ঢাকা: দেশের রাজনীতিতে গৃহপালিত বিরোধী দলের জন্ম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত ভোট বর্জনের গণসংযোগপূর্ব সমাবেশে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) উদ্দেশ্য করে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নির্বাচনে কাকে বিরোধী দলের নেতা ঘোষণা করা হবে, সেটাও জনগণ জানে উল্লেখ করে সাইফুল হক বলেন, গতকাল জি এম কাদের রংপুরে বক্তৃতায় বলেছেন, আমরা একটি দল হিসেবে গড়ে উঠার চেষ্টা করছি৷ সরকারের সঙ্গে কিছু কিছু বোঝাপড়া হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেক আসনে আমরা নির্বাচন করছি। যে বিরোধী দল সরকারি দলের প্রতীক নৌকা নিয়ে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেন দরবার করে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেন দরবার করে ২৫-২৬ আসনে নির্বাচন করছে, এদের কি বিরোধী দল বলা যাবে? এদের মানুষ বলে গৃহপালিত বিরোধী দল। রাজনীতির মধ্যে এমন গৃহপালিত বিরোধী দলের জন্ম হয়েছে।
জাতীয় পার্টিকে (জাপা) উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, যে বিরোধী দল ৩০ বছরে স্বাবালক হতে পারেনি, যারা এখনও প্রাপ্তবয়স্ক হতে পারেনি, যাদের বাচ্চাদের মতো ফিডার খাইয়ে বিরোধী দল বানাতে হয়, এরা কি কোনো বিরোধী দল? এটা কোনো বিরোধী দল না। ৩০ বছরে ফিডার দিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন দলগুলো যাতের বিরোধী দল বানাতে পারেননি, যাদের স্বাবালক করতে পারেননি, আগামী ৩০ বছরেও তাদের স্বাবালক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তার মানে সরকার এমন একটি নির্বাচন করছে, যে নির্বাচনে তারা আগে থেকে ঠিক করে ফেলেছে বিরোধী শিবিরে কারা বসবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি সরকার একটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। আপনারা (নেতাকর্মী) কি মনে করে ৭ তারিখে দেশে কোনো নির্বাচন হচ্ছে? দেশের মানুষ কি মনে করে ৭ তারিখে নির্বাচন হবে? কেউ এটা মনে করে না। কারণ, সরকার যদি ৭ তারিখ পর্যন্ত থাকতে পারে, ওইদিন বিকেল বা সন্ধ্যায় তারা কি নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করবেন সেটা দেশের মানুষ জানে। মানুষ এরই মধ্যে এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। এই নির্বাচন বর্জন করেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নৌকার প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ডামি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। আর সরকার এর দায় বিরোধী দলের ওপর চাপাচ্ছে। এ সরকার বিরোধী দলকে জব্দ করার জন্য, তাদের সন্ত্রাসী নাম দেওয়ার জন্য দেশব্যাপী পরিকল্পিত সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছে। এর জন্য বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে ঢুকিয়ে ফরমায়েশি রায় দিয়ে দিচ্ছে। আর নিজেদের মধ্যে মারামারি, খুনোখুনি করে দেশব্যাপী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
সরকার ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, তারা আজকে সব বিরোধী দলকে বাইরে রেখে এমন একটি নির্বাচনী মাঠে প্রতিযোগিতা করছে, যেই মাঠে কোনো প্রতিযোগী নেই। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে আওয়ামী লীগ আজকে আর কোনো গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দল নেই। আওয়ামী লীগ পুরোপুরি একটি সন্ত্রাসী, ফ্যাসিবাদী দলে পরিণত হয়েছে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩
এসসি/জেএইচ