ঢাকা, রবিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

নির্বাচনী সংস্কারের পর ইসিকে দল নিবন্ধনের জন্য বললো এনসিপি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
নির্বাচনী সংস্কারের পর ইসিকে দল নিবন্ধনের জন্য বললো এনসিপি

ঢাকা: নির্বাচনী সংস্কারের আলোকে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে দাবি জানিয়েছে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বে ছাত্রদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দলটির একটি প্রতিনিধি দল ইসি সচিবের দপ্তরের এ সংক্রান্ত চিঠি জমা দিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের একান্ত সচিব আশ্রাফুল আলম। তিনি বলেন, তারা নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়ার জন্য ৯০দিন সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে।

ইসি সচিবকে ‘নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন’ শীর্ষক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন সংক্রান্ত বর্তমান প্রচলিত আইনের মধ্যে থেকেই বিগত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ভোটবিহীন সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা, জাল ভোট, রাতের ভোটসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করেছে। একইভাবে শেখ হাসিনা ও তার দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক ওই কমিশন সারাদেশে দলীয় প্রতীকে বিতর্কিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও অয়োজন করেছিল।

বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস এবং ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে, দেশের ছাত্র-জনতা বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট' ২৪ গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় গণমানুষের প্রত্যাশার আলোকে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গণঅভ্যূত্থানের পর ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম শুরু করে। তারমধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয় এবং ওই কমিশন একটি প্রতিবেদনসহ তাদের সুপারিশ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রদান করলেও এ পর্যন্ত মৌলিক সংস্কার কার্যক্রমের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। নির্বাচন কমিশনের মৌলিক সংস্কার এবং বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী না করেই বর্তমান নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য গত ১০ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সংস্কারের আগে তড়িৎ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমন্ডলে সমালোচনার জন্ম দেয়।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে,  ২০০৮ সালের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ও প্রাসঙ্গিক আইনের অধীনে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন শর্তাবলি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক। আগের স্বৈরাচারী সরকারের আমলে তৈরি এ বিধিগুলো রাজনৈতিক বহুত্ববাদকে সংকুচিত এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য প্রণীত। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নিজেই জেলা পর্যায় ১০ শতাংশ এবং উপজেলা পর্যায়ে ৫ শতাংশ কার্যালয় স্থাপনের শর্ত সহজীকরণের পাশাপাশি প্রতি পাঁচ বছরে নিবন্ধিত দলের নিবন্ধন নবায়নের বাধ্যবাধকতার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের বর্তমান কাঠামো এবং ব্যক্তিবর্গের নিয়োগ বিতর্কিত ২০২২ সালের আইন অনুসারে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।

এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব ও নিরপেক্ষতা রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে, যা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করছে। সুতরাং বর্তমানের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন বা সংশোধন পূর্বক নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হওয়া দরকার। তাই মৌলিক সংস্কারের আলোকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, বিদ্যমান নিবন্ধিত দলের নিবন্ধন হালনাগাদ করাও আবশ্যক।

এ অবস্থায়, অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত মৌলিক সংস্কার সাধন এবং নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময়সীমা অন্যূন ৯০ দিন বর্ধিত করণের জন্য অনুরোধও করা হয়েছে চিঠিতে।

ইসির গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগামী রোববার (২০ এপ্রিল) নতুন দলগুলোর নিবন্ধন আবেদন করার শেষ সময়। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, এখন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
ইইউডি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।