ফেনী: এখন আন্দোলনের মাধ্যমে নয়, আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।
তিনি বলেন, পরাজিত শক্তি দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে করে আবার পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফেনীর মিজান ময়দানে হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত শানে রেসালত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মামুনুল হক বলেন, বর্তমান সময়ে বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়ার একটি আওয়াজ উঠেছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষ বৈষম্যহীন সমাজ চায়। সুন্দর ও একটি আলোকিত সমাজ গড়তে হলে আল্লাহর প্রজ্বলিত আলো প্রয়োজন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা করে শতশত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। যা আইয়ামে জাহেলিয়াতের সময়েও ছিল না। এখন মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাসূল (সা.) শিক্ষা দেওয়া নীতির অনুসরণ করতে হবে। সবাই মিলে বর্তমান সমাজকে ভেঙে নতুন একটি সমাজ গড়তে চাই।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার ষড়যন্ত্র করেছে উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপরই নির্ভর করছে একটি জাতির ভবিষ্যৎ। নরেন্দ্র মোদির দাসী সরকার শেখ হাসিনা এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় হিন্দুত্ববাদ ঢুকিয়ে ইসলামকে মুছে দিতে চেয়েছিল। আমরা কথা বললে আওয়ামী জাহেলিয়াতের সরকার সব সময় রুখে দিয়েছে। মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে মসজিদের নগরী ঢাকাকে তারা মন্দিরের শহরে রূপান্তর করার পাঁয়তারা করেছিল।
তিনি আরও বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করব। কারণ এ সরকার ব্যর্থ হলে ফ্যাসিবাদ আবার নতুন করে আবির্ভাব হবে। আর সফল হলে ফ্যাসিবাদ এ দেশ থেকে চিরতরে বিদায় নেবে। কিন্তু এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কেউ যদি শিক্ষা ব্যবস্থায় নাস্তিক্যবাদ ঢুকানোর চেষ্টা করে, তখন আমরা ঘরে বসে থাকব না। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কোনো ছলচাতুরী এ দেশের মুসলমান মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা মূর্তি, ভাস্কর্য, বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে আমার সঙ্গে যা করেছে তা সবাই দেখেছেন। ভারত সরকার সেবাদাসী শেখ হাসিনাকে আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল। মূর্তির বিরুদ্ধে কথা বলাতে শেখ হাসিনা নমরুদের মতো আচরণ করেছে। কিন্তু আমরা একত্ববাদের ওপর অটল ছিলাম। আলেম সমাজকে জেলে বন্দি, হত্যা করেও তারা ন্যায়ের পথ থেকে সরাতে পারেনি।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, হিন্দু বা অন্য ধর্মের সবাই যার যার ধর্ম সে পালন করবে। সুশৃঙ্খলভাবে তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। প্রয়োজনে আলেম-ওলামা ও হেফাজতে ইসলাম এতে সহযোগিতা করবে। হিন্দুদের মূর্তি আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। আমাদের আলোচনায় ছিল ব্যক্তির মূর্তি স্থাপনের বিষয়ে।
মামুনুল হক বলেন, এ দেশে কাদিয়ানীদের নিষিদ্ধ করতে হবে। তারা সংখ্যালঘুর মতো নিরাপত্তা নিয়ে বসবাস করুক তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু দেশের মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে অপতৎপরতা চালাতে দেওয়া হবে না। তাদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। আল্লাহর নবীকে নিয়ে যদি কেউ কটূক্তি করে বা গালি দেয় তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান মৃত্যুদণ্ডের আইন প্রণয়ন করতে হবে। এটি বাস্তবায়নের জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তা করব।
হেফাজতে ইসলাম ফেনী জেলার সভাপতি মাওলানা আফজালুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ওমর ফারুকের পরিচালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের আমির মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আবদুল হামীদ, মহাসচিব সাজিদুর রহমান, নায়েবে আমির মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার, সিনিয়র নায়েবে আমির খলীল আহমাদ কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা নূর হোসেন নূরানী।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম ফেনী জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ ।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৪
এসএইচডি/আরআইএস