টাঙ্গাইল: ছোটভাই ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের মধ্যস্থতায় টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর অবরোধ সমাধান হয়েছে। তিনি তার চার কর্মীকে মুক্ত করেছেন।
তবে, এজাহারে নাম থাকায় লতিফের দুই কর্মীকে আদালতে পাঠানো হয়। যে কারণে তাদের মুক্ত করতে পারেননি কালিহাতীর নয়া এমপি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দুপুর ১টায় অবরোধ শুরুর তিন ঘণ্টা পর সেটি সমাধান হয়ে যায়। পরে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কালিহাতী থানার সামনের রাস্তা থেকে সরে যান আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।
তার ছয় কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছিল কালিহাতী থানা পুলিশ। ছাড় পাওয়ারা হলেন- উপজেলার বাংড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হামমত আলী, পিন্টু, হৃদয় ও খোকা। অন্য দুজন হচ্ছেন- মনির সওদাগর ও লাট মিয়া। তাদের নাম মামলার এজাহারে থাকায় আদালতে পাঠায় পুলিশ।
লতিফ ও কাদের সিদ্দিকীর নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জানা গেছে, দুপুর ১টায় সড়ক অবরোধ শুরু হলে দুপুর ২টায় সেখানে ছুটে আসেন বঙ্গবীর। পরে তিনি কালিহাতী থানায় ঢোকেন। দুপুর ২টা থেকে তিনি পুলিশের সঙ্গে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেন। বিকেল ৩টায় থানা থেকে বড় ভাইয়ের চার কর্মীকে নিয়ে বের হন তিনি। অন্য দুজনকে তাৎক্ষণিক আদালতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
থানা থেকে বের হয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে উত্তেজনা কাম্য নয়। এখানে উভয়পক্ষের ভুল বোঝাবুঝি ছিল। পুলিশ চারজনকে ছেড়ে দিয়েছে ও মামলার এজাহারভুক্ত দুজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক জানান, বাদীর লিখিত অভিযোগ ছিল। বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কতিপয় লোক ভাঙচুর করে। এ কারণে তিনি মামলা নেন। আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিধি মোতাবেক আদালতে পাঠানো হয়েছে।
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের নির্বাচনী সহিংসতার মামলায় লতিফের কর্মী-সমর্থকদের গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে তিনি টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কের কালিহাতী থানার সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন লতিফ সিদ্দিকী। পরে বড় ভাইয়ের অবরোধের খবর পেয়ে কালিহাতী ছুটে আসেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম।
বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত তার অবরোধের কারণে সড়কের দুই পাশে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো যাত্রী।
মামলার কারণ হিসেবে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন সোমবার (৮ জানুয়ারি) কালিহাতীর নাগবাড়ীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুমের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। আব্দুল কাইয়ুম আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোজাহারুল ইসলাম তালুকদারের অনুসারী। এ ঘটনায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত কয়েক ব্যক্তিকে আসামি করে কালিহাতী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলার পর কালিহাতী থানা পুলিশ এজাহারভুক্ত মনির সওদাগর ও লাট মিয়া নামে দুই যুবকসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই লতিফ সিদ্দিকীর অনুসারী এবং তার পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে লতিফ সিদ্দিকীর অনুসারী সাবেক চেয়ারম্যান হাসমত আলী ও মোশারফ হোসেন সিদ্দিকী থানায় যান মনির ও লাটের খোঁজ নিতে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে তাদের আটক করে পুলিশ।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সদ্য নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফ সিদ্দিকী ও তার অপর ছোট ভাই আজাদ সিদ্দিকী নিজেদের শত শত নেতাকর্মী নিয়ে থানার সামনে অবস্থান নেন। তারা তারা গ্রেপ্তারকৃতদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় বসে পড়েন।
এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগের মনোনীত পরাজিত প্রার্থী মোজাহারুল ইসলাম তালুকদারও তার নেতাকর্মীদের নিয়ে থানার দিকে আসতে থাকেন। সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ দুই পক্ষের মধ্যে অবস্থান নিয়ে তাদের অন্যত্র সরিয়ে দেয়।
বিষয়টি নিয়ে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সারের সঙ্গে কথা হলে তিনি তখন বলেন, হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। পুলিশ কর্মকর্তারা অবরোধ তুলে নিতে লতিফ সিদ্দিকীসহ সবাইকে অনুরোধ করেছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২৪
এসআরএস/এমজে