ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

আ. লীগ বন্ধু হলে কারো শত্রুর দরকার নেই: কাদের সিদ্দিকী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২৩
আ. লীগ বন্ধু হলে কারো শত্রুর দরকার নেই: কাদের সিদ্দিকী

ঢাকা: কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম) বলেছেন, আওয়ামী লীগের বন্ধু হলে কারো শত্রুর দরকার নেই, আওয়ামী লীগই যথেষ্ট। আওয়ামী লীগের শত্রু বাইরের কাউকে দরকার নেই, আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগই যথেষ্ট।

তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপিকে ছেড়ে দিলে সেও এর বাইরে যাবে না। এত নেতা, উপনেতা, পাতিনেতা নিজেরাই মারামারি করে শেষ।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার রচিত ‘স্বাধীনতা তোমাকে খুঁজছি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি ভোট চাই, দল চাই না। কোন দল নির্বাচনে এলো, কোন দল এলো না এটা আমার কাছে বিবেচ্য না। আমার কাছে বিবেচ্য ভোটে কে দাঁড়িয়েছে, ভোটার কেন্দ্রে গিয়েছে কিনা এবং সে তার ইচ্ছে মতো ভোট দিয়েছে কিনা? নাকি নৌকা মার্কা বা শিনজা মার্কা বা যে কেউ জোর করে ভোট নেওয়ার চেষ্টা করেছে, আমি এটাকে পছন্দ করি না। আমি চাই বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচন হোক।

তিনি বলেন, আমি তো চাই, নৌকা মার্কার বাইরে সব মার্কা এক হয়ে নৌকা মার্কার তলা ফাটিয়ে দিক। আমি চাই উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদের মতো একটি নির্বাচন হোক। আর যদি নৌকায় বেশি ভোট না দেয়, জোর করে ভোট নেওয়া চলবে না।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, সবার আগে দেশ, তারপর ব্যক্তি, তারপর গোষ্ঠী। দেশের পরেই দলগুলোকে মূল্য দেওয়া দরকার। এজন্য আমি নির্বাচন কমিশনকে ভালোভাবে নিতে পারিনি। নির্বাচন কমিশন তো আমার বাপ-দাদা না। নির্বাচন কমিশন তো আমার সেবক। ভোটারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়নি। আবার একটি চিঠি দিয়েছে, যদি জোট করতে হয়, তাহলে আজকের মধ্যে তার কাছে তালিকা দিতে হবে, কাকে কাকে নিয়ে জোট করবেন। কেন রে বাবা। মানুষ তোমার ভোটই করে না, আর জোট করার জন্য তোমাকে তালিকা দিতে হবে। রাজনৈতিক দল যখন খুশি জোট করবে। যে প্রতীকে খুশি নির্বাচন করবে। দেশের যেকোনো নাগরিক ভোটে দাঁড়াবেন। টিআইএন যদি না থাকে, তাহলে ভোটে দাঁড়ানো যাবে না? আমি এ দেশের নাগরিক। আমি গরিব মানুষ, গরিবের জন্য এ দেশ হয়েছে। বাহাদুরি করছেন কী কারণে? এগুলোর জন্য একদিন জবাব দিতে হবে।

বিএনপিতে কর্মী নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তৈমুর কয়েকদিন আগে আমাকে বেশ কয়েকবার বলেছেন, আমি কর্মী হতে চাই, কর্মচারী হতে চাই না। আমার কথাটি ভালো লেগেছে। বিএনপিতে কর্মচারী থাকতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক কোনো কর্মী নেই। এ উপলব্দি যদি তৈমুরের হয়ে থাকে, এটা আমি মনে করি আল্লাহর তরফ থেকে হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেকে মনে করে আমি, অনেক নীতি-আদর্শের কারণে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এসব অবান্তর। আমি কোনো কিছুর জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি, যখন চোখের সামনে দেখেছি, আমার বোন, মেয়ে, সন্তানেরা ইজ্জত হারাচ্ছে, আমি যদি একজন বোনের ইজ্জত রক্ষা করতে না পারি, মেয়ের ইজ্জত রক্ষা করতে না পারি তাহলে আমার ২৫ বছর বয়সে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। নির্দোষ মানুষকে রাস্তাঘাটে গুলি করে মারছে, যার তার বাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। যদি প্রতিবাদ করতে না পারি, তাহলে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। এ একটি আদর্শ আমাকে খুব তাড়িত করেছিল। আমি এ আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। একজন নেতাকেও আমি তখন পাইনি।

তিনি আরও বলেন, এখনও বড় কোনো পরিবর্তন আনার জন্য আমার বয়সী কোনো নেতাকে পাওয়া যাবে না। যদি যুবকরা করতে পারে, তাহলে হতে পারে। কিন্তু আপনি গণতান্ত্রিক রাজনীতি করবেন আর একটু কিছু হলেই গাড়িতে আগুন দেবেন, ঢিল ছুঁড়বেন, আপনি জিতবেন না। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে হলে, আপনার ধৈর্য থাকতে হবে। পুলিশের বাড়ি খাওয়ার হিম্মত থাকতে হবে। এই যে সেদিন ইসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে, প্রায় দুই-তিন মাস ধরে বিএনপি আন্দোলন করছে। তফসিল ঘোষণার পর তারা কী করে ছিল। তারা প্রত্যেক জেলা, উপজেলায় এক হাজার লোক নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারতো না? পুলিশ বাধা দিতো, কিছুক্ষণ থেকে তারা চলে আসতো। কিন্তু তারা তো প্রতিবাদ করতে পারতো। আমি কোথাও সেটি দেখিনি।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, তৈমুরকে আমি ভাইয়ের মতো মনে করি। তার মধ্যে স্পষ্টবাদিতা আছে, উপলব্দি বোধ আছে, উপলব্দি প্রকাশের তাগিদ আছে, আকাঙ্ক্ষা আছে। এজন্য আমি তাকে খুবই পছন্দ করি। আরও পছন্দ করি তৃণমূল বিএনপি গঠন করেছে। অনেকে মনে করছে, কোনো সম্ভাবনা নেই। আমার মনে হয় ঠিকমতো অগ্রসর হতে পারলে ভারতের বিজেপির থেকেও ভালো সম্ভাবনা হতে পারে।

তিনি বলেন, সেদিনও শুনেছি তৈমুররা নাকি নির্বাচন করবে। আমিও তো নির্বাচন করতে পারবো। আমার গামছা নিয়ে আগে থেকে যদি আমি প্রস্তুত হতাম তাহলে তিনশ সিটেই নোমিনেশন দিতাম। হয়তো তিনশটি দিতে পারবো না, আড়াইশটি তো দিতে পারবো। আড়াইশ না পারি, দুইশ পারবো। যদি এমন হয়, তৃণমূল বিএনপির দুই-চারজন যদি আমার সঙ্গে আসে বা আমার লোক যদি যায় আমি সেটাও মেনে নেবো।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভোট ও ভাতের অধিকারের পাশাপাশি সম্পদের সুষম বণ্টন। মৌলিক অধিকার মানে মানবিক অধিকার, সেটি কী দেশের আপামর জনগণ ভোগ করছে? নাকি একটি শ্রেণি বা গোষ্ঠী বা একটি কোটাভুক্ত সমাজ সেটি ভোগ করছে?

তিনি বলেন, আজকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি উঠেছে। আমি মনে করি, আমাদের দাবি হওয়া উচিত, সংসদ হতে হবে অংশগ্রহণমূলক সংসদ। আপনি সংসদের দিকে তাকিয়ে দেখেন, দেশের সম্পদ যারা লুটে খাচ্ছে, মানি লন্ডারিং করে যারা বিদেশে টাকা পাঠাচ্ছে, বেগম পাড়ায় যাদের বাড়ি-ঘর আছে, যারা বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে, সংসদের দখল তাদের হাতে।

তৃণমূল বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ড. মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও কে এম আবু হানিফ হৃদয়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ড. মো. সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২৩
এসসি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।