চট্টগ্রাম: জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, দেশের মানুষ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আগে গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগের বিচার চায়। এজন্য সংস্কার করতে সরকারকে যৌক্তিক, প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে।
শনিবার (১২ এপ্রিল) চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত বিশাল কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।
তিনি আরও বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মধ্যে এক প্রবল দেশপ্রেম দেখতে পাচ্ছি। আমরা মনে করি, তিনি বাংলাদেশে একটি ভালো নতুন ব্যবস্থাপনার দিকে নিয়ে যেতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের মানুষও তাই মনে করে। আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের জঞ্জাল ছয় মাসে খোলা কখনো সম্ভব নয়। তাই সংস্কারের জন্য এই সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সারাক্ষণ উন্নয়ন উন্নয়ন করতো। কিন্তু এখন কেউ কেউ নির্বাচন নির্বাচন করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় বিভক্তির রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। যদি শর্ত বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। বাংলাদেশকে আগামী দিনে নতুন রূপে এগিয়ে নিতে হলে, পুরোনো রূপে কোন স্বৈরাচার যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে তার পথ চিরতরে বন্ধ করতে হবে।
মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শুধু ক্ষমতার পালা বদল চায় না। একটি মৌলিক পরিবর্তনের মাধ্যমে যে বাংলাদেশকে তছনছ করা হয়েছে, সেই সম্ভাবনার বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য নতুন প্রজন্ম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধান বক্তা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগর আমীর শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ২০ বছর বাংলাদেশের মানুষ কথা বলতে পারেননি। কথা বললেই নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। বাংলাদেশ শেখ মুজিব স্বাধীনতা আনেনি, স্বাধীনতা এনেছে বাংলাদেশের মানুষ। শেখ মুজিব তখন পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা হয়েছে কিন্তু ২০২৪ সালে এসে আমরা স্বাধীনতার পূর্ণতা পেয়েছি। শেখ মুজিব যে সংবিধান রচনা করেছেন সেটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য ছিল না।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে জামায়াতে ইসলামীর ওপর, ইসলামের ওপর। শেখ হাসিনা বলেন, আমি কী অপরাধ করেছি? আমি বলতে চাই, শেখ হাসিনা, আপনি বিডির হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে, আলেম হত্যা করে, আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে হত্যা করে অপরাধ করেছেন। দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছেন। দেশের ৮টি ব্যাংক বন্ধের পথে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না। রাজনীতির যে নীতি, দুর্নীতি, ঘুম, খুন ও হত্যার মাধ্যমে তা আওয়ামী লীগ হারিয়েছে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াত আমির ও সন্দ্বীপ থেকে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আলাউদ্দিন সিকদার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অবিলম্বে ভাসানচরসহ সন্দ্বীপের ৬০ মৌজা সন্দ্বীপকে বুঝিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় সন্দ্বীপের চার লক্ষ জনগণকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, টেন্ডার দখলবাজি, চাঁদাবাজি সন্দ্বীপ থেকে সমূলে বিতাড়িত করা হবে। সন্দ্বীপকে একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ এলাকা উপহার দেওয়া হবে। যেখানে থাকবে না খুনাখুনি, রাহাজানি। মানুষ ঘরের দরজা খুলে ঘুমাতে পারবে।
সন্দ্বীপ উপজেলা আমীর মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ফিরোজের সভাপতিত্বে ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আবু তাহেরের সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সাবেক আমির অধ্যাপক নুরুল আমিন চৌধুরী, উত্তর জেলা সেক্রেটারী আবদুল জব্বার, শিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইব্রাহিম রনি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সভাপতি মো. ইব্রাহিম চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৫
বিই/টিসি/এমজে