)। দুপুরে ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।
এদিকে, এ মামলার রায়কে ঘিরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। এ সময় তাদের পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতেও দেখা গেছে। এতে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এদিন সকাল ১০টায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। 'ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও ফরমায়েশি রায়ের বিরুদ্ধে ও বাতিলের দাবিতে' এ বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে ঢাকা বার ইউনিটের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এ সময় তাদের সরকার বিরোধী ও বিএনপির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
অন্যদিক দুপুর ১২টার দিকে আদালতের সামনে অবস্থান নেন আওয়মীপন্থী আইনজীবীরা। এ সময় তারা তারেক রহমানের ফাঁসি চাওয়াসহ বিএনপি বিরোধী ও সরকারের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
এ মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এদিন সকাল থেকেই আদালত পাড়ায় পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে। এমনকি মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ সদস্যও।
দুপুর ১২টায় আদালত পাড়া ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান ফটকসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় দ্বিগুণ পুলিশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে।
গত ২৭ জুলাই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বুধবার (২ জুলাই) এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত। ওইদিন দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ঘোষিত আয়ের বাইরে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান ও তার মা অর্থাৎ তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়।
২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপরই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জোবায়দা। ওই বছরই এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
গত বছর এ মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রুল খারিজ করেন হাইকোর্ট। এরপর গত ১৩ এপ্রিল এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত। এরপর গত ২১ মে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ওইদিন আদালতে জবানবন্দি দেন মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ জহুরুল হুদা। গত ২৪ জুলাই এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ওইদিন সর্বশেষ সাক্ষ্য দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। মামলাটিতে মোট ৫৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
এ মামলার বাইরে মানি লন্ডারিং মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছিল তারেক রহমানের। এর মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। তবে তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এবারই প্রথম কোনো মামলার রায় হতে যাচ্ছে।
২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় চিকিৎসার কথা বলে দেশ ছাড়েন তারেক রহমান। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছরে তিনি আর দেশে ফেরেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২৩
এসসি/জেএইচ